আজ বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নেতৃত্বের ব্যর্থতায় নৌকার বিপর্যয়

বিষাদসিন্ধু :

একটানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এই তিন মেয়াদেই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। এর ফলে এখানকার আওয়ামী লীগ পড়েছে অস্তিত্ব সঙ্কটে। সদ্য শেষ হওয়া ইউনিয়ন পরিষদেরই যার বড় প্রমাণ মিলেছে এই আসনের অন্তর্ভূক্ত সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে। এখানে সাতজন নৌকার প্রার্থী থাকলেও জয় পেয়েছেন মাত্র দুজন। বাকি পাঁচজনকেই পরাজয় বরণ করতে হয়েছে লাঙ্গল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে।
বোদ্ধা মহলের মতে, ইউনিয়ন পরিষদের ওই ফলাফলই আভাস দিচ্ছে সদর-বন্দর নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দুর্গতির কথা। এই ফলাফলের মধ্য দিয়েই বুঝা যাচ্ছে, এখানে ক্ষমতাসীন এই দলটি নিভু নিভু অবস্থায় রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে চরম দুর্যোগে পড়বে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা এই দলটি।

আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা বলছেন, যেভাবে এখানে লাঙ্গল চোখ রাঙাচ্ছে নৌকাকে, এ ধারা চলতে থাকলে মনের দিনগুলোতে এখানকার আওয়ামী লীগ কিতাবসর্বস্ব হয়ে পড়বে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে, এবং আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে হলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী নির্ধারণ করার বিকল্প আর কিছু নেই। একই সাথে এখানকার আওয়ামী লীগের ওপর একটি নির্দিষ্ট পরিবার এককভাবে যে প্রভাব বিস্তার করে আছে, তার থেকেও দলকে বাইরে বের করে আনতে হবে। অন্যথায় সামনে আওয়ামী লীগকে আরও বড় রকমের বিপর্যয় মেনে নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

সূত্র মতে, দীর্ঘ এক যুগ ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের অবস্থা অনেকটা লেজে গোবরে। আওয়ামী লীগ রাস্ট্র ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এখানকার আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় একটি পরিবারের হাতে। পরিবারটি যা নির্ধারণ করে দিচ্ছে অন্যরা অনিচ্ছা স্বত্বেও তা মাথা পেতে মেনে নিচ্ছে, বাধ্য হচ্ছে। এতে করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া এই দলটি ক্রমান্বয়ে এখানে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে না নতুন নেতা, নেতৃত্ব। কেননা, ওই পরিবারের বাইরে গিয়ে কেউ নেতৃত্ব দিতে চাইলে বা আসতে চাইলে তাকেই বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে তাকে। যার কারণে নতুন করে কেউ ঝামেলায় জড়াতে চায় না। আবার যারা ওই পরিবারের বাইরে গিয়ে রাজনীতি করেন তারাও আওয়ামী লীগকে সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, পেশি শক্তির কাছে মুখ থুবড়ে পড়ে তাদের এই রাজনীতি।

সূত্র আরও জানায়, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বন্দর ও সদরের ১১টি ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার প্রার্থী থাকলেও যা হয়েছে তা ওই পরিবারের নির্দেশক্রমেই হয়েছে। এর নির্দেশনার বাইরে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা সভাপতি ও সেক্রেটারিও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। যার ফলে নৌকার পক্ষে শক্ত কোনো অবস্থান নিতে পারেনি এখানকার আওয়ামী লীগ। এবং কাঙ্খিত ফলাফলও আসেনি নৌকার পক্ষে। আপাত দৃষ্টিতে এই দায়ভার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এবং আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলের ওপরই বর্তায়। এমনকী নৌকার এমন বিপর্যয়ের দায়ভার সাংসদ শামীম ওসমানও এড়াতে পারেন না বলেও মনে করা হচ্ছে। যদিও তার নির্বাচনী এলাকায় চারজন নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু এই চারজনকেই ভোটের লড়াইয়ে নামতে হয়নি বলে নির্বাচনী এই বৈতরণী তারা পেরুতে পেরেছেন। অন্যথায় হিসেবটা হয়তো অন্য রকমও হতে পারতো।

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, যাদের হাতে বর্তমানে নেতৃত্ব রয়েছে তাদের ব্যর্থতার কারণেই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের ৭টি ইউনিয়নের পাঁচটিতে নৌকার বিপর্যয় হয়েছে। তাদের ব্যর্থ নেতৃত্বের কারণেই এখানকার আওয়ামী লীগ বিপর্যস্ত। কেননা, তারা প্রার্থী নির্ধারণী সভা করেনি। কমিটির অন্যান্যদের মতের কোনো তোয়াক্কা করেনি। একটি পরিবারের আজ্ঞাবহ হয়েই যাকে খুশি, তাকেই নৌকার প্রার্থী দেখিয়ে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠিয়েছে।

তারা আরও অভিযোগ করেন, প্রার্থীতা ঘোষণার পরও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে সবাইকে একজোট করে মাঠে নামাতে পারেননি। এমনকী তারাও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষে জোড়ালোভাবে মাঠে নামেননি। যার কারণে এই বিপর্যয়।

তারা বলেন, এই নেতৃত্বের পরিবর্তন না হলে পরিবারের তালু থেকে আওয়ামী লীগ বেরুতে পারবে না। এতে করে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল হবে না। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে গতিশীল করতে এবং আগামীতে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে হলে এই নেতৃত্ব পরিবর্তন অবধারিত বলেই মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতাকর্মীরা।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ