আজ বৃহস্পতিবার, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জনতার দরজায় আইভী

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্থানীয়ভাবে অনেকে বিরোধিতা করলেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল তার প্রতি ভরসা রেখেছে। নানা ষড়যন্ত্র হলেও শেষতক মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাকেই। এবার নৌকা নিয়ে জনতার দুয়ারে দুয়ারে যাবেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এই জনতাই তাকে তিনবার একটানা তাদের প্রতিনিধি করেছে।

ভোটে বারবার জিতলেও দলের সমর্থনের পথটি মসৃণ ছিলো না আইভীর। এবারও তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে তার নাম পাঠায়নি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা। শামীম ওসমানপন্থি তিন নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার নাম মেয়র প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। যদিও এতে সায় ছিলো না মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের। নাম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে সভায় সে সভায় আনোয়ার হোসেন ছিলেন না। এদিকে আগে থেকেই গোয়েন্দা ও দলীয় সাংগঠনিক রিপোর্ট সংগ্রহ করে নারায়ণগঞ্জ সিটির অবস্থা পর্যবেক্ষন করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। স্থানীয় নেতাদের পাঠানোর তালিকা আমলে না নিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভীকেই মনোনয়ন দেয় দল। মনোনয়ন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে এবার ভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে আইভী বিরোধীরা। সূত্র মতে, বিএনপি নেতা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে স্বতন্ত্র মোড়কে তারাই প্রার্থী করেছে। যদিও গতকাল এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৈমূর আলম। তবে হাওয়ায় এ কথা ছড়িয়েছে বেশ।

জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, ষড়যন্ত্র কেউ করলেও কোন লাভ হবে না। দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে নৌকার পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দেয়া আছে। যারা এর বিরোধিতা করবে তারাই ডুববে। নৌকাও ডুববে না আর আইভীও না।
একাধিক নির্বাচন দেখেছেন এবং অনেক দিন ধরে রাজনীতি করেন এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভোটের মাঠে ষড়যন্ত্র হয় তবে সব সময় ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয় না। তাদের মতে, এবার আইভীর পাল্লা সব দিকে ভারী। তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা পেয়েছেন। এদিক দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছায়া রয়েছে। আবার একবার পৌরসভা আর দুইবার সিটি মেয়র হয়ে একটানা নারায়ণগঞ্জবাসীকে সেবা দিয়ে আসছেন। সাধারণ মানুষের কাছে তার গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে বেশ। সেই সাথে বিএনপির মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। সেই হিসেবে আইভীর ভোট ব্যাংক দুই দিক দিয়েই পোক্ত অবস্থানে আছে। দলীয় প্রতীক ও তার ব্যক্তি ইমেজ দেখে ভোট দিবে ভোটাররা। অপরদিকে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি তৈমূর আলম খন্দকার দলীয়ভাবে না এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সেদিক থেকে দলের ভোট তিনি পাবেন না আবার ব্যক্তি তৈমূরের গ্রহনযোগ্যতাও আইভীর মতো না। সে হিসেব নিকেষে তার ভোট ব্যাংকের অবস্থা নাজুক। আর এ কারনেই এবারও নৌকা নিয়ে সহজে পার হয়ে যেতে পারেন আইভী। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, আইভীর ব্যক্তিত্ব ও কথাবার্তাও একটি বড় বিষয় হিসেবে কাজ করবে। তিনি কথা বলেন কম তবে তা হয় সাহসী উচ্চারণ ও বিশ^াসযোগ্য। মানুষ তাকে বিশ^াস করেছে এবং এখনও করে। যে কারনে জনতার দরজা থেকে আইভীকে খালি হাতে ফেরত দেয়া হবে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এর আগে ২০০৩ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতাকালে আইভী নারায়ণগঞ্জ পৌরসভায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে দেশের প্রথম নারী মেয়র হন। ২০১৬ সালে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে পরাজিত করে ২য় বারের মতো মেয়র হয়েছেন নৌকার আইভী। এবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে জনতার কাছে যাবেন তিনি। যে জনতা তাকে তিনবার সম্মান দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২৭টি ওয়ার্ডে ইভিএমের মাধ্যমে এ ভোট হবে। সিটিতে ভোটার রয়েছে ৫ লক্ষ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ