আজ শুক্রবার, ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চাপের মুখে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন কায়সার

চাপের মুখে নির্বাচন


সংবাদচর্চা রিপোর্ট
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি সেকেন্ডে ঘটছে নানা ধরনের নাটকীয়তা। প্রতিটি আসন নিজেদের দখলে রাখতে নানা কৌশলে ছক আঁকছে বড় দুটি জোট। ব্যবহার করা হচ্ছে নানা ধরনের পরিকল্পনা। সবচেয়ে জটিল সমিকরণে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনটি। এ আসনে বিগত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা।

এবারের নির্বাচনে তাকেই মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ফের লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন দেয়। এদিকে বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মাঠে নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত। কিন্তু মহাজোটের শরীক আওয়ামী লীগ ওই আসনে তাকে মনোনয়ন না দেয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জোটের বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোষণা দেন তিনি।

জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তিনি তার মনোনয়নের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিলে তা যাচাই বাছাইয়ের সময় ঋণ খেলাপির দায়ে তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়। সাথে সাথে তিনি চ্যালেঞ্জ করলে বিকেল নাগাদ তার প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা কায়সার হাসনাতকে সিংহ মার্কা প্রতীক বরাদ্দ করেন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে প্রচার প্রচারণায় নেমে পড়েন। প্রচার প্রচারণায় তিনি ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে ওই আসনে লিয়াকত হোসেন খোকাকে রীতিমত আদাজল খাইয়ে দেন।

ওই আসনে মহাজোটের দুই প্রার্থী বিরাজমান থাকায় বেশ ফুরফুরে ভাব নিয়ে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শরীক জাতীয়তাবাদী দলের ধানের শীষের প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান। বিশ্লেষকদের ধারণা মহাজোটের কোন্দলের মধ্যে এ আসনটি বেরিয়ে যেতে পারে। তাই প্রথম থেকেই কায়সার হাসনাতকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য স্থানীয়, জেলা ও দলের হাইকমান্ড থেকে অনুরোধ, হুসিয়ারী, দল থেকে বহিস্কারের হুমকি ও প্রশাসনিক চাপ অব্যাহত রাখা হয়। অত কিছুর পরও সিংহ প্রতীকে সোনারগাঁয়ের সিংহ পুরুষ পেছনে হটে যান নি। তবে এবার কড়া চাপের মুখের পিছু হটার খবর ছড়িয়ে পড়েছে সোনারগাঁসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রচার মাধ্যমগুলো বলছে, তিনি তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। তবে এ বিষয়ে তিনি কোন ধরনের মন্তব্য করেন নি। এ বিষয়ে জানতে কায়সার হাসনাতের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তার ঘনিষ্টজনদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার সঠিক কোন সংবাদ বা বক্তব্য দিতে পারে নি।

সূত্র জানায়, শুক্রবার ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে প্রায় কয়েক ঘণ্টাব্যাপী তার বাড়ি ঘিরে রেখেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসময় অন্তত ১০-১৫ রাউন্ড গুলির শব্দে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ির এক কিলোমিটারের মধ্যে কোন গণমাধ্যমকর্মী ও সাধারন মানুষকে ভিড়তে দেয়া হয় নি। তবে কেউ হতাহত হয়েছে কিনা তাৎক্ষনিক সেটা জানা যায়নি। ওই সময়ে আটক করা হয় অন্তত ৩০ জনকে। শেষমেষ প্রশাসনের সঙ্গে তিনি সমঝোতা করে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার শর্তে রাজি হন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে সিংহ প্রতীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার নির্বাচন থেকে সরে দাড়াচ্ছেন এমন গুঞ্জন বিরাজ করছিল সোনারগাঁ এলাকায়। এ ধরনের গুঞ্জন শুনে শুক্রবার দুপুরের পর থেকে অনুগামী নেতাকর্মীরা কায়সারের মোগড়াপাড়াস্থ বাড়িতে এসে জমায়েত হতে থাকেন।
পরে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কায়সার গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না। একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এদিকে সন্ধ্যায় কায়সার তার ওই বাড়িতে অনুগামী নেতাকর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনের কৌশল বিষয়ে মত বিনিময় করছিলেন। সন্ধ্যা পৌনে ৭ টার দিকে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বাড়ি ঘেরাও শুরু করলে অনুগামী নেতাকর্মীরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ অন্তত ১০-১৫ রাউন্ড গুলি ছুড়ে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তবে গুলিবর্ষণের ঘটনায় কেউ হতাহত কিংবা গুলিবিদ্ধ হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।
সোনারগাঁ থানার ওসি এম মোর্শেদ আলম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী কায়সারের বাড়িতে নাশকতার উদ্দেশে গোপন বৈঠক চলছে এমন অভিযোগে সেখানে সমন্বিত অভিযান চলে।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহিনুর হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের আইনে শুক্রবার প্রচার প্রচারণা চালানোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কায়সার হাসনাত লোকজন নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালাতে থাকলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে যৌথ বাহিনী ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় অন্তত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম কায়সার হাসনাত প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। তবে আমাদের কাছে এরবেশি কোন তথ্য নেই।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ