আজ বৃহস্পতিবার, ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

উৎসব ও শঙ্কার ভোট গ্রহণ

স্টাফ রিপোর্টার :

সংঘাত ও সহিংসতার শঙ্কার মধ্যে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে আজ সকালে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সকালে ভোট দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান প্রার্থী এম এ রশীদ।  নির্বাচনে তিন পদে ১০ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করলেও অনেকের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী হাই ভোল্টেজ ২ প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে এই শঙ্কা দেখা গেছে। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরাও। তবে প্রশাসনের দাবি, সহিংসতার কোনো আশঙ্কা নেই, কোনো ঘটনা ঘটলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
আজ (বুধবার) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উপজেলার ৫৪টি কেন্দ্রের ৩৫৭টি বুথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১ লাখ ৩১হাজার ৫৬৪ জন ভোটার। তবে ৫৪ কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে এরই মধ্যে ব্যালট পেপার ছাড়া ভোট কেন্দ্রগুলোতে পৌছে গেছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন ১ হাজার ১২৫ জন প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার।
নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে উপজেলা জুড়ে র‌্যাব, বিজিবি মোতায়েন এবং প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে মোট ৯জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছেন। এছাড়া নির্বাচনী অপরাধসমূহ আমলে নিয়ে দ্রুত ও সংক্ষিপ্ত বিচারের জন্য একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানান, বন্দর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রিয়াজ আহমেদ। এ
নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, বন্দর উপজেলা নির্বাচনে তিন পদে মোট ১০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২জন। চেয়ারম্যান পদে ‘দোয়াত কলম’ প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ রসিদ, ‘চিংড়ি মাছ’ প্রতীকে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির বহিষ্কার নেতা আতাউর রহমান মুকুল, ‘আনারস’ প্রতীকে জাতীয় পার্টি থেকে বহিস্কৃত নেতা মাকসুদ হোসেন ও ‘হেলিকপ্টার’ প্রতীকে তার ছেলে ও ডামি প্রার্থী মাহমুদুল হাসান নির্বাচন করবেন।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে ‘উড়োজাহাজ’ প্রতীকে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু, ‘তালা’ প্রতীকে মোশাঈদ রহমান মুকিত, ‘মাইক’ প্রতীকে মো. আলমগীর ও ‘টিউবওয়েল’ প্রতীকে শাহিদুল ইসলাম জুয়েল নির্বাচন করবেন।
অন্যদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ‘কলস’ প্রতীকে মাহমুদা আক্তার আর ‘ফুটবল’ প্রতীক নিয়ে সালিমা হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রতিদ্বন্দ্বি থাকলেও ভোটের মাঠে লড়াই তিন হেভিওয়েট প্রার্থী রশিদ, মুকুল ও মাকসুদের মধ্যে। নির্বাচনের প্রথম থেকেই এই তিন প্রার্থীর মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল লক্ষ্যণীয়। প্রতিযোগিতামূলক প্রচারণা, পোস্টার, সভা, সমাবেশে বাকযুদ্ধ। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর প্রচারণায় হামলা ও সহিংসতার অভিযোগও রয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও ওসমান ভ্রাতৃদ্বয়ের আশির্বাদপুষ্ট প্রার্থী এমএ রশিদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, তিন প্রার্থীর জন্যই এটি অস্তিত্ব ও মর্যাদার লড়াই। তাই তিন প্রার্থীই নির্বাচনে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে লড়াই করবেন। যা ভোটের দিতে সহিংসতায় পরিণত হতে পারে।
জানা যায়, বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ রশিদ গতবার ওসমান ভ্রাতৃদ্বয়ের সহযোগিতায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচীত হয়েছে। তবে এবার তার বিপরীতে রয়েছে দুইজন শক্ত প্রার্থী। যাদের দুজনই যেকোনো সময় নির্বাচনী পরিসংখ্যান উল্টে দিতে সক্ষম। এছাড়া তাদের উভয়ের বন্দর উপজেলায় রয়েছে বেশ প্রভাব। তাই এ নির্বাচন গতবারের মত অতো সহজ হবে না বলে মনে করেন অনেকে।
এম এ রশিদের মত কিছুদিন আগে তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মাকসুদও ওসমান ভ্রাতৃদ্বয়ের ঘনিষ্ট ছিল। নির্বাচনের প্রথম দিকে ওসমান ভ্রাতৃদ্বয়ের একজন রশিদকে এবং অন্যজন মাকসুদকে সমর্থনও জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তারা দুই ভাই রশিকে সমর্থন দেন। তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় মাকসুদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ফলে এটি তার অহমের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর রাজনৈতিক ময়দানে কোণঠাসা হয়ে পড়েন আতাউর রহমান মুকুল। ফলে এমন অবস্থায় টিকে থাকার উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ তার জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের। তাই এত প্রতিকুলতার মধ্যে নির্বাচনে অটল তিনি।
আতাউর রহমান মুকুল অভিযোগ প্রচারণার সময় তিনি গত তিন দিনে তিনটি হামলার শিকার হয়েছেন। ওই হামলায় তার সাত সমর্থক আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর সমর্থক। তবে এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা যায়নি।
এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আগ্রহী কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের লোকজন উপজেলায় একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। তারা আমাদের সমর্থকদের ক্রমাগত হুমকি দেয়, আমরা ডিসি, এসপি’কে বলেছিলাম তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তাছাড়া নির্বাচন নিয়ে দুই সংসদ সদস্যের সাম্প্রতিক বক্তব্যও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
তবে ‘দোয়াত-কলম’ প্রার্থী এম এ রশিদ দাবি করেন, তার কোনো নেতাকর্মী কোথাও হামলা বা কাউকে হুমকি দিচ্ছে না। বিরোধী প্রার্থীরা মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রিক পরিবেশ ভালো। প্রশাসনের ভূমিকা এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষ হিসেবে পর্যবেক্ষণ করছি। ভোটের দিনেও পরিস্থিতি একই থাকলে আমি আমার সাফল্যের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ বলেন, প্রার্থীদের কিছু অভিযোগ থাকে, সব নির্বাচনেই এমনটা হয়। তবে আমরা বন্দর উপজেলার জনগণকে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেব। এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যারা সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ