আজ বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

খন্দকার পরিবার ঘিরে রাজনীতি

সাবিত আল হাসান
দেশের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে পরিবার কেন্দ্রীক বলয়ের প্রভাব। স্থানীয় কিংবা জাতীয় ভাবে কোন একটি প্রভাবশালী পরিবারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা তাদের রাজনৈতিক লক্ষ নির্ধারন করে থাকেন। এর ব্যতিক্রম নয় নারায়ণগঞ্জেও। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপিতে পরিবারকেন্দ্রীক রাজনীতির বিভক্তি অধিক লক্ষনীয়।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পূর্বে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের ছায়াতলে রাজনীতি চললেও, বর্তমানে দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মী ঐতিহ্যবাহী খন্দকার পরিবারকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির অন্যতম পুরনো ইস্যু হচ্ছে তারা কখনই এক হতে পারেন না। ক্ষনে ক্ষনে বিভিন্ন নির্বাচন আর পেশাকে কেন্দ্র করে মুহুর্তেই নেতা বনে যান। কেউ কেন্দ্রীয় বিএনপির পদকে পুঁজি করে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। কেউবা কোন এককালে নির্বাচন করে খানিকটা জনপ্রিয়তা পাওয়ায় নিজেকে পুরদস্তুর নেতা ভাবতে শুরু করেন।

ফলে একাধিক নেতা আর বলয়ের কারনে ক্রমশই দুর্বল হয়েছে বিএনপি। প্রতিটি বলয়ের নেতারাই কর্মীদের পদ পাইয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে নিজ দলে ভেড়ান। আবার কেউ কেউ ভবিষ্যতে সুবিধা পাবার লক্ষ্যেই বলিষ্ঠ নেতা দেখে তার পাশে ভিড়েন। এখন পর্যন্ত জেলা জুড়ে বিএনপির অতিপ্রভাবশালী নেতা হিসেবে কেউ আবির্ভুত হতে না পারায় নেতার সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে।তবে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বেশ ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে। মানুষের জন্য রাজনীতির বুলি ফোটানো নেতারা কেউ কেউ ত্রান আর গুটিকয়েক সুরক্ষাসামগ্রী বিলিয়ে দায় সেরেছেন, আবার কেউ করোনার ভয়ে কর্মীদের রেখেই দিয়েছেন পিছুটান।

এমন পরিস্থিতিতে তৈমূর আলম খন্দকারের নির্দেশে বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মী কৃষকের ধান কেটে দিয়ে চলে এসেছেন আলোচনায়। টানা এমন স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ডে প্রশংসা কুড়িয়েছেন বেশ। একই পরিবারের আরেক ভাই কাউন্সিলর ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ যেভাবে মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন তা এক অবর্ননীয় চিত্র।
কাউন্সিলর খোরশেদ করোনার শুরু থেকেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী বিতরন, মানুষকে সচেতন করা, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের দাফন – সৎকার, টেলিমেডিসিন সেবা, ত্রান বিতরণ সহ নানা সেবামূলক কাজ করে আলোচনায় এসেছেন। শুধু দেশে নন, দেশের বাইরেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। দেশ বিদেশের নানা গণমাধ্যমে তুলে এসেছে তার মহানুভবতার চিত্র। স্থানীয় সাংসদরাও তার প্রশংসা করতে ভুল করেননি। দল মত নির্বিশেষে খোরশেদ এখন জাতীয় বীর হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
সেই বিবেচনায় বিএনপি নেতাদের মাঝে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। কাউন্সিলর খোরশেদ মহানগর যুবদলের অন্যতম নেতা হলেও মহানগর বিএনপি নেতাদের মুখে পাওয়া যায়নি প্রশংসাবাণী। জেলা বিএনপিতেও দেখা গেছে একই চিত্র। যেই খোরশেদকে নিয়ে সারাদেশে আলোড়ন তাকে নিয়ে বিবৃতি দিতেও কার্পন্য করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

এছাড়া তার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে কেউ কেউ মেতেছেন অপপ্রচারেও। কেউবা আগামীর নাসিক নির্বাচনে বানিয়ে দিয়েছেন মেয়র আইভীর প্রতিদ্বন্দ্বি, আবার কেউ বানিয়ে দিয়েছেন ওসমান বলয়ের অনুগত কাউন্সিলর। তবে এতসব অপপ্রচারের মাঝেও নিজের কাজ অবিচল ভাবে চালিয়ে গেছেন কাউন্সিলর খোরশেদ।
তবে দলের কর্মীদের মাঝে হটাৎ করেই বদলে গেছে বিএনপির রাজনীতির চিত্র। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন খোরশেদ ও তৈমূরের নজরে আসতে ব্যক্তি উদ্যোগে পালন করে চলেছেন বিভিন্ন কর্মসূচী। প্রতিনিয়ত দোয়া মাহফিল আর বিভিন্ন ইস্যুতে সরগরম হচ্ছেন তারা।

তৈমূর নারায়ণগঞ্জ ১ আসন এবং খোরশেদ নাসিক ও ৫ আসন নিয়ে নিজেদের রাজনীতি সাজালেও তাদের অনুসারী পৌছে যাচ্ছে অন্যান্য আসনেও। বিশেষ করে খোরদেশ দম্পতি এবং তৈমূর কন্য মার-ইয়াম করোনায় আক্রান্ত হবার পর তাদের সুস্থতা কামনায় শহর, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, রূপগঞ্জেও নেতাকর্মীদের কর্মসূচী পালনে দেখা গেছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি স্পস্ট যে আগামীর রাজনীতিতে খন্দকার পরিবারকে ঘিরেই গড়ে উঠবে বিএনপির বড় একটি বলয়।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ