আজ শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দল নিয়ে নতুন স্বপ্ন ত্যাগীদের

বিশেষ প্রতিবেদক

মনে প্রাণে আওয়ামী লীগ করেন এমন অনেকে কতিপয় নেতার চক্ষুশুল হয়ে দল থেকে দূরে রয়েছেন। নেতাকে খুশী করতে পারেননি কিংবা তেল মর্দনের পরিমাণ কম হওয়ায় ছিটকে পড়েছেন কেউ কেউ। পক্ষান্তরে ভিন্ন দলের মানুষ হয়েও আওয়ামী লীগের নেতা ও জনপ্রতিনিধির কাছের মানুষ হয়েছেন, সুবিধা নিয়েছেন এমন উদাহরণ অনেক। কেউ কেউ সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দলে। এ অবস্থা মূল দলে যেমন রয়েছে তেমনি অঙ্গ সংগঠন এমনকি পেশাজীবী সংগঠনেও আছে। তবে দলীয় প্রধানের সাম্প্রতিক শুদ্ধি অভিযানে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মনে ফের আশা জেগেছে। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে সর্বত্র হচ্ছে আলোচনা। যারা অভিমানে দূরে ছিলেন তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন প্রিয় দল নিয়ে। বিশেষ করে দলের কাউন্সিল নিয়ে আশাবাদি হয়ে উঠছেন তারা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দদের অভিযোগ, বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে প্রভাবশালী মহল তাদের মধ্যে অনেককে অবজ্ঞা এবং অবমূল্যায়ন করেছে। ত্যাগীদের বিপরীতে প্রভাবশালীদের ঘনিষ্টজন ও পছন্দের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন পদে রেখে ঘোষনা করা হয় কমিটি। এমনকি ভিন্ন দল করা সুযোগ সন্ধানীরাও দলে প্রবেশ করে পদও পেয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন। এক সময় পাইকপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন নারায়ণগঞ্জ বারের লাইব্রী বিষয়ক সম্পাদক। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি সক্রিয় ভূমিকা ছিলো তার। কাউন্সিলের বিষয়ে তিনি বলেন, তত্তাবধায়ক সরকারের পরে যখন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে তখন কিছু দুধের মাছির আবির্ভাব ঘটে। তারা চাটুকারীতার মাধ্যমে নেতাদের কাছে ভিড়তে শুরু করে। আমি সহ আমার আন্যান্য সহযোদ্ধারা এ পথে হাটিনি। আমি এখনো আছি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারন করে, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের প্রয়োজনে যতটুকু পারি দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করি। তিনি অভিযোগ করেন, যারা বিএনপি ছাত্রদল, জামায়েত থেকে দলে এসেছে তারাতো দলের স্বার্থে কিছু করছে না।
বিএনপি জোট সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশনার অজিজ হটাও আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন। সেই আন্দোলনের এক পর্যায়ে সংঘর্ষে একজন এসআই নিহত হয়। সেই ঘটনায় একটি মামলা হয় এবং সেই মামলায় ৭৪ নং আসামী করা হয়েছিলো সাবেক এই ছাত্র নেতাকে। এই নেতা দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ১৯৮৬ কিংবা ৮৭ সনের সোনারগাঁও থানাধীন জামপুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সোনারগাঁও থানা যুবলীগের সদস্য সহ তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠ চক্র বিষয়ক সম্পাদক, জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১১৯৪ সালে নারায়ণগঞ্জ বারে যোগদান করেন। তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগে সাধারণ সদস্য হওয়ার জন্য একাধিকবার বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাইয়ের সাথে যোগাযোগ করেছি। তিনি শুধু শুনেছেন কিন্তু কিছু করেননি।

১৯৯৭ সালে সেই সময়ের ৩নং ওয়ার্ড বর্তমান ১১ নং ওয়ার্ড থেকে মো. মনির হোসেনকে মূল রাজনীতিতে নিয়ে আসেন অধ্যাপিকা নাজমা রহমান। মনির হোসেন বলেন, আমি ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের ৩নং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এখন নারায়ণগঞ্জের সর্বত্রই বিভিন্ন গ্রুপিং আর কোন্দল চলছে। যারা তেল দিতে পেরেছে তারাই পদ পেয়েছে। আমরা তেল দিতে পারি নাই। আমরাতো সর্বদা সত্যের পথে ছিলাম। ছিলাম বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে। নেত্রীকেই মনে করেছি আমাদের নীতি। তিনি বলেন আমার কাছে পদ বড় কিছু নয়। দলের জন্য কিছু করতে পারাটাই অনেক বড়।
যারা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ তারা সব সময় লোভ লালসার উর্ধ্বে থাকেন বলে মন্তব্য করেছেন এডভোকেট আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, আমি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে আদর্শের একজন ক্ষুদ্র কর্মী। সেই স্থান থেকে আমি আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে মনে প্রাণে ভালো বাসি। আর ভালোবাসি বলেই আমার তেমন কোন চাওয়া পাওয়া নাই। আমাকে পদ দিলো নাকি দিলোনা সেটা আমার জন্য মুখ্য বিষয় না। আমি দলকে ভালোবাসি।
এ্যাডভোকেট মো. শরীফ হোসেন ছাত্র জীবন থেকেই জড়িয়ে আছেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাথে। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। হয়েছেন অনেক মামলার আসামী। মো. শরীফ ভিপি বাদলের হয়ে রাত দিন কাজ করেছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম আকর্ষন। তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড বর্তমান নাসিকের ১২ ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি, যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক, আইনজীবী সমিতির সমাজকল্যান বিষয় সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী সংগ্রাম পরিষদ ও সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সাথে। তরুন এই নেতা স্বপ্ন দেখেন আওয়ামী লীগ নিয়ে। দলের জন্য কিছু করার প্রয়াস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে কাজ করলেও সেই কাজের যথার্থ মূল্যায়ন তিনি পাননি। বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের একটি পদে তার থাকার কথা থাকলেও ভিপি বাদল কথা দিয়ে কথা রাখেননি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ধামামা বেজে উঠেছে সর্বত্র। মূল দলের আগে অঙ্গসংঠনের কাউন্সিল করার নির্দেশনা আগেই পেয়েছে তৃনমূল। চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের কাউন্সিল। ইতিমধ্যে হাইব্রিড তথা অনুপ্রেবশকারীদের সনাক্ত করে দল থেকে বিতারনের নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে একটি তালিকা প্রনয়ন করেছে দলের হাই কমান্ড। জেলায় জেলায় সেই তালিকা ইতিমধ্যে পৌছেছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সেই তালিকা নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর হাতেও পৌছেছে। অনেকে বলছেন, এবার ত্যাগীরা পদ পাবেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, প্রতিবারই এমন কথা শোনা যায় পরে প্রেসক্রিপশন কমিটি পাশ করা হয়। তবে এবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন দেশের পুরনো ও শক্তিশালী দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মাঠ পর্যায়ের ত্যাগীরা মনে করছেন, এবার দল প্রকৃত বঙ্গবন্ধুপ্রেমী আর আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত প্রাণদের অগ্রাধিকার দিবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ