আজ বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জাপায় অস্তিত্ব সঙ্কটে আ.লীগ

বিষাদ সিন্ধু:
নারায়ণগঞ্জের দুটি নির্বাচনী এলাকায় দলীয় প্রার্থী না থাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই দুটি এলাকা হচ্ছে বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলা। এসব এলাকাতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবন্থাও দিনকে দিন নাজুক হয়ে যাচ্ছে। হুমকি ধামকি ও মারধরের শিকার হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা এই দলটির নেতাকর্মী।

সূত্র বলছে, সোনারগাঁ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ এবং বন্দর উপজেলা ও সদরের একাংশ নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ নির্বাচনী এলাকা। এর মধ্যে সোনারগাঁয়ে টানা দুইবার এবং বন্দর ও সদরে টানা তিনবার জাতীয় পার্টির এমপি। দীর্ঘদিন ধরেই এই দুটি অঞ্চলে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী না থাকার কারণে দলীয় অবকাঠামো একেবারেই নড়বড়ে। সাংগঠনিক অবস্থাও নাজুক। এসব এলাকাতে প্রতি নিয়তই হুমকি, ধামকি ও মারধরের শিকার হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। অবস্থাদৃষ্টে, এসব এলাকাগুলোতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকেও আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের ভূমিকায় আর সরকারি দলের ভূমিকায় রয়েছে জাতীয় পার্টি।

সূত্র মতে, বন্দর-সদর আসনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রথমে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসিম ওসমান। তার মৃত্যুর পর এই আসন থেকে একই পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশ নেন প্রয়াত সাংসদের ছোট ভাই সেলিম ওসমান। শেষ নির্বাচনেও তিনি জাপার প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হোন। এখানে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। এই আসনে দলীয় প্রার্থী দিতে নেতাকর্মীরা দাবি তুললেও সে দাবির তোয়াক্কা করেনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ফলশ্রুতিতে শেষবারও নিজেদের কোনো প্রার্থী পায়নি আওয়ামী লীগ। যা অনেক নেতাকর্মীদেরই চাপা কান্নার কারণ। একই অবস্থা সোনারগাঁয়েও। এখানকার বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। গেলবারও তিনি জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাবি, ওই দুটি নির্বাচনী এলাকাতে দলীয় প্রার্থী না থাকার কারণে মার খাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যখন তখন চোখ রাঙাচ্ছে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাংসদরা। এমন অবস্থাতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীই আঁতাত করছে জাপার সাথে। আর যারা আঁতাত করতে পারছেন না, তারা নানা সময়ে, নানা ধরণের হুমকি, ধামকি ও মারধরের শিকার হচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা এমন পরিস্থিতির কারণে এ দুটি অঞ্চলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থাও একেবারেই নাজুক। যার প্রমাণ মিলেছে বন্দর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এখানে পাঁচজন নৌকার প্রার্থী থাকলেও একটি ছাড়া আর কোনোটিতেই নৌকা জয়ী হতে পারেনি। তিনটিতে বেশ দাপটের সাথে জয়ী হয় লাঙ্গলের প্রার্থী এবং একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী। এরমধ্যে কলাগাছিয়া ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীই মারধরের শিকার হয়েছেন। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ভয়ে ক্ষমতাসীন অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

সূত্র বলছে, বন্দরে আওয়ামী লীগ থাকলেও এখানে জাতীয় পার্টির এমপির আধিক্য। তার বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। আওয়ামী লীগের অনেকেই সুবিধাভোগের জন্য জাপার এই সাংসদের সাথে আঁতাত করে চলছেন। যার কারণে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষে এখানকার আওয়ামী লীগ শক্ত অবস্থান নিতে পারেনি। যার কারণে এখানে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে ক্ষমতাসীন দলটির প্রার্থীরা।

এদিকে সোনারগাঁ উপজেলাতেও একই অবস্থা। এখানকার আওয়ামী লীগের অবস্থাও নাজুক। সাংগঠনিক অবস্থাও তাদের তেমন একটা ভালো নয়। জাতীয় পার্টির সাংসদের সাথে অধিকাংশ নেতাকর্মীই আঁতাত করে চলছেন। বলা হয়, ক্ষমতাসীন এই দলটির নেতৃত্বে থাকা নেতারা জাপার এই সাংসদের প্রেসক্রিপশনে চলে। যার কারণে এখানকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকেই হুমকি ধামকি ও মারধরের শিকার হচ্ছেন।

জানা গেছে, এই উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ভোট আজ। যার চারটিতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার চারজন। অন্য চারটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে নৌকার পাশাপাশি চারজন রয়েছেন লাঙ্গলের প্রার্থী। ইতোমধ্যে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকেরা লাঙ্গলের প্রার্থীর সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে ভোটের দিনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে লাঙ্গলের প্রার্থীরা। তাদের বিপরীতে নৌকা প্রার্থীরা অনেকটা অসহায় অবস্থায় রয়েছে। তবে, শেষতক ভোটের ফলাফল কি হয়, তার উপর অনেকটা নির্ভর করবে এখানকার আওয়ামী লীগের অবস্থা।

তবে, এই দুটি অঞ্চলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হলে দলীয় প্রার্থীর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন খোদ আওয়ামী লীগের নেতারাও। তারা বলছেন, দলীয় প্রার্থীর অভাবে এখানকার আওয়ামী লীগ এখন ধ্বংসপ্রায়। জাতীয় পার্টির সাংসদের ভয়ে সারাক্ষণই তটস্থ থাকতে হয় ক্ষমতাসীন এই দলের নেতাকর্মীকে।

অভিযোগ উঠেছে, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ জাতীয় পার্টির সাংসদের সাথে বরাবরই আঁতাত করে চলেন। দলীয় নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের হুমকি, ধামকি ও মারধরের শিকার হলেও তিনি তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন না। একই অবস্থা সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের অবস্থা। গুটি দুই একজন এখানে ব্যতিক্রম থাকলেও অন্য সকলেই জাতীয় পার্টির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছেন। এমন অবস্থাতে এই দুটি অঞ্চলে অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ