আজ বৃহস্পতিবার, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

না’গঞ্জে মহাজোটে মহাজট স্বস্তিতে ২০ দলীয় জোট!

না’গঞ্জে মহাজোটে মহাজট

না’গঞ্জে মহাজোটে মহাজট

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ৫ টি আসন নিয়ে  মহাজোটের অন্যতম দুই শরীকের মধ্যে তীব্র কোন্দল শুরু হয়েছে প্রকাশ্যেই। গত দুইবার জোটগত নির্বাচনের হিসাব নিকাশে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টিকে দুইটি আসন ছেড়ে দেয়া হয়। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সুস্পষ্ট ঘোষনা কোন অবস্থায়ই এবার জাতীয় পার্টি বা অন্য কোন দলকে এবার আসন ছাড় দেয়া হবে না। আর এ নিয়ে মহাজোটের রাজনীতিতে মহাজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচটি আসনে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিশ দলীয় জোট।

কারন জোটের মধ্যে একমাত্র বিএনপি ছাড়া অন্য কোন দলের প্রার্থীতা নেই এখানে। কিন্তু জেলার ৫টি আসনেই রয়েছে মহাজোটের প্রধান শরীক দল আওয়ামীলীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। একইসাথে নারায়ণগঞ্জ-৩ ও ৫ এই দুটি আসনে রয়েছে মহাজোটের অন্যতম শরীক দল জাতীয় পার্টির ৩জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। আর তাই মনোনয়ন যুদ্ধে মহাজোটে ত্রিমুখী লড়াই শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে, জোটগত ভাবে একাধিক প্রার্থী না থাকলেও জেলার সবকটি আসনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে বিএনপিতেও। একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও যতটা কোন্দল ও সমস্যঅ মোকাবেলা করছে ক্ষমতাসীন মহাজোট তারচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বিএনপি।

মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা অনেকেই একে অপরের চিরশত্রুতে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলীয় কোন্দল-গ্রুপিং, একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাড়াও ২টি আসনে মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির দুই জন সংসদ সদস্য রয়েছে এ জেলায়। আর গেল প্রায় এক বছর যাবৎ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের বিভিন্ন সভা সমাবেশে আওয়ামীলীগ নেতারা জাতীয় পার্টি প্রশ্নে কড়া বক্তব্য রাখছেন। একপ্রকার যুদ্ধাংদেহী মনোভাব নিয়ে তারা বলছেন, জেলার কোন একটি আসন তারা ছাড়তে নারাজ। আর এবিষয়ে তারা কেন্দ্রকে অবগত করে রেখেছেন। আর এনিয়েই তৈরি হয়েছে মহাজোটে মহাজট। আর সহসাই এ জট থেকে মহাজোট বের হতে পারবে কিনা তা সময়ই বলে দিবে।

আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের দাবি, জেলায় জাতীয় পার্টির তেমন কোন ভোট ব্যাংক নেই। এ কারণেই আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে কোনরকম ছাড় না দিয়ে জেলার সবগুলো আসনেই নিজ দলীয় প্রার্থী চায় তারা। তাদের মতে আওয়ামীলীগের জন্মসহ বিভিন্ন কারণে নারায়ণগঞ্জ হচ্ছে আওয়ামীলীগের দূর্গ। সবকিছু মিলিয়ে এ জেলায় মহাজোটে ত্রিমুখী লড়াই শুরু হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। অপরদিকে দলীয় কোন্দল-গ্রুপিং থাকলেও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরীক জামায়াতে ইসলাম রাজনৈতিক ভাবে অনেকটা কোনঠাসা এবং এ জেলায় জামাতের তেমন কোন ভোট ব্যাংক না থাকায় মহাজোটের তুলনায় স্বস্বিতে রয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট।

রূপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ গাজী গোলাম দস্তগীর পরপর দুইবার আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়েছেন। এ আসনে এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কোন মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে না ।

এদিকে আড়াইহাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে। এখানে আছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা লোটন। আসনটির বর্তমান সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু একসময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ২টি নির্বাচনে তিনিও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার তার সাথে মনোনয়ন যুদ্ধে নেমে পড়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও জেলা আওয়ামীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজ। দুজনেই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও দু’জনের মধ্যে সাপ-বেজীর সর্ম্পক বলে জানা যায়।

সম্প্রতি পর পর কয়েকবার দু’জনের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলেও জানা গেছে। স্থানীয় রাজনীতিবীদদের মতে, এদের দুইজনের মধ্যে যে মনোনয়ন পাবে তাকে হারানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবেন মনোনয়ন বঞ্চিত অপরজন। এখানে আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে হারাতে বিএনপির প্রার্থীকে খুব একটা কষ্ট করতে হবে না বলেও মনে করেন তারা। কেননা আওয়ামীলীগের এক গ্রুপই অপর গ্রুপকে হারাতে মরিয়া হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তারা।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন সোনারগাঁ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনের বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা। আসনটিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কন্যা পরিচয়দানকারী ও মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনন্যা হুসেইন মৌসুমী এবং বর্তমান সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা এ দুজন সহ আওয়ামীলীগের তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে। এরা হলেন এ আসনের সাবেক সাংসদ কায়সার হাসনাত, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। এমনিতেই জাতীয় পার্টির ২জন মনোনয়ণ প্রত্যাশী তার উপর আওয়ামীলীগের তিনজন। এরা তিনজন আবার একে অপরের ঘোরতর বিরোধী হওয়ার পাশাপাশি পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ করে বলে জানা যায়। আগের দুটি আসনে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার আশংকা না থাকলে এখানে মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে জানা যায়।

সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটিতেও এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থীর নাম শোনা যায় নি। তবে এখানে আওয়ামীলীগের একাধিক প্রভাবশালী মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে বলে জানা যায়। এখানে বর্তমান সাংসদ আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা একেএম শামীম ওসমানসহ জাতীয় শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক, স্থানীয় রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী শ্রমিকনেতা কাউসার আহম্মেদ পলাশ এবং আওয়ামীলীগের অর্থ বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য কামাল মৃধার নাম শোনা যাচ্ছে। শামীম ওসমান এবং কাউসার আহম্মেদ পলাশ দু’জনই সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী হওয়ায় দলীয় প্রার্থী হওয়ার শক্ত দাবিদার বলে মনে করছে দলটির নেতাকর্মীরা।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি বর্তমানে জাতীয় পার্টির দখলে। এই আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর ওসমান পরিবারের সদস্য হিসাবে মহাজোটের সমর্থন পান সেলিম ওসমান। তবে বর্তমানে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। অন্য কোন বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ একমত না হলেও এই আসনটিতে আওয়ামীলীগের নিজস্ব প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রায় সকল নেতৃবৃন্দ এবং কর্মী সমর্থকরা। এই আসনের পাইকপাড়ায় আওয়ামীলীগের জন্মস্থান হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির নিজস্ব কোন ভোট ব্যাংক না থাকায় এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ।

আর তাই এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী তালিকা বেশ দীর্ঘ। এই তালিকায় রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আরজু ভুইয়া, আরেক সহ-সভাপতি আব্দুল কাদির, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোঃ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক খোকন সাহা, কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সূফিয়ান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত। আওয়ামীলীগের একটি সুত্র জানিয়েছে, এ আসনটির বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমানের ওপর আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অনেকটাই নাখোশ। আবার এমপি সেলিম ওসমানের ভাবি ও প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভিন ওসমান ও তার ছেলে আজমেরি ওসমান এ আসনে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন এবার।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনে মহাজোটের পক্ষ থেকে কে মনোনয়ন পায় তা নিয়ে চলছে নানা হিসেব নিকেশ। সবদিক বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জে মহাজোটের মধ্যে অস্বস্তিকর লড়াই শুরু হয়েছে তা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাবে এবং এই মহাজোট কেন্দ্রীক জট থেকে বেরিয়ে আসতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কি স্বিদ্ধান্ত দেন তার উপর নির্ভর করছে জেলার জোটগত রাজনীতির গতি প্রকৃতি।

অন্যদিকে, বিএনপি বিশদলীয় জোটের নেতৃত্বে থাকা বিএনপির জন্য তেমন কোন চ্যালেঞ্জ নেই জোটের শরীক দলগুলোর নিকট থেকে। তাই নির্বাছন কেন্দ্রীক মনোনয়ন নিয়ে স্বস্তিতেই রয়েছে বিএনপি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ