আজ শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তলোয়ার হাতে ভয়ংকর যুবক

#রাগ হয়ে অস্ত্র নিয়ে বের হয়েছে: গাউস ॥ ভিডিও দেখে সনাক্ত : ওসি

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ

উত্তর মাসদাইর গাবতলী এলাকায় দিনে দুপুরে লম্বা তলোয়ার নিয়ে এক যুবককে রাস্তায় হম্বিতম্বির ভিডিও চিত্র দেখে অনেকেই বিষ্মিত। করোনা ভাইরাসের মতো মহামারীতে এমন ভয়ংকর আচরণে ক্ষুব্দ সচেতন মহল। প্রশ্ন উঠে কে এই যুবক ? অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক ফুটবলার গোলাম গাউসের ছেলে গাউস উৎস সেদিন তলোয়ার নিয়ে প্রতিপক্ষকে ধাওয়া করে। এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ করেছেন নূরজাহান বেগম নামের এক নারী। এলাকাবাসী জানান, গাউস নিজেকে গোপালগঞ্জের লোক পরিচয় দিয়ে বেড়ালেও প্রকৃত পক্ষে তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে।

অভিযোগে নূরজাহান বেগম উল্লেখ করেন, উৎস, তার বাবা গোলাম গাউস ও চাচা গোলাম সারোয়ার সহযোগী ১০ থেকে ১৫ জন নিয়ে ৪ আগস্ট তার ছেলে নিজাম কে ধাওয়া করে। এ সময়ে প্রতিপক্ষের কাছে তলোয়ার, চাকু, ক্ষুর সহ দেশীয় অস্ত্র ছিলো। তারা তার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধাওয়া করেছে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়। এলাকাবাসী জানায়, এর আগেও একাধিকবার এ দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে উৎস কয়েক মাস গাবতলীতে না থেকে অন্যত্র বাস করেছে।

এদিকে ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, সাদা টি সার্ট পরা এক যুবক লম্বা একটা তলোয়ার নিয়ে একটি গলি থেকে উত্তেজিত অবস্থায় বের ডান দিকে চলে যায়। তার পিছু পিছু আরও কয়েকজনকে দেখা গেছে। একটু পর যুবকটি ফের তলোয়ার হাতে ওই গলির মোড়ে এসে আবারও ডান দিকেই যায়। আবার ফিরে গলির দিকে যেতে যেতে কাউকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে কিছু বলছিলো। এক পর্যায়ে দৌড়ে একটি বাড়িতে ঢুকে। এর কিছুক্ষন পর ওই যুবক ফের গলির মুখে সামনে রাস্তায় আসে সাথে আরও কয়েকজনকে নিয়ে। এবার সে উত্তেজিত কন্ঠে কাউকে কী যেন বলে বলে আবারও ডান দিকে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে কয়েকজন যুবক ও একজন মুরুব্বি তাকে বাধা দিয়ে অনেক জোর করে গলির দিকে ফিরিয়ে আনে। এ সময় তার হাত থেকে কী যেন একটা কেড়ে নিয়ে অপর এক যুবককে রাস্তায় ছুড়ে ফেলতে দেখা যায়। প্রতক্ষদর্শীরা জানান, হাতে একটা ক্ষুর ছিলো। আর তলোয়ার হাতে থাকা ওই যুবকের নাম উৎস। সে সাবেক জাতীয় ফুটবলার গোলাম গাউসের ছেলে। কিশোর বয়স থেকে সে বখাটে বলে জানান স্থানীয়রা। ইতিপূর্বে কয়েকবার মারামারি, অপরকে জখমের ঘটনায় পুলিশ তাকে আটক করলেও গোলাম গাউস নিজেকে গোপালগঞ্জের লোক পরিচয় দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছে।

গাউস পরিবারকে চেনেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাউসের বাবা বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা ডকইয়ার্ডে চাকরী করতো। তাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। গাউসের মায়ের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। স্থানীয়রা জানান, গাউস নিজে মাদকাসক্ত। তার আস্কারায় তার ছেলে অল্প বয়স থেকেই বখাটে হয়েছে।

এ বিষয়ে গোলাম গাউস জানান, আমি নিজে সিগারেটও খাই না। আমার পরিবারে কেউ মাদকাসাক্ত নেই। তলোয়ার হাতে ভিডিও প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, আমার ছেলে উৎসকে একটি পক্ষ হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এতে ৪ আগস্ট আমার ছেলে রাগাম্বিত হয়ে তলোয়ার নিয়ে বের হয়।

এদিকে ফতুল্লায় দিন দিন গ্যাং কালচার বেড়েই চলছে। এর আগে পাগলায় প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিলো। ইসদাইরে ভাংচুরের পর কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিলো পুলিশ। মাসদাইর ঘোষেরবাগে জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়ি ও গ্যারেজে হামলার পর কিশোর গ্যাং সদস্য ফেরদৌসসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে। সচেতন মহলের মতে, কিশোর গ্যাং সমাজের জন্য একটি ক্যানসার। এখনই তা রোধ না করা গেলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিশোর গ্যাং সদস্যরা অল্প বয়সের হলেও তাদের চালায় বড় ভাইয়েরা। এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজেদের মিছিলে পাল্লা ভারী করতে কিশোর গ্যাং পালে। আর এসব গ্যাংয়ে যোগ দেয় বাড়িতে বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করা অসহায় নারীর সন্তান, কিংবা ইট ভাঙ্গে এমন নারীর ছেলে। তাদের ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে কিংবা নেশায় বুদ করে গ্যাংয়ে ভিড়ায়।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন জানান, উত্তর মাসদাইরের ঘটনায় পুলিশ ছোরা (তলোয়ার) উদ্ধার করেছে তবে কাউকে আটক করা হয়নি। তিনি আরও জানান, আমরা ভিডিও দেখে তাকে সনাক্ত করার চেষ্টা করছি।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ