আজ শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কেন্দ্রের উছিলায় নিরব বিএনপি

সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাত, বিশেষ প্রতিবেদক।

রাজধানী ঢাকার পরেই নারায়ণগঞ্জে বিএনপির শক্ত অবস্থান। আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু বলা হয় এ জেলাকে। অথচ দলের প্রয়োজনে সবচেয়ে বেশি নিষ্ক্রিয় মনোভাব পরিলক্ষিত হয় নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীদের বেলায়। যেকোন বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে কেন্দ্রের অযুহাতে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেন তারা। এমনটাই মনে করেন জেলার রাজনৈতিক বোদ্ধামহল।

দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির মন মানষিকতা দেখে বোঝার উপায় নেই যে তারাও একসময় ক্ষমতায় থেকেছে, সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করেছে। কেন্দ্রীয় কোন কর্মসূচী কিংবা দিক নির্দেশনা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখা মেলেনা। আর সিনিয়র নেতা কর্মী যারা কিনা দলীয় কর্মীদের সবসময় চাঙ্গা করে রাখবেন কিংবা দলের প্রয়োজনে সবসময় সক্রিয় থাকবেন তারাই থাকেন সবচেয়ে বেশি নিষ্ক্রিয়। ঠিক এ কারণেই ক্রমস সাংগঠনিক শক্তি কমে যাচ্ছে দলটির। এমন অভিমত খোদ বিএনপি নেতাকর্মীদেরই।

যেকোন সংবাদের প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতাকর্মীদের আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে জবাব আসে, কেন্দ্র ঘোষিত কোন কর্মসূচী নেই। দলের হাইকমান্ড বললেই মাঠে নামবেন তারা। তাদের এমন মনোভাবের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় রাজনৈতিক বিশ্লেকদের কাছে। তাদের মতে, দীর্ঘদিন ক্ষমতার স্বাদ বঞ্চিত থাকার ফলে ঝিমিয়ে পরেছে দলের নেতাকর্মীরা। আবার কতিপয় সিনিয়র নেতাকর্মীরা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সাথে আতাত করে জীবন যাপন করছেন। যার ফলে তাদের কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না।

এদিকে ঝিমিয়ে পরার বিষয়টি স্বীকার করে মাঠ পর্যায়ের একাধিক নেতাকর্মী জানান, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় না থাকার ফলে দলের এখন বেহাল অবস্থা। তবে, এখানে পুলিশী হামলা মামলার বিষয়টিও হচ্ছে মূল। নেতাকর্মীরা বলেন, আমাদের তো রাস্তায় নামতে দেয়া হয় না। সামান্য কোন বিষয় নিয়ে যদি ব্যানার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে চাই তাতেও প্রশাসন আমাদের বাধা দেয়। আর দিবেই না বা কেনো? দেশে তো গণতন্ত্র নেই। সবমিলিয়ে আমাদের এই করুণ দশা।

আপনারা কি ক্ষমতায় যেতে চান না? সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করতে ইচ্ছে হয় না? তাহলে আন্দোলনে যান না কেনো? এমন অনেক প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মীরা জানান, কেন্দ্র থেকে ঘোষিত সকল কর্মসূচী আমরা যথাযথভাবে পালন করি। কেন্দ্র থেকে যখন যেভাবে আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দেয়া হয় আমরা ঠিক সেভাবেই দায়িত্ব পালন করি। যেকোন ইস্যুতে ইচ্ছাকৃতভাবে আন্দোলনে নামলে কি কেন্দ্রে জবাবদিহিতা করতে হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, তা হয়তো করতে হয় না।

তবে কেনো বিএনপির নেতাকর্মীরা আন্দোলন সংগ্রামে যান না। কেনো দিনের পর দিন তারা ঘরে বসে সময় পার করছেন। এমন হাজারো প্রশ্ন রয়েছে দলটির অনেক সমর্থকদের মনে।

তাদের এসকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সাথে কথা হয় সংবাদচর্চার এ প্রতিবেদকের। রিজভী বলেন, সবকিছুই নিয়মানুযায়ী হয়। সময়ের উপর নির্ভর করে কেন্দ্র থেকে তাদেরকে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। এজন্যই নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের কথা বলেন।

আগামীতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে কঠোর আন্দোলনের কোন কর্মসূচী দেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, প্রতিনিয়তই কেন্দ্র থেকে জেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। যা এখনও চলমান। ভবিষ্যতেও আমরা আমাদের এ কার্যক্রম অব্যহত রাখবো।

রাজনৈতিক বোদ্ধামহলের মতে, ব্যক্তিগত সকল কোন্দল ভুলে দলের হাইকমান্ডের সাথে জেলা পর্যায়ের সকল নেতাকর্মীদের ধারাবাহিক যোগাযোগ রাখতে হবে। সকলের সাথে সমন্বয় করে শক্ত একটি অবস্থান দাড় করাতে হবে। বিরোধি দলে থাকলে পুলিশী বাধা আসাটা স্বাভাবিক। তাই বলে অযুহাত দেখিয়ে থেমে থাকলে ক্ষমতা শুধু স্বপ্নেই থাকবে। তাই অতীতের সবকিছু ভুলে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই হবে এখন তাদের মূল কর্ম। তাহলেই কেবল সম্ভব।

এসএমআর

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ