আজ শুক্রবার, ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘ক্ষমা চেয়েছে নজরুল’

সংবাদচর্চা অনলাইনঃ

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের জন্য অন্যতম ভীতির কারণ ছিলেন সদর মডেল থানার পরিদর্শক নজরুল। কর্মসূচী পালনের ক্ষেত্রে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সরিয়ে গলিতে দাঁড়াতে বাধ্য করার অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। নেতাকর্মীদের সর্বদা চাপের মুখে রাখায় তিনি ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে এক মূর্তিমান আতংক।বিএনপিকে মাঠে না দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে যেভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতেন তা অনেকের কাছেই অতিউৎসাহী মনোভাব বলে বিবেচিত হতো।

তবে সেই পরিদর্শক নজরুল বর্তমানে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের ১১ নাম্বার আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে শারীরিক অবস্থাও ছিল বেশ শোচনীয়। আশেপাশে তার যত্ন নেয়ার মত কাউকে না পেয়ে সেই বিএনপি নেতাদের কাছেই মিনতি করেছেন করুন সুরে। তবে ফিরিয়ে দেননি তার হাতেই নির্যাতিত বিএনপির নেতারা। বরং করোনা কালে বিভেদ ভুলে বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগীতার হাত।

শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনটাই জানান দেন মহানগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক এটিএম কামাল।

নেতাকর্মীদের কাছে আতংকের নাম ছিলেন যেই পরিদর্শক নজরুল তিনি আইসিইউ বেডে শুয়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। একই সাথে তাকে সহযোগীতা করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন করোনা বীর ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের কাছে।

তবে তার এমন উদারতার বিপরীতে পোষ্টের কমেন্টে ভিন্ন চিত্র। বিএনপির নির্যাতিত কর্মীরা সেখানে ব্যক্ত করেছেন তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। আইসিইউ তে শয্যাশায়ী অবস্থায় মানুষের এমন ঘৃণাবাক্য হয়তো কেউই প্রত্যাশা করবেন না তার জীবনে। ইব্রাহিম নামে এক কর্মী লিখেন, সে অনেক জ্বালাতন করেছে। বিএনপির মিছিল দেখলেই তার গা জ্বালা শুরু হতো। অনেক সময় অন্য অফিসাররা আপত্তি করলেও তিনি তা শুনতেন না। কর্মসূচী পালনের পূর্ব অনুমতি থাকলেও অতিউতসাহী আচরন করতেন। আজ সে দোয়া চায়, তার প্রতি ধিক্কার জানাই।

নাজমুল হাসান রাব্বি বলেন, জীবনে কম অত্যাচার করেননি বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর। আল্লাহ যাতে প্রশাসনের সবাইকে এমন বুঝ দেয়। একই ভাবে আখতার হোসেন দিলু বলেন, যমে টান দিয়েছে তাই তার অপরাধের কথা মনে পড়েছে। আল ইমরান নামে আরেকব্যক্তি বলেন, তার হাতে কতবার হামলার শিকার হয়েছি তা বলার মত না।

এ ব্যাপারে এটিএম কামাল বলেন, আসলে মানুষের কখন কোন পরিস্থিতে পরতে হয় তা কেবল উপরওয়ালাই জানেন। আজ আমি প্রতাপশালী কিন্তু কাল আমি সব হারিয়ে রাস্তায় থাকবো না তার কোন গ্যারান্টি নেই। আমি আজ নির্যাতন চালাচ্ছি কাল এর উল্টো ঘটনাও ঘটতে পারে। সুতরাং কখনই সীমা অতিক্রম করা উচিৎ না। এই করোনা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। পরিদর্শক আইসিইউতে শুয়ে আমার কাছে টেলিফোন করে তার ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। আমরাও যারা নেতাকর্মী রয়েছি তারা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠূক সেই কামনা রইলো।

একই বিষয়ে করোনা বীর কাউন্সিলর খোরশেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে তিনি আইসিইউ তে চিকিৎসা ধীন অবস্থায় আমাদের কাছে ফোন দিয়েছেন। আমিও সেখানে আমাদের পরিচিত মানুষ থাকায় তার দেখাশোনা করতে বলে দিয়েছিলাম। সেই প্রেক্ষিতেই তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। যদিও আমরা তেমন কিছু করতে পারিনি তার জন্য, তবুও করোনার সময়ে তার পাশে আর কাউকে না পাওয়ায় আমাদের সামান্য দেখাশোনাতেই তিনি খুশি হয়েছেন।

উল্লেখ্য, পরিদর্শক নজরুল কিছুদিন পূর্বেই অবসরে যান। তিনি কন্সটেবল পদ থেকে ধীরে ধীরে পরিদর্শক পদ অর্জন করেন। বিভিন্ন কর্মসূচী ঠেকাতে তার উপর দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি হয়ে উঠেন বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে মূর্তিমান আতংক। আর সেই কারনেই তাকে একনামে চিনে থাকেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ