আজ বৃহস্পতিবার, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কি চলছে ছাত্রদলে

বিশেষ প্রতিবেদক:

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ঐক্যবদ্ধতায় ভাটা পরেছে। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আর নিজেদের মধ্যে কোন্দলকে ঘিরে ক্রমসই পিছিয়ে পরছে সংগঠনটি। দেশের অলিখিত প্রধান বিরোধি দল বিএনপির ভ্যানগার্ড খ্যাত এই সংগঠনকে নিয়ে চিন্তিত দলীয় নেতাকর্মীরা। তাদের প্রশ্ন, কি চলছে ছাত্রদলে?

সম্প্রতি জেলা ছাত্রদল সভাপতি মশিউর রহমান রনির অব্যহতির দাবীতে কেন্দ্রে আবেদন পাঠিয়েছেন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতি আরিফুর রহমান মানিক বিষয়টি দৈনিক সংবাদচর্চাকে নিশ্চিত করেছেন। একই আবেদনে স্বাক্ষর দিয়েছে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবু, সিনিয়র সহ-সভাপতি রাফিউদ্দীন রিয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মাগফুর ইসলাম পাপন এবং জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, রাকিব হাসান রাজ, নাজমুল হাসান বাবু, মেহেদী হাসান, সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান মানিক।

লিখিত ঐ অভিযোগে উল্ল্যেখ করা হয় রনির আত্মীয় মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও দীর্ঘদিন পরে এনিয়ে আপত্তি তোলায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে পুরো শহরজুড়ে।

সূত্রানুযায়ী, ২০১৮ সালের ৫ জুন মশিউর রহমান রনিকে সভাপতি ও খাইরুল ইসলাম সজীবকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জে জেলা ছাত্রদলে। কমিটিতে আরও ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ, সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান অনিক, যুগ্ম-সম্পাদক ইসমাঈল মামুন, মাইনুল ইসলাম রশিদ, নাজমুল হাসান বাবু, মশিউর রহমান শান্ত, রাকিব হাসান রাজ, রফিকুল ইসলাম রফিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল মিয়া। আংশিক কমিটি ঘোষনার পর থেকেই দুই ভাগে বিভক্ত হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। আর এ জন্য সেসময় তৃণমূল দায়ী করেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সজিবকে। রনির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার এবং দলীয় কর্মসূচিও আলাদা পালন করছেন সজিব।

দলীয় সূত্র মতে, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি-সেক্রেটারির এই কোন্দল ছাড়া আর কোন সমস্যা বিদ্যমান ছিলো না নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলে। কেন্দ্র থেকে যখন যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ঠিক সেভাবেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা। তবে, হঠাৎ করেই মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবু এবং সহ সভাপতি হামিদুর রহমান সুমনের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়। আর এ নিয়ে আলাদা আলাদা কর্মসূচী পালন করতে দেখা গেছে তাদের। এবার জেলা ও মহানগর ছাত্রদল বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মিলে অভিযোগ তুলেছেন রনির বিরুদ্ধে।

এ অভিযোগের ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি সংবাদচর্চাকে বলেন, রাজনীতি সবাই করতে পারে না। এ বিষয়টা অত্যন্ত জটিল। কারণ এখানে ত্যাগ, তীতিক্ষা, শ্রম ও বিসর্জন দিতে হয়। ব্যক্তিগত আক্রোশে ভিত্তিহীন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অভিযোগ করাতে আমাদের কিছুই যায় আসে না। মানুষ বোকা না, এগুলো সবাই বোঝে। আমরা ছাত্র রাজনীতি করি। মানুষের জন্য রাজনীতি করি। সেটা নারায়ণগঞ্জের এ প্রান্ত থেকে অপ্রান্তের মানুষ জানে।

কোন্দল আর বিভক্তির কারণে সাংগঠনিক শক্তি কমছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, না। আমরা আমাদের জায়গায় অটুট। কোন ভিত্তিহীন ইস্যুকে ঘিরে ছাত্রদলের সাংগঠনিক শক্তি কমবে না। বরং পূর্বের ন্যয় আমরা আরও বেশি শক্তিশালী হবো।

একই বিষয়ে জানতে মহানগরের সভাপতি সাহেদ আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবুকে মুঠোফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। এদিকে সহ সভাপতি হামিদুর রহমান সুমন বলেন, মুখে মুখে জিয়ার আর্দশের সৈনিক বললেও অনেকেই কমিটি নিয়ে বাণিজ্য করে। যা ছাত্রদলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সকলেই জানে। এগুলো শহীদ জিয়ার আর্দশ হতে পারে না। সাচ্চা জিয়ার সৈনিক কখনো কমিটি নিয়ে বাণিজ্য করে না। কমিটি বাণিজ্যের কারণে নিজেদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হচ্ছে। আর এতে করে দলের সাংগঠনিক শক্তি ক্রমসই কমে যাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্রদল বিএনপির অন্যতম শক্তি। নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদল রাজধানী ঢাকার চেয়ে কোন অংশ কম নয়। তবে তাদের অন্তকোন্দল আর বিভক্তি ভষিষ্যতের জন্য ভয়াবহ বার্তা ডেকে নিয়ে আসতে পারে। এমনিতেই দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে দল, তারওপর যদি তারা ঐক্যবদ্ধ থাকতে না পারে তাহলে বিএনপির ক্ষমতার স্বপ্ন দেখা বৃথা।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ