আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

না.গঞ্জে কুকুরের গ্যাং

নিজস্ব প্রতিবেদক

শহরের অন্যতম নাগরিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে কুকুরের উৎপাত। রাত গভীর হতেই দলে দলে রাস্তায় নেমে আসে কুকুর। প্রায়শই কুকুরের ধাওয়া খেয়ে বিপত্তির মুখে পড়তে হয় মানুষকে। কুকুর থেকে নিস্তার পেতে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা প্রয়োগ করলেও বংশ বিস্তার থেকে রেহাই মিলছে না। আর নারায়ণগঞ্জে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত মানুষের চেয়ে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয় কম। ফলে বেশী দামে বাইরে থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হয়।
জানা গেছে, ২০১২ সালে উচ্চ আদালত কুকুর নিধনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারনে বর্তমানে বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের কাজ বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুকুর মারা বন্ধ রেখে টিকাদান কর্মসূচি ও বন্ধ্যাত্বকরণ কার্যক্রম করা হচ্ছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নগরীর বিভিন্ন এলাকার কুকুর নিধনের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। সেই থেকে অদ্যবধি নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন অলি গলিতে বেওয়ারিশ কুকুর উপক্রম বেড়েই চলছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর প্রত্যেক এলাকার অলিগলিতে দশের অধিক কুকুর একাট্টা হয়ে পুরো এলাকায় ঘুরে। কর্মস্থল হতে বাড়ী ফেরা মানুষগুলো কে দেখা মাত্র কুকুরের দল ছুটে আসে। ভয় পেয়ে কেউ যদি দৌড় দেয় তখন কুকুরগুলো তাকে ধাওয়া করে। এছাড়া রাতের ঘুমকেও হারাম করে দিচ্ছে বেওয়ারিশ কুকুরগুলো। রাত বাড়ার সাথে সাথে কুকুরের চেচামেচি ঘুম থেকে উঠে ভয়ে কান্না করতে থাকে শিশুরা।
প্রতিদিন রাত ১২ টার দিকে বাড়ি ফিরেন ইসদাইরের আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, আগে হেটে বাড়ি ফিরতাম। এখন কুকুরের ভয়ে রিকশায় চড়ে যেতে হয়। তাতেও ভয়ে থাকি। কুকুরগুলো হাতে কোন প্যাকেট দেখলে রিকশার পেছনে ছুটতে শুরু করে। কখনও কখনও হামলে পড়ে।
জামতলা এলাকার এক চায়ের দোকানদার জানালেন, রাতে কুকুরগুলো যাত্রিবাহী রিকশার দিকে নজর রাখে। কারও হাতে প্যাকেট দেখলেই মনে করে খাবার। চেষ্টা করে তা ছিনিয়ে নিতে। অনেক সময় লাফ দিয়ে রিকশাযাত্রিকে কামড়ে দেয়।
বন্দরের শ্রমিক সরদার মীর আব্দুল হালিম জানান, রাতে কুকুরগুলো একসঙ্গে জোট হয়ে চলাফেরা করে। এক এলাকার কুকুর অন্য এলাকায় গেলে ওই এলাকার কুকুরের দল তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া খাওয়া কুকুর আবার দল ভারী করে পাল্টা ধাওয়া দেয়। তিনি হাসতে হাসতে বলেন, মনে হয় কুকুরেরও গ্যাং আছে।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন ১১ হাজার ৬শ’ ৯৪ জন রোগী । ২০১৯ সালে আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত্র হয়েছেন কুকুরের কামড়ে। আরও জানা গেছে, কুকুর নিধন বন্ধ হওয়ায় ২০১৮ ও ২০১৯ সালের জুলাই মাসে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টিকাদান কর্মসূচী পালন করা হয়। ২০২০ সালেও এই কর্মসূচী পালান করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আসাদুজ্জামান জানিয়ে ছিলেন, কুকুরে কামড়ে আক্রান্তদের রোগীদের ভ্যাকসিন যে পরিমান সরবরাহ করে তার চেয়ে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশী। তাই যখন ভ্যাকসিন না থাকে তখন রোগীদের বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়।
কুকুরের বিষয়ে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. নারায়ণ চন্দ্র সরকার বলে ছিলেন, বংশ বিস্তার নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রাণি সম্পদ বিভাগের নিজস্ব কোন কর্মসূচী নেই। তবে বেসরকারি এনজিওর মাধ্যমে কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ