আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মনোনয়ন লড়াইয়ে জাপা-আ’লীগ হুঙ্কার না’গঞ্জে রেফারির ভূমিকায় আইভী!

জাপা-আ’লীগ হুঙ্কার

জাপা-আ’লীগ হুঙ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক:
একাদশ সংসদ নির্বাচনের ঢামাডোল এখনও বেঁজে উঠেনি। নির্বাচনের বাকীও আছে বেশ কয়েক মাস। তবে এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জে মনোনয়ন নিয়ে শুরু হয়েছে হুঙ্কার। আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের এই আসন থেকে নির্বাচন করা নিয়ে শুরু হয়েছে এ লড়াই। ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নারায়ণগঞ্জের তার দলীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে কর্মী সভায় বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্যের পর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মনোনয়ন লড়াইয়ের আলোচনায় নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

জোটভুক্ত নির্বাচনের কারণে ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক সমঝোতার কারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ আসন ছেড়ে দেয়ায় ওই সময় মনঃক্ষুন্ন হন আওয়ামীলীগের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীরা। একই ধারা অব্যাহত ছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মতো নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনটিও ছেড়ে দেয়া হয় জাতীয় পার্টিকে। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই দলীয় প্রার্থী চান নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে এবার জাতীয় পার্টিকে এই দুইটি আসন ছাড়তে নারাজ আওয়ামীলীগের জেলা ও মহানগরের নেতারা। তারা চাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের সবগুলো আসনে নৌকার প্রার্থী দিতে। ইতোমধ্যে তারা দলের সকল কর্মসূচীগুলোতে নিজেদের বক্তব্যেও একই কথা তুলে ধরছেন। এবং দলীয় প্রধানের কাছেও তারা তাদের দাবি তুলে ধরেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি আসনকে নিয়ে ইতোমধ্যেই জাতীয় পার্টি ও আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ৫টি আসনকে ঘিরে একাধিক প্রার্থীই মাঠে নেমে প্রচার প্রচারনা করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন জাপা ও আওয়ামীলীগের প্রার্থী। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে ততই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আরো বেশি করে সক্রিয় হবেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। জেলার ৫টি আসনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে রয়েছে আওয়ামীলীগ জোটের হিসাব-নিকাশ। গত দুইটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির জোটের কারণে এখানে কপাল পোড়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের। জোটগত আসন বাটোয়ারায় এ জেলা থেকে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হন দলটির দুইজন সংসদ সদস্য।

তবে নারায়ণগঞ্জ-৫টি আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রায় ডজনখানিক প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি বন্দর ও সদরের কিছু এলাকা নিয়ে গঠিত। এ আসনে বর্তমানে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন সংসদে বিরোধী দলের অবস্থানে থাকা জাতীয় পাটির একেএম সেলিম ওসমান। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা। জাতীয়পার্টি এ দুইটি আসন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ধরে রাখতে চায়।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী দুই নেতা সাংসদ শামীম ওসমান ও মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর বিরোধ রাজনীতির পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রে ঢালপালা বিস্তার করতে শুরু করেছে। যে কোন ইস্যূতে এরা দুইজন ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। প্রার্থী চূড়ান্তের ক্ষেত্রে মেয়র আইভীর সমর্থন ফ্যাক্টর হয়ে দাড়াঁবে। রাজধানী ঢাকার খুব কাছের জেলা নারায়ণগঞ্জ। জোটভুক্ত রাজনীতির জন্য রাজধানীর কাছের জেলার আসন শরিক দলকে ছেড়ে দেয়া হলে তা রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এটির প্রভাবও পড়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৫ এবং নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামীলীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

জেলার সবগুলো আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই ইতিমধ্যে বিভিন্ন সভা সমাবেশে কড়া বক্তব্য দিচ্ছেন। এছাড়া মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও সাধারন সম্পাদক খোকন সাহাও জেলার ৫টি আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী চেয়ে কড়া বক্তব্য রাখছেন।
বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছে যেন আগামী নির্বাচনে এ জেলার কোনো আসন শরিক দলকে ছেড়ে দেয়া না হয়। নারায়ণগঞ্জের দলীয় নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনে জেলার ৫টি আসনেই দলীয় প্রার্থী চান। তাদের দাবি, নারায়ণগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। তাই শরিক দলকে আসন ছেড়ে দিতে হলে অন্য জেলায় যেনো ছাড়া হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লষকরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর সমর্থন এবার জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আর তাই শামীম ওসমানের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এড. আনিসুর রহমান দিপু ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক খোকন সাহাও এখন আইভীর দিকে। এছাড়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি থেকে শুরু করে জেলা ও মহানগরের শীর্ষ সারির বেশির ভাগ নেতাই আইভীর সাথে সু সম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন। তারা বলছেন, দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাকে নৌকা দিবেন এটা তার এখতিয়ার। তবে প্রধানমন্ত্রী যে আইভীর মতামতকে প্রাধান্য দিবেন এটা প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে সকলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর তাই দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি আসনে মনোনয়ন লড়াইয়ের খেলায় শেখ হাসিনা মনোনীত রেফারি আইভী। আইভী যাকে লাল কার্ড দেখাবেন প্রধানমন্ত্রীও তাকে লাল কার্ড দেখাবেন বলে মনে করছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ