আজ শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জামায়াত বিএনপির দ্বন্দ্ব চরমে

জামায়াত বিএনপির দ্বন্দ্ব

জামায়াত বিএনপির দ্বন্দ্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিএনপির অন্যতম মিত্র জামায়াত। সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী রাখার ব্যাপারে অনড় জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়ে বিএনপির পাশাপাশি ক্ষুব্ধ জোটের শরিকরাও। এই মুহূর্তে জামায়াতের এমন কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন। তবে তাদের ধারণা, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র প্রার্থী দেয়া জামায়াতের একটি কৌশল হতে পারে।

এদিকে সিলেটে জোটের একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে জামায়াতের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিএনপির দুই সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতা বৃহস্পতিবার দু’দফায় জামায়াতের তিন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। জানতে চাইলে জোটের সমন্বয়কারী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান যুগান্তরকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। সমাধান হয়ে যাবে। সিলেটে জোটের একক প্রার্থীই থাকবে।

তবে প্রার্থী রাখার ব্যাপারে জামায়াতের সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন দলটির নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, তাদের প্রার্থী আছে, থাকবে।

জানতে চাইলে জামায়াতের প্রার্থী সিলেট মহানগর আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়ের  বলেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কোনো সম্ভাবনা নেই। কেন্দ্রের অনুমতি সাপেক্ষেই মেয়র পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সিলেটে আগে থেকেই মেয়র পদে নির্বাচনের কথা বলেছি। যে কারণে রাজশাহী, বরিশালসহ অতীতে কোনো সিটি নির্বাচনেই প্রার্থী দেইনি। এ ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাকে ফোন করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কিনা জানা নেই।

এদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে জামায়াতের প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা। তাদের মতে, অতীতে স্থানীয় নির্বাচনেও জোটগতভাবেই প্রার্থী দেয়া হয়েছে। জোটের বৈঠকেও এভাবে প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত আছে। জোটের শরিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা বলেন, জামায়াতের মেয়র প্রার্থী দেয়া উচিত হয়নি। এতে করে জোটের ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে।

জোট ছাড়লে সেটা আলাদা বিষয়। তিনি মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকেই এখন থেকে নানা হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে। জামায়াতের মেয়র প্রার্থী দেয়া এর অংশ হতে পারে। তবে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, মেয়র প্রার্থী নিয়ে জামায়াতের কর্মকাণ্ডে আমরা ক্ষুব্ধ। সার্বিকভাবে মনে হচ্ছে জামায়াতের একটি অংশের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ আছে।

জামায়াতের ব্যাপারে একটি ফয়সালা হওয়া উচিত। এই মুহূর্তে জোটের সঙ্গে এমন আচরণ কাম্য হতে পারে না। তবে জামায়াতের একটি অংশের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ আছে- এ অভিযোগের বিষয়ে সিলেটে জামায়াতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, এ ধরনের কোনো কিছু নেই। বর্তমান সরকারের আমলে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা যত নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছে অন্য কোনো দলে তা হয়নি।

সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া মূলত আন্দোলনের একটি অংশ।

জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মহানগর আমীর অধ্যক্ষ মো. সানাউল্যাহ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় দু’জন নেতা জামায়াতের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় জামায়াতের নেতারা বিএনপির কাছে দাবি করেছিলেন সিলেটে মেয়র পদে তাদের ছাড় দেয়ার জন্য। এরপর আর এ ব্যাপারে দুই দলের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। জামায়াতের কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, সিলেটের বিষয়ে বিএনপি যখন আর আলোচনা করেনি তখন তারা ভেবে নিয়েছিলেন হয়তো তাদের ছাড় দেবেন। তাই সিলেটে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে রাজশাহী ও বরিশাল সিটির মেয়র পদে প্রার্থী না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

ওই সূত্র জানায়, তারা সিলেটে তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করবে না । নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের যে ভোট ব্যাংক আছে তা দেখাতে চায় জামায়াত। এর মাধ্যমে জোটে ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে প্রমাণ করতে চায় দলটি। যাতে জাতীয় নির্বাচনে জোটের আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে দরকষাকষি করতে সুবিধা হয়।

তবে মেয়র প্রার্থী দেয়ায় জামায়াতকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপিসহ জোটের শরিক দলগুলো। বিএনপি ও জোটের একাধিক নেতা জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জামায়াত প্রকাশ্যে দলের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না।

সেখানে সিলেটে প্রকাশ্যে তাদের প্রার্থী দলের সব কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। গাড়িবহর নিয়ে শহরের সব জায়গায় নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। যা বিএনপির প্রার্থীও করতে পারছেন না। অথচ জামায়াতের প্রার্থীকে পুলিশ কোনো বাধা দিচ্ছে না।

বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জামায়াতের একটি অংশের কার্যক্রমের ওপর অনেক আগে থেকেই আমরা নজর রাখছি। যা দেখছি তা সন্দেহ করার মতোই। তার পরও জোটের স্বার্থে এ নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। এখনও জোটের স্বার্থে একক প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত আছে। এ ব্যাপারে জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

সূত্র জানায়, সিলেটে জোটের একক প্রার্থী করার জন্য জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের আলোচনা চলছে। বিষয়টি সমাধানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান এ নিয়ে কাজ করছেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, অতীতেও এরকম ঘটনা ঘটেছে। পরে জোটগতভাবে প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিয়েছে। এবারও সেরকমই হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা হবে। সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ জুলাই। প্রতীক বরাদ্দ ১০ জুলাই। তিন সিটিতে নির্বাচন হবে ৩০ জুলাই।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ