আজ মঙ্গলবার, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

থাপ্পড়ের প্রতিশোধে সিদ্ধিরগঞ্জে ট্রিপল মাডার

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
সিদ্ধিরগঞ্জে নিজের বাসায় খুন হয়েছেন নাজনীন নামের এক মা ও তার দুই কন্যা ৬ বছর বয়সী নুসরাত এবং ২ বছর বয়সী খাদিজা। বৃহস্পতিবার সকালে সিআই খোলা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তিনজনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নাজনীনের দুলাভাই আব্বাসকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, কিছু দিন আগে নিহত নাজনীন আব্বাসকে থাপ্পড় মারে। এর প্রতিশোধ নিতে তিনজনকে হত্যা করেছে সে। এ সময় ওই বাড়িতে থাকা তার নিজের প্রতিবন্ধি সন্তান সুমাইয়া (১৫) কেও কুপিয়ে জখম করে আব্বাস।
নিহত নাজনীনের স্বামী ও দুই শিশু সন্তানের পিতা সুমন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকার জোনাকি পেট্রোল পাম্পে চাকরী করেন। পরিবার নিয়ে সে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিআই খোলা এলাকার আনোয়ার হোসেনের ৭ তলা বাড়ির ৬ তলায় ভাড়া থাকতো। নিহতের পরিবার ও পুলিশ জানায়, আব্বাস মাদকাসক্ত। বিভিন্ন সময়ে সে তার স্ত্রী গার্মেন্টকর্মী ইয়াসমীন ও কন্যা সুমাইয়কে মারধর করতো। কয়েকদিন আগে দুই দিন আগে নাজনীনের সঙ্গে তাঁর বোনের স্বামী আব্বাসের ঝগড়া হয়। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে নাজনীন তার দুলাভাই আব্বাসকে চড়থাপ্পড় মারেন। পরে মেয়েকে নিয়ে ইয়াসমীন বোন নাজনীনের বাসায় চলে আসে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টার আগে বোনের বাসা থেকে গার্মেন্টে চলে যায় ইয়াসমীন। ওই সময় সুমন পেট্রোল পাম্পে ছিলো। বাসায় ছিলো নাজনীন, তার দুই সন্তান ও বোনের মেয়ে। পুলিশ জানায়, সকাল ৮টার দিকে আব্বাস ওই বাসায় প্রবেশ করে শ্যালিকা ও তার দুই কন্যাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে। এ সময় তার নিজের প্রতিবন্ধী মেয়েকে ও কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়।
নিহত নাজনীনের স্বামী ও দুই শিশু সন্তানের পিতা সুমন জানান, বুধবার রাতে তিনি কর্মস্থলে ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাসায় ফিরে দেখেন দরজা খোলা। ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পান প্রাণ প্রিয় দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রী’র লাশ। ঘরের মেঝোতে রক্ত আর রক্ত। হঠাৎ এমন পরিস্থিতিতে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন সুমন। পরে আশপাশের লোকজন ও পুলিশকে খবর দেয় সে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনের লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। আর আহত সুমাইয়াকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
নিহত নাজনীনের শ্বশুর নিজাম জানান, আমার ছেলে সুমন ও নাজনিন প্রেম করে বিয়ে করেছে। তাদের এ বাসায় আমি মাঝে মধ্যে আসা যাওয়া করতাম। কখনো তাদের মধ্যে কোন অমিল দেখিনি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই ছিলো আমার ছেলে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ঘরে ফিলে স্ত্রী- সন্তানদের লাশ দেখে সুমন আমাকে কল দিয়ে এই দুঃসংবাদ দেয়।
এদিকে ৩ খুন ও নিজের মেয়েকে জখম করে পালিয়ে গেলেও বেলা ৩টার সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউজ এলাকা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম। ডিবি পুলিশের পরিদর্শক এনামুল হক জানান, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইয়াসমিন জানান, তিনি আদমজী ইপিজেডে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তার স্বামী আব্বাস মিয়া মাদকাসক্ত। মারধরের শিকার হয়ে সে কন্যাকে নিয়ে বোনের বাসায় উঠেছিলেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক জানান, ঢাকা থেকে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে আলামত সংগ্রহ করেছে। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেষ্টিগেশন ও র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এদিকে আব্বাসকে গ্রেপ্তারের পর সন্ধ্যা ৭টায় জেলা পুলিশ লাইন্সে প্রেস ব্রিফিংয়ে
পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, আসামি আব্বাস প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, ঝগড়ার সময়ে তাকে থাপ্পর মারায় শ্যালিকা নাজনীন ও তার দুই কন্যাকে খুন করেছে।
এ সময় সে নিজের আপন মেয়েকেও জখম করে। পুলিশ সুপার জানান, পারিবারিক ঘটনার জেরে এ খুন হয়েছে। আমরা ২ থেকে ৩ ঘন্টার মাঝে আমরা আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। আসমি স্বীকার করেছে সে ৩ জনকে হত্যা করেছে। তাকে আমরা আসামীর রিমান্ড আবেদন করবো।

সর্বশেষ সংবাদ