অনলাইন রিপোর্ট:
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে অনলাইন ক্যাসিনোর কান্ট্রি হেড সেলিম প্রধানের চাঞ্চল্যকর নারী কেলেঙ্কারির নানা তথ্য । রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ৯৯ নম্বর সড়কের ১১/১ মমতাজ ভিশন নামের বাড়ির দুটি ফ্লোর ভাড়া নিয়েছিলেন সেলিম প্রধান। ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে (বাঙালি) নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। চতুর্থ তলায় ছিল তার রংমহল। সেখানে তিনটি কক্ষ নাচ-গান ও বিশেষ ব্যক্তিদের মনোরঞ্জনে ব্যবহার করা হতো। একটি বিশেষ কক্ষে ভেন্টিলেটরের ওপর ছোট্ট গোপন ক্যামেরা বসানো ছিল। সেলিমের সহযোগী ওই গোপন ক্যামেরায় ছবি ধারণ করতেন।
গুলশানের বাসার চারতলা সেই রংমহলে গত ছয় মাসে অন্তত ১০০ তরুণীকে নিয়ে আসা হয়। সেই তরুণীদের সাথে ছবি ধারণের পর সেলিম প্রধান প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ‘প্রধান ক্লাবের’ সদস্য করে নিতেন। এরপর নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতেন।
থাই এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজ থেকে সেলিমকে নামিয়ে আনার সময় তার লাগেজ তল্লাশি করে পাওয়া যায় তিনটি মেমোরি কার্ড। সেখানে দেশি-বিদেশি তরুণীদের সঙ্গে অনেক ব্যক্তির অন্তরঙ্গ ছবি ছিল। এসব ছবি দেখিয়ে কোটি টাকা বা সুবিধা ভাগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সেলিমের।
তদন্ত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে উত্তর কোরীয় নাগরিক দো-র সহায়তায় শুরু করা সেলিম প্রধানের অনলাইন জুয়ার মূল সার্ভার ফিলিপাইনের ম্যানিলায়। তিনি সেখান থেকে অনলাইন জুয়ার কপিরাইট কিনে ঢাকায় সার্ভার চালু করেন। নব্বইয়ের দশকে জাপানে গিয়ে বিয়ে করেন সেলিম। সেখানে গাড়ির ব্যবসা করতে গিয়ে প্রতারণার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়। একপর্যায়ে জাপান থেকে ফিরে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানেও বিয়ে করেন সেলিম। পরে থাইল্যান্ডে বসতি গড়ে তোলেন। সেখানে হোটেল ও ক্যাসিনো ব্যবসা রয়েছে তাঁর। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে গিয়াসউদ্দিন মামুনকে বিএমডাব্লিউ গাড়ি উপহার দিয়ে হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ হন সেলিম। তিনি তারেক রহমান টাকা পাঠাতেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর থাই এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজ থেকে সেলিম প্রধানকে নামিয়ে আনে র্যাব। এরপর তাঁর গুলশান ও বনানীর বাসা এবং অফিসে অভিযান চালিয়ে ২৯ লাখ পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সমপরিমাণ ২৩টি দেশের মুদ্রা, ১২টি পাসপোর্ট, ১৩টি ব্যাংকের ৩২টি চেক, ৪৮ বোতল বিদেশি মদ, একটি বড় সার্ভার, চারটি ল্যাপটপ ও দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। হরিণের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ নিরাপত্তা আইনে তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বর্তমানে সেলিম অর্থ পাচার মামলায় রিমান্ডে রয়েছে।
এছাড়া সেলিম প্রধানের গ্রামের বাড়ি রূপগঞ্জ উপজেলার ভূলতা ইউনিয়নের মর্তুজাবাদ এলাকায়। তার বাবার নাম নান্নু মিয়া। তিনি গাউছিয়া মার্কেটে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দখল করে রেখেছিলেন। সেটা সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করেছে।