আজ শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জেলহত্যা দিবস আজ

জেলহত্যা দিবস

জেলহত্যা দিবস

আজ ৩ নভেম্বর, ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস- দেশ ও জাতির ইতিহাসের অন্যতম বেদনাবিধূর একটি দিন।

স্বাধীনতার প্রায় চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের এই কালো দিনটিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি অবস্থায় নিহত হন মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান। কারাগারের ভেতর এমন জঘন্য, নৃশংস ও বর্বরোচিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

এর আগে একই বছরের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এর পর কারাগারে পাঠানো হয় তার ঘনিষ্ঠ এ চার সহকর্মীকে। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের এক পর্যায়ে ৩ নভেম্বর সংঘটিত হয় জেল হত্যাকাণ্ড। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের চক্রান্তকারীদের সহযোগী ঘাতকরাই কারাগারে জাতীয় নেতাদের নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই থেকে রক্তক্ষরা এ দিনটি প্রতি বছর জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে চার জাতীয় নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

জেল হত্যাকাণ্ডের পর ওই সময়ই লালবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছিল। ২১ বছর এসব হত্যার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ সরকার জেলহত্যা মামলার প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করে। এরপর আট বছরেরও বেশি সময় বিচারকাজ চলার পর চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২০ আসামির মধ্যে ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তার শাস্তি এবং অপর পাঁচজনকে খালাস দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ওরফে হিরন খান, দফাদার মারফত আলী শাহ এবং এলডি দফাদার মো. আবুল হাসেম মৃধা। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- কর্নেল (অব). সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সৈয়দ শাহরিয়ার রশীদ, মেজর (অব.) বজলুল হুদা, লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশীদ (বরখাস্ত), লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব.) এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আহাম্মদ শরিফুল হোসেন, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ, ক্যাপ্টেন (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) মো. কিসমত হোসেন এবং ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসার। খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- বিএনপি নেতা কে এম ওবায়দুর রহমান (বর্তমানে মৃত), বর্তমানে বিএনপি নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক মন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুর (বর্তমানে মৃত), নূরুল ইসলাম মঞ্জুর এবং মেজর (অব.) খায়রুজ্জামান।

২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে কেবল রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি দফাদার মো. আবুল হাসেম মৃধা এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অপর চার আসামি লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব.) শাহরিয়ার রশীদ খান, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও লে. কর্নেল (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ওই চার আসামির চারটি আপিল ও রাষ্ট্রপক্ষের ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তি করে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আতাউর রহমান খান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ রায় দেন।

তবে জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যরাসহ বিভিন্ন মহল থেকে সেই সময়েই এ রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ও ‘প্রহসনের’ রায় বলে আখ্যায়িত করা হয়। একই সঙ্গে রায়টি প্রত্যাখ্যানও করা হয়। তারা অভিযোগ করেন, জেল হত্যার ষড়যন্ত্রের দায়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। জাতির ইতিহাসের নৃশংসতম এই হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত ও পুনঃবিচার দাবি করেন তারা।

অবশ্য জেলহত্যা মামলায় খালাস পেলেও লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব.) শাহরিয়ার রশীদ খান, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও লে. কর্নেল (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ- এই চারজন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পান। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া পলাতক অপর আট আসামি সম্পর্কে কোনো মতামত না দেওয়ায় তাদের দণ্ড বহাল আছে বলে আইনজীবীরা ব্যাখ্যা দেন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ায় জেল হত্যাকাণ্ড পুনঃবিচারের সুযোগ আসে। ২০১৩ সালের ১ নভেম্বর সরকারপক্ষ জেলহত্যা মামলার আপিল বিষয়ে সারসংক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জমা দিলে পুনঃবিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত বছরের ৩০ এপ্রিল আপিল বিভাগের চূড়ান্ত সংক্ষিপ্ত রায়ে ২০০৮ সালের হাইকোর্টের রায় বাতিল করে ২০০৪ সালের নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখা হয়। অর্থাৎ পলাতক তিন আসামি রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ওরফে হিরন খান, দফাদার মারফত আলী শাহ ও এলডি দফাদার মো. আবুল হাসেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য ১২ জনের যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয়।

দিনের কর্মসূচি :দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন আজ ঢাকাসহ সারাদেশে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে রয়েছে- সকাল ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলের শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ, ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ৮টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদ ও জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত, রাজশাহীতে জাতীয় নেতা শহীদ কামারুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত এবং বিকেল ৩টায় রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় জাতীয় নেতারা বক্তৃতা করবেন।

দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিবৃতি দিয়ে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে যথাযথ মর্যাদা ও শোকাবহ পরিবেশে জেলহত্যা দিবস পালনের জন্য দলের সব শাখা ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব শাখার নেতাকর্মী-সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ছাড়া গণফোরাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জয় বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ