আজ শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

টান টান উত্তেজনা

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

গোগনগর, কলাগাছিয়া, কাশীপুর , আলীরটেক ,বন্দর, ভোলাব, কায়েতপাড়া ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এসব ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে বাড়ছে হামলা, সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। পাওয়া যাচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মাঝে এখন থেকে ভোটের আগের রাত পর্যন্ত ভোট কেনা বেচার শঙ্কা আছে। এসব অপকর্ম ঠেকাতে মাঠে কাজ করছে প্রশাসন ।

স্থানীয় সূত্রমতে, দ্বিতীয় দফায় নারায়ণগঞ্জ সদরে সবচেয়ে হাইভোল্টেজ নির্বাচন হবে গোগনগর ইউনিয়নে । এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন নৌকা প্রতীকে লড়ছেন। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন একজন কোটিপতি। ওই কোটিপতি হলেন গোগনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফজর আলী। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীকে লড়ছেন। ইতোমধ্যে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে ফজর আলীকে। দল থেকে তাকে বহিস্কার করলেও তার টাকার কাছে নৌকা জিতবে কিনা তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে ভোটারদের মাঝে। ফজর আলী সমর্থকদের বিরুদ্ধে নৌকা সমর্থকদের উপর হামলা ও অফিস ভাংচুর করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ জসিম উদ্দিনকে সমর্থন দিয়েছেন জাতীয় পাটির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তাদের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন জসিম উদ্দিন। গোগনগরে আরও একজন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নুর হোসেন সওদাগর। জানা গেছে তিনি সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান । তারও ভোট ব্যাংক আছে। জসিম -ফজর দ্বন্দ্বে নুর হোসেন বাজিমাত করতে পারেন।
ব্যবসায়ী ফজর আলীর ভাই প্রয়াত চেয়ারম্যান নওশেদ আলী স্বতন্ত্র থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন দেখার অপেক্ষা তিনি কি করেন । ভাইয়ের মৃত্যুর পর ওই ইউপিতে নৌকার মনোনয়ন পেতে দৌড় শুরু করেন ফজর আলী। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি বিদ্রোহ করছেন।

দলীয় একাধিক নেতা ও স্থানীয়রা এই প্রতিবেদককে জানান, গোগনগরে তিনজন প্রার্থী জনপ্রিয়। ফজর আলী কোটিপতি। সন্ত্রাসীরা ফজর আলীর পক্ষে কাজ করছে। ভোট বিক্রি না হলে , আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ থাকলে জসিম উদ্দিন নৌকা প্রতীকে জয়ী হবে। এর বাইরে গেলে ভিন্ন কথা।
বন্দরের কলাগাছিয়ায় নৌকার বিপরীতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। কলাগাছিয়ায় বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধান নৌকা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে। তার বিপরীতে নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সেলিম ওসমানও দেলোয়ার হোসেনকে সমর্থন দিচ্ছেন। কাজিম উদ্দিন প্রধানকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সমর্থন দিচ্ছেন। আইভী সমর্থকরা তার পক্ষে মাঠে রয়েছে। এ ইউনিয়নে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। সভা সমাবেশে দুই প্রধান একে অপরের বদনাম করছে। ভোটারদের মাঝে দিচ্ছে নানা প্রতিশ্রুতি।

আলীরটেক ইউপিতে পিছিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সায়েম আহাম্মেদ, হেফাজতের উপর ভর করে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাকির হোসেন। এ দুই প্রার্থীর গণসংযোগ ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

কায়েতপাড়ায় নৌকা প্রতীকে লড়ছেন আলহাজ্ব মো: জাহেদ আলী। এ ইউনিয়নে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নৌকার বিপক্ষে লড়ছেন ভূমিদস্যু রফিকের ভাই মিজান। বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা নৌকার অফিসে ভাংচুর ও নৌকা সমর্থকদের উপর হামলা করছে। নাওড়াতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা আছে। চেয়ারম্যান রফিক ও তার ভাই মিজানের বাড়ি নাওড়াতে। সেখানে তারা সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রতিদিন মহড়া দিচ্ছে। সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। স্থানীয়রা নাওড়াতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
ভোলাবতে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন এড.তায়েবুর রহমান। এ ইউনিয়ন বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আলমগীর হোসেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা নৌকা সমর্থকদের উপর হামলা করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ দুই ইউনিয়নে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভ্যাস পাওয়া যাচ্ছে।
কাশীপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান এম সাইফউল্লাহ বাদল জনসমর্থনে এগিয়ে আছেন। পিছিয়ে আছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মুহাম্মাদ ওমর ফারুক । ফারুক সমর্থকদের উপর একবার হামলা হয়েছে।
এনায়েতনগরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান এগিয়ে আছেন।
বন্দর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মোক্তার হোসেন এবং মুছাপুরে আওয়ামী লীগের মজিবুর রহমান। বন্দর ,মুছাপুরে জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী আছে। জাতীয় পার্টিকে তারা হারাতে পারবে কিনা তা দেখার অপেক্ষা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছে শেষ পর্যন্ত দলীয় চাপে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা কমতে পারে।
চেয়ারম্যানের পাশাপাশি মেম্বার নিয়েও টান টান উত্তেজনা বাড়ছে। গত ৬ নভেম্বর মুড়াপাড়া ইউনিয়নে মীরকুটিরছেঁও চৌরাস্তায় রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহরিয়ার পান্না সোহেলের দেহরক্ষী জসিম উদ্দিনের (৩৭) গুলিতে আব্দুর রশিদ মোল্লা (৩৩) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। সে মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ইউপি সদস্য তাওলাদ হোসেনের শ্যালক।
গোগনগর, কায়েতপাড়া, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের একাধিক নৌকা সমর্থক জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীরা টাকার বস্তা নিয়ে মাঠে নামছেন। এখন থেকে ভোটের চাঁন রাত পর্যন্ত তারা কালো টাকা ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফা ইউপি নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ সদর,বন্দর, রূপগঞ্জ উপজেলায় ভোটগ্রহণ।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ