আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছলনাময় প্রেমের বলি ফাতেমা

# খুন করার পর কংক্রীটের ঢালাই দিয়ে লাশ গুমের চেষ্টা # ভারত সীমান্ত দিয়ে পার হওয়ার সময় পিবিআই কতৃক আসামি গ্রেপ্তার# বালিচাপা দেয়ার ৬ দিন পর লাশ উদ্ধার।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: আড়াইহাজারের বিষনন্দী গ্রামের ডালিমের নির্মানাধীন টিনের ঘরের বালুর ভীটি হতে উদ্ধার অজ্ঞাত অর্ধপচা মহিলার লাশের হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ। থানা পুলিশ হতে মামলা গ্রহনের মাত্র ৪৩ দিনের মধ্যে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ মামলার মূল রহস্য উদঘাটন সহ প্রধান আসামী ইউনুছকে সিলেট জৈন্তাপুর বাংলাদেশ ভারতের সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করে মামলার ঘটনাস্থল আড়াইহাজার এলাকায় ধৃত আসামীকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে মামলার ঘটনার সময় আসামী কতৃক ব্যবহৃত কোদাল উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ধৃত আসামীকে ঘটনার বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসামী ঘটনা স্বীকার করে এবং ঘটনার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় গত ১০/১২/২০২০ ইং তারিখ স্বীকারোক্তী মূলক জবানবন্দী প্রদান করেন ।

শনিবার ( ১২ ডিসেম্বর) পিবিআই নারায়ণগঞ্জ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম সাইনবোর্ড এলাকায় পিবিআই কার্যলয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান , আড়াইহাজার থানার গোপালদী তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মুক্তার হোসেন আড়াইহাজার থানার বিশনন্দী ডেংপাড়া সাকিনের ডালিমের নির্মানাধীন ঘরের বালু ভর্তি ভিটি হতে অজ্ঞাত মহিলার অর্ধ গলিত লাশ প্রাপ্তির সংবাদ পেয়ে গোপালদী তদন্ত কেন্দ্রের জিডি নং-৩১৪ তাং- ১৫/০৮/২০২০ খ্রিঃ মূলে আড়াইহাজার থানার বিশনন্দী ডেংপাড়া সাকিনের ডালিমের বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে অজ্ঞাত মহিলার অর্ধগলিত লাশ উপস্থিত স্বাক্ষীদের মোকাবেলায় সূরতহাল প্রস্তুত করত ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরন করেন এবং ভিকটিমের পরিচয় অজ্ঞাত থাকায় তিনি বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামীদের বিরুদ্ধে অত্র মামলা দায়ের করেন। আড়াইহাজার থানায় অজ্ঞাত নামা আসামীদের বিরুদ্ধে সুত্রে বর্ণিত মামলাটি রুজু হওয়ার পর আড়াইহাজার থানা পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করেন, থানা পুলিশ তদন্তকালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়নগঞ্জ জেলা স্ব-উদ্যোগে মামলার তদন্তভার গ্রহন করলে গত ২৯/১০/২০২০ খ্রিঃ তারিখ মামলার ডকুমেন্ট প্রাপ্ত হয়ে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।

পিবিআই এর নিকট আসামীর স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দির দিয়েছে ।

পিবিআই নারায়ণগঞ্জ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, ভিকটিম ফাতেমা আক্তার (২৪) আড়াইহাজার থানার গহরদী এলাকার বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। সে আড়াইহাজার থানার মানিকপুর সাকিনে অবস্থিত তার মামা ইলিয়াস মোল্লার বাড়িতে থাকত। গ্রেফতার কৃত সন্দিগ্ধ আসামী ইউনুছ আলী (২৫) আড়াইহাজার থানার বিষনন্দী এলাকার আবদুর ওহাব এর ছেলে । আসামির পুরাতন বাড়ি ভিকটিমের মামা বাড়ির পাশে অবস্থিত। ইউনুছ আলী অবিবাহিত এবং ০৯ বছর মালয়শিয়ায় চাকুরী করে ছুটিতে গত ফেব্রুয়ারী/২০২০ খ্রিঃ দেশে আসে। তখন ভিকটিম ফাতেমার নানা নানী বিভিন্ন অজুহাতেই উনুছকে তাদের ঘরে ডাকত এবং ইউনুছকে ভিকটিম ফাতেমার সহিত বিয়ের প্রস্তাব দেয়। পাশা পাশি বাড়িতে থাকা অবস্থায় ভিকটিম ফাতেমার সাথে ইউনুছের প্রেমের সর্ম্পক হয়। ইতিমধ্যে ইউনুছ আলীর পরিবার আড়াইহাজার থানার বিশনন্দী ডেংপারায় নতুন বাড়ি করে সেখানে চলে যায়।

পুরাতন বাড়িতে মেলামেশা, বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ যার পরিনতি হত্যা ঃ
বিভিন্ন সময়ে ইউনুছ আলী মানিকপুরে অবস্থিত তাদের পুরাতন খালি বাড়িতে আসত এবং উক্ত খালি বাড়িতে ভিকটিমের সাথে প্রেম ও ভালবাসার সর্ম্পক তৈরী করে এক পর্যায়ে ভিকটিমের সাথে শারীরিক মেলামেশা শুরু করে। তাদের প্রেমের বিষয়টি উভয় পরিবারের লোক সহ প্রতিবেশিরা জেনে যায়। ইউনুছের পরিবার তাদের সর্ম্পকের বিরোধীতা করেই ইউনুছের বিয়ের জন্য কনে দেখা শুরু কর। অপরদিকে ইউনুছ, ভিকটিম ফাতেমা আক্তার এর সহিত মেলামেশার ফলে ভিকটিম গর্ভবতী হওয়ার আশংকা এবং ইউনুছের জন্য কনে দেখার বিষয় জানতে পেরে ইউনুছকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু ইউনুছ ভিকটিমকে বিয়ে করতে রাজি ছিলনা। এমতাবস্থায় গত ১০/০৮/২০২০ খ্রিঃ বিকালে ইউনুছ মোবাইল ফোনে ভিকটিম ফাতেমা আক্তারের সাথে কথা বলে তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে সন্ধ্যার পরে তাদের নতুন বাড়ির পিছনের গাছ গাছালী বেস্টিত জায়গায় ভিকটিমকে রেখে বাড়ি আসে। ঐ দিন রাত্র অনুমান ১০ টার সময় ইউনুছ তার বাড়ি থেকে ভিকটিমের নিকট গিয়ে তার সাথে শারীরিক মেলামেশা করে এবং একপর্যায়ে কৌশলে ভিকটিমের পিছনদিক থেকে বাহুদিয়ে গলা চেপে ধরে এবং শ্বাসরোধ হওয়া পর্যন্ত স্বজোরে ধরে রেখে ভিকটিম ফাতেমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
লাশ ঘুম করার চেষ্টাঃ
ভিকটিমকে হত্যা করার পর তার লাশ আসামীর নতুন বাড়ির পিছনের গাছ গাছালী বেস্টিত জায়গা থেকে ঘটনাস্থল ডালিমের নির্মানাধীন ঘরের বালু ভর্তি ভিটিতে এনে কোদাল দিয়ে গর্ত করে বালু চাপা দেয়। বালু চাপা দেয়ার পরে ঘটনাস্থল ঘরের মালিক ডালিম মিস্ত্রি নিয়ে কাজ করার সময় দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডালিম মিস্ত্রিদেরকে নিয়ে তার বাড়ি যায় তখন ডালিমের মা শরিফা ঘটনাস্থলে বসে মালামাল পাহাড়া দেয়ার সময় আসামী ইউনুছ ঘটনাস্থলে আসে এবং শরিফাকে জিজ্ঞাসা করে কখন ঘরের ভিটি পাকা করবে। তখন শরিফা বলে টিনের কাজ শেষে ভিটি পাঁকা করবে, তখন ইউনুছ বলে দ্রুত ভিটি পাঁকা করে ফেলেন, যদি টাকা লাগে আমার কাছ থেকে নিবেন। ডালিম ঘরের কাজ করা অবস্থায় গত ১৫/০৮/২০২০ খ্রিঃ ভিটি হতে দূর্গন্ধ পায় এবং কোদাল দিয়ে বালু সরায়ে ভিকটিমের অর্ধপচা লাশ পেয়ে এলাকার লোক জনদের খবর দিলে স্থানীয় লোকজন পুলিশ এর নিকট খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে লাশ মর্গে প্রেরন করে এবং অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় মামলা বেকর্ড করে তদন্ত শুরু করে।

অবৈধ পথে ভারত পলায়ন কালে পিবিআই কর্তৃক আসামি গ্রেফতারঃ-
পিবিআই নারায়ণগঞ্জ মামলার তদন্ত শুরু করে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামী ইউনুছকে গত ০৮/১০/২০২০ ইং তারিখে সিলেটের জৈন্তাপুর থানার বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী পাহারী এলাকায় এক ঘন্টা ব্যাপী এক র্দূধর্ষ অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করে আসামীকে নিয়ে গত ১০/১২/২০২০ ইং তারিখ আড়াইহাজার থানা এলাকায় অভিযান করে যে কোদাল দিয়ে গর্ত করে ভিকটিমের লাশ বালু চাপা দেয়া হয় সেই কোদাল ইউনুসের দেখানো মতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের মোকাবেলায় ইউনুছের পুরাতন বাড়ি থেকে জব্দ করা হয়। অভিযানকালে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল সেট, সিম, জাতীয়পরিচয়পত্র, গলারহার, কানেরফুল, হাতব্যাগ, উরনা গোপালদী বাজার গাজীপুরা ব্রীজ থেকে হাড়িদোয়া নদীতে ফেলে দেয় বলে আসামী জানায়, উল্লেখিত স্থানে অভিযান করে উক্ত মালামার উদ্ধারের চেস্টা করা হয় কিন্তু সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য আড়াইহাজার থানার মামলানং- ১৫ তাং- ১৬/০৮/২০২০ ইং ধারা: ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ