আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দাম দিয়ে কিনেছি বাংলাদেশ

দাম দিয়ে কিনেছি বাংলাদেশ

মোঃ মুন্না খাঁন:

ত্রিশ লক্ষ্য শহীদের রক্ত এবং দুই লক্ষ্য মা বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে এই বাংলাদেশকে কিনেছি আমরা।আজ আমরা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক।আজকের এই স্বাধীনতা একদিনে অর্জন হয়নি।পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম, শোষণ-বঞ্চনা, জেল-জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলো বাঙালিরা।

যা সর্বশেষ ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে সশস্ত্র  সংগ্রামের রুপ নেয়।মার্চ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস।তাই বছর ঘুরে মার্চ মাস আসলেই বাংলার মানুষ ৭১ এর মার্চ মাসে ফিরে যায়। মার্চ মাসে স্বাধীনতা আন্দোলনের চূড়ান্ত বীজটি বপণ করা হয়। ১৯৭১ সালের এই মাসে তীব্র আন্দোলনের পরিণতিতে শুরু হয় মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ।

১৯৭১ সালের ১লা মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানের স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান হঠাৎ  রেডিওতে ঘোষণা দেন ৩রা মার্চের জাতীয় পরিষদের পূর্বনির্ধারিত অধিবেশনটি স্থগিত করা হলো। ২রা মার্চ ঢাকায় শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করে আওয়ামীলীগ। ৩রা মার্চ পাঞ্জাব পাকিস্থান ফ্রন্ট ভুট্টোর ভূমিকার চরম নিন্দা করেন। বাংলার জনগণের প্রতি অত্যাচার বন্ধ করার আহ্বান জানান। ৪ঠা মার্চ বঙ্গবন্ধু সকল ব্যাংককে আধা সরকারী ও সরকারী কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেন। শুধু দুপুর ২:৩০-৪:৩০ পর্যন্ত কর্মচারীদের বেতন প্রদানের জন্য খোলা রাখতে বলেন। ৫ই মার্চ মার্শাল ল অথরিটি সেনাবাহীনিকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। দেশব্যাপী আন্দোলন আরোও জোরদার হতে থোকে। ৬ই মার্চ স্বতস্ফুত অসহোযোগ আন্দালন শুরু হয়ে যায়। সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই আন্দোলনে যোগ দেয়। ৭ই মার্চ বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের চূড়ান্ত ভাষণ। যা বর্তমানে জাতিসংঘের মেমোরি অফ দ্যা আর্থ হিসেবে স্বীকৃত। ৮ মার্চ  পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগের নামকরণ করা হয় শুধু ছাত্রলীগ। ৯ মার্চ  মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পল্টন ময়দানে ভাষণে বলেন- “ইয়াহিয়াকে তাই বলি,অনেক হইয়াছে আর না। তিক্ততা বাড়াইয়া লাভ নাই । পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে নাও। ১০ মার্চ  সরকারী আধা সরকারী সংস্থার প্রতি আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে তাজউদ্দিন আহমেদ নিদের্শনা দেন। ১১ মার্চ  ছাত্র ইউনিয়ন কর্তৃক স্বাধীন বাংলা কায়েমের আহ্ববান। ১৩ই মার্চ  আওয়ামীলীগের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল গুলোর সমর্থন। ১৫ই মার্চ  শেখ মুজিবুরের সাথে বৈঠকের জন্য ইয়াহিয়া ঢাকা আসেন।

২০ মার্চ ১৯৭১ জয়দেবপুরের রাজবাড়ীতে অবস্থিত ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক ব্যাটিলিয়ানের হাতিয়ার ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র নসাৎ করে দেয়। ২২ মার্চ  শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য বাঙ্গালি জাতি গর্জে উঠে। ২৩ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানের জাতীয় দিবস আওয়ামীলীগ প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করে।

২৫ মার্চ ১৯৭১  আলোচনা ভেঙে যায়। ইয়াহিয়া ও ভুট্টো গোপনে পাকিস্তান চলে যান এবং শেখ মুজিবকে বন্দি করে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর নেমে আসে ইতিহাসের সেই কালো রাত। এই রাতের বীভৎসতা এতটাই নির্মম যে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসযজ্ঞের অতীতের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে এটি হয়ে উঠেছে বিশ্বের ভয়ালতম গণহত্যার রাত।

‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নামে পাকিস্থানি বাহিনীর অতর্কিত সেই হামলায় মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠে সমগ্র ঢাকা শহর। বিশ্ববাসি অবাক হয়ে দেখেছে ধর্মের নামে বর্বর হানাদার বাহিনী কিভাবে একরাতে প্রায় অর্ধলক্ষ ঘুমন্ত বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

গ্রেফতার করার আগ মুহূর্তে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর করেন যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তৎকালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটার করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়। যা ২৬ শে মার্চ বেলাল মোহাম্মদ,আবুল কাসেম সহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েকজন কমকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা হান্নান প্রথম শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা পত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন। পরে ২৭ শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙ্গালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা পত্রটি পাঠ করেন।

এসব বেদনাময় দিনের স্মৃতিগুলো সবার মনে রাখা দরকার। আজ আমরা যে দেশে দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছি- সেই দেশটি খুব সহজে অর্জিত হয়নি। অনেক রক্তের বিনিময়ে দাম দিয়ে কেনা হয়েছে। তাই এই দাম দিয়ে কেনা বাংলাদেশটিকে আমাদের সকলকে ভালোবাসতে হবে। বাংলাদেশের আকাশের স্তরে স্তরে আজ অনেক আশার পায়রা উড়ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রেমিটেন্স, কৃষি ও পোশাক শিল্প,রপ্তানীতে বিস্ময়কর উন্নতি দেখিয়েছে বাংলাদেশ।

আজ বাংলাদেশ উন্নয়ণশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই অগ্রসরমান অবস্থা এগিয়ে নিতে হলে দেশকে ন্যায় ও শান্তির পথে পরিচালিত করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে- যারা এই দেশটির জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে গিয়েছেন, তাদের ঋণ শোধ করার অন্যতম উপায় হলো দেশপ্রেম। দেশপ্রেমকে বুকে লালিত করে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ