আজ শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গুরু-শিষ্যের বরফ গলছে

স্টাফ রিপোর্টার :

দীর্ঘদিন পর একই মঞ্চে দেখা গেল গুরু আনোয়ার হোসেন ও শিষ্য শামীম ওসমানকে। মেরুকরণের রাজনীতিতে বিভাজন দেখা গিয়েছিল এই দুই রাজনৈতিকের মাঝে। তা নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, তখনই গুরুর অভ্যার্থনায় সাড়া দিয়ে হাজির হলেন শিষ্য।

শনিবার বিকেলে জেলা পরিষদের এক অনুষ্ঠানে অসুস্থ শরীর নিয়েই হাজির হন শামীম ওসমান। মঞ্চে বক্তব্য দেয়ার সময় নিজে থেকেই তা জানালেন আলোচিত এই সংসদ সদস্য। শামীম ওসমান বলেন, ‘আল্লাহর কসম করে বলছি, এখানে আসার মত শারীরিক পরিস্থিতি আমার নেই। কিন্তু আমাদের মধ্যে এইটুকু সম্মানবোধ এখনো আছে। যেভাবে আদর করে আনোয়ার ভাই আমাকে বলেছে ; ‘তুমি আসবে না শামীম? তুমি আসবে না একটু?’ আমি বললাম ‘ভাই আমি আসবো।’ এই যে আদর করে কথাটা বলেছেন, এটার সম্মান রাখার জন্য আমার এখানে আসা। আমরা চাই রাজনীতিতে যেন সর্বক্ষেত্রে এই সম্মানবোধটা থাকে।’
ছাত্র রাজনীতির স্মৃতিচারণ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘আনোয়ার ভাই ডাক দিয়া হাতে ৫টা টাকা ধরাইয়া দিত। ওইটা নিয়া ৮১ সনে যখন জিয়াউর রহমানের গাড়ি আটকায়া দিছি সাতজন মিইলা… পিঠে এতো মার মারলো ! ব্যথা পাই নাই। আজও কিছুক্ষন আগে পিঠের ব্যাথায় হাটতে পারছিলাম না। কিন্তু এখানে এসে বক্তৃতা দেয়ার সময় ব্যথা পাচ্ছিলাম না। তার মানে মনে হয় এখনো শরীরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রক্ত ঠিক মতই আছে, আলহামদুলিল্লাহ।’
এদিকে, গুরু মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের কাছে অনুরোধও করেছেন শামীম ওসমান। বলেছেন, ‘আনোয়ার ভাইকে অনুরোধ করবো বঙ্গবন্ধুর একজন কর্মী হিসেবে চেষ্টা করেন, সমস্ত স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদেরকে মূল্যায়ন করুন। আজকে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের ভেতরে অনেক ক্ষোভ, অনেক কষ্ট। কোন অনুষ্ঠানে গেলে তারা ঠিকমত চেয়ারও পায় না। অথচ, রাজপথে কিন্তু তারাই সবার আগে জীবন দেবে।’

জানা গেছে, রাজনীতিতে গুরু শিষ্য হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তবে, মেরুকরণের রাজনীতিতে দু’জনের মধ্যে দেখা দিয়েছে দুরত্ব। সম্প্রতি গুরু-শিষ্যের মাঝে সৃষ্ট ফাটল ভেসে উঠেছিল মোটা দাগে। বিশেষ করে, শামীম ওসমানের ডাকা কর্মসূচিতে দেখা যায় না গুরু আনোয়ার হোসেনকে। এমনকি আনোয়ার হোসেনকে মাইনাসের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও গুঞ্জন উঠেছে তার সমর্থকদের মাঝে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের দ্বিতীয় সিটি নির্বাচনে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধাচারণ করে আনোয়ার হোসেনকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী করার জন্য নানা চেষ্টা চালিয়েছিল শামীম ওসমান। সেসময় আনোয়ার হোসেনের সাথে শামীম ওসমানের সু-সম্পর্ক দেখা দিলেও মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর আবারও তাদের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হয়। আনোয়ার হোসেন নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পরই আইভীর সাথে পূনরায় সু-সম্পর্ক বজায় রাখেন। এতে করে শামীম ওসমান মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য হলেও সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে নানা ভাবে মাইনাসের চেষ্টায় থাকেন বলে অভিযোগ উঠে। এমনকি গত সিটি নির্বাচনের প্রাক্কালে শামীম ওসমানের নির্দেশনায় মহানগরের ২৭টি ওয়ার্ডে যেই কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে শামীম ওসমান অনুসারী নেতারা অংশ নিলেও আনোয়ার হোসেন এবং তার কর্মী সমর্থকরা অংশ নেয়নি। ওই কর্মসূচির বিষয়ে কিছুই জানাননি বলে জানিয়েছেন আনোয়ার হোসেন নিজেই। এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আইভীর পাশেই দেখা গিয়েছিল আনোয়ার হোসেনকে। গুরু শিষ্যের মাঝে সৃষ্ট বরফ যখন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছিল, তখনই তাদের একই মঞ্চে আসা এবং পরস্পর সৌহার্দ্যতায় মান অভিমানের বরফ গলতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন কর্মী সমর্থকরা।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ