আজ সোমবার, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুই গুরু পারবেন কি শীষ্যদের বিরোধ মিটাতে

গুরু আর গুরু নেই শীষ্যই এখন গুরু- আনোয়ার হোসেন

 

সংবাদচর্চা রিপোর্ট (রায়হান কবির নিলয়):

নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের প্রবীণ দুই নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেনের বিরোধ দীর্ঘদিনের হলেও সম্প্রতি তাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। তাদের ঐক্যে তৃনমূলে খুশির জোয়াড় বয়ে যাচ্ছে। দুইজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ নারায়ণগঞ্জের দুই মেরুর দুই শক্তিধর জনপ্রতিনিতিদের গুরু। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর শ্রদ্ধাভাজন। অপর দিকে, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের গুরু। দেখা গেছে, গুরুদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক টেবিলে বসলেও শীষ্যদের মাঝে এখনো বিরোধ দৃশ্যমান।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে   জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের মধ্যে মত বিরোধ সৃষ্টি হয়ে ছিল। তাদের মধ্যে প্রকাশ্যে কথা না বললেও একে অপরের চেহারা দেখতে পারেনি সরাসরি। এমন কি আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় কর্মসূচীতে এক মঞ্চে বসেনি। নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তখন জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই। তখন একে অপরের এই চেয়ার নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। তার বর্হিপ্রকাশ দেখা দেয় চেয়ারম্যান ও প্রশাসকের গাড়ী নিয়ে। আব্দুল হাই দায়িত্ব ছাড়লেও তখন চেয়ারম্যান আনোয়ারকে গাড়ী দিতে বিলম্ব করান হাই। তখন থেকে তাদের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়।

কিন্তু গত সোমবার (২৭ মে) নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের ইফতার ও দোয়া মাহফিলে এক মঞ্চে উপস্থিত হন এই দুই বর্ষীয়ান নেতা। তখন উপস্থিত জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে আনন্দ বয়ে উঠে। সকলে এই ঐক্যবদ্ধ আগামী দিনে একত্রে দেখতে চান। ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং এখানে যেন কোন বিভেদ না রেখে একই পথে হাটার প্রত্যয় বক্ত করেন দুই নেতা। তারা বলেন, আমরা যেন ভাইয়ে ভাইয়ে মিলে থাকি, একই টেবিলে মিলে থাকি সেটিই আমরা চাই।

দুই মেরুর দুই গুরুর বিরোধ মিটলেও তাদের শীষ্যদের বিরোধ মেটাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন জনমনে। অনেকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি প্রভাবশালী শহর। যেখানে উন্নয়নের অভাব শুধু মাত্র নেতায় নেতায় বিরোধের কারনে।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত মেধাবী ছাত্র ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির পুত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ড নিয়ে সিটি মেয়র আইভী ও শামীম ওসমানের মধ্যকার বিরোধ তুঙ্গে উঠে। বিশেষ করে ২০১৩ সালের বছর জুড়েই ত্বকী হত্যাকান্ডকে নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীতে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করে নারায়ণগঞ্জ নগরীতে। তবে ওই ঘটনার পরে দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের বিদ্যমান বিরোধ বাকযুদ্ধেই সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেলে পাল্টে যেতে থাকে নারায়ণগঞ্জের দৃশ্যপট।

ওই নির্বাচনের আগে শামীম ওসমান আইভীকে সমর্থন জানিয়ে তার পক্ষে কাজ করা ছাড়াও আইভীকে ভোট দিয়ে প্রকাশ্য ব্যালটে সিল মারেন। গত সিটি নির্বাচনের পর থেকে একেবারেই থেমে ছিল আইভী ও শামীম ওসমানের মধ্যকার প্রকাশ্য বৈরিতা। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে শহরে কড়াভাবে হকার উচ্ছেদ অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন ও পুলিশ। এর পর থেকে হকাররা নিয়মিত আন্দোলন করে আসলেও আইভী কোনভাবেই হকার শহরে বসতে না দেওয়ার ঘোষণা দেন।

এর মধ্যে গত ৯ জানুয়ারী সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে সেলিনা হায়াৎ আইভী অভিযোগ করেন শামীম ওসমান তার ছেলের বিয়েতে ২৫ কোটি টাকা খরচ করেছে। আর এখন তিনি হকারদের জন্য মায়াকান্না করছে।

এ নিয়েও বলে দুজনের মধ্যে তুমুল বাকযুদ্ধ। সর্বশেষ হকার ইস্যূ নিয়ে তুমুল সংর্ঘষের পর আবারও বিরোধের সৃষ্টি হয়। যার কারনে একজন আরেকজনের ছায়াও মাড়াতে পারেন না।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ঐক্যের ডাক দিলেও শীষ্যদের এক টেবিলে বসার বিষয়ে তারা কি কিছু ভাববেন কিনা তাই দেখার বিষয়।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি তার মুঠোফোনটি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শামীম ওসমানের গুরু আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন বলেন, গুরু আর গুরু নেই। শীষ্যই এখন অনেক বড় গুরু। গুরুর দোয়ার বদৌলতে সে এখন অনেক বড়। শামীম ওসমান আর আইভীর দ্বন্দ্ব অনেক দিনের। সেটা মিটাতেও সময় লাগবে। আমরা চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ