আজ শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

খালেদা ও তার দুই ছেলের কালো টাকা আমরা দেশে ফিরিয়ে এনেছি- প্রধানমন্ত্রী

কালো টাকা

কালো টাকা
ফারুকুর রহমান বিনজু, পটিয়া প্রতিনিধি :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ শান্তির দেশ। এদেশে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান নেই। যারা সেদিন স্বাধীনতা চায়নি, তারাই জাতির পিতাকে হত্যা করে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার চলন্ত বাস ট্রেনে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এসময়ে আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে ২৭ জন পুলিশকেও। চট্টগ্রামবাসীর কাছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশে উন্নয়ন হয়। একমাত্র আমরা যদি নৌকা মার্কায় ভোট পাই তাহলেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকবে।

গতকাল বুধবার বিকেলে পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের কাছে ওয়াদা চান। বলেন, আপনারা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকায় ভোট দেবেন কি-না, হাত তুলে ওয়াদা করুন। তখন উপস্থিত জনতা হাত তুলে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

সভায় প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে বলেন, আমরা উন্নয়ন করি। আর বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে দেশকে পিছিয়ে দেয়। বিগত নির্বাচন ঠেকানোর নামে খালেদা জিয়ার নির্দেশে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার চলন্ত বাস ট্রেনে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এসময়ে আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে ২৭ জন পুলিশকেও। খালেদা ও তার দুই ছেলে কালো টাকা সাদা বানিয়েছে। তাদের পাচারের টাকা বিদেশে ধরা পড়েছে। আমরা উক্ত টাকা দেশে ফিরিয়ে এনেছি।
মুক্তিযোদ্ধাদের কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের কারণেই এই দেশ বিধায় সবার আগে তাদের অধিকার। মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনি সবাই সর্বাগ্রে অধিকার ভোগ করবে। সে কারণে চাকরিতে আমরা কোটার ব্যবস্থা করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের কারণেই তো এই চাকরি করতে পারছেন, সুতরাং তাদের ছেলে-মেয়েরা এ সম্মান পাবেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার দিয়ে সরকার তা পূরণ করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, পুরো চট্টগ্রামে বর্তমান সরকার ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করছে। শিক্ষা, বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষায় সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আমরা ১ কোটি ৩০ লাখ মায়ের হাতে উপবৃত্তির টাকা দিচ্ছি, যেন তাদের সন্তানেরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।

সারাদেশে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। এদেশকে এখন আর খাটো করে দেখার উপায় নেই। ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। অনগ্রসর এলাকায় সোলার বিদ্যুৎ ও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। বেকার যুবকদের জন্য ১০০টি অঞ্চলে অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে। দেশের প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ভবন, আইসিটি ভবন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো করা হবে। বছরের শুরুতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হচ্ছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমের মাধ্যমে ডিজিটাল পাঠদানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ভারতের কাছে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। গভীর ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি।

বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জাতির পিতার হত্যার বিচার করে রায় কার্যকর করেছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, আলহাজ¦ সামশুল হক চৌধুরী এমপি, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, মঈনুদ্দিন খান বাদল এমপি, পঙ্কজ দেবনাথ এমপি, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ ছালাম, দিপংকর তালুকদার, মহানগর আ’লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলার সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, কেন্দ্রীয় সদস্য কামাল হোসেন, মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইন্দ্রেরা এমপি, সাবেক এমপি চেমন আরা তৈয়ব, এমপি ওয়াসিকা খানম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠিক সম্পাদক বদিউল আলম, পটিয়া পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনে পুরো চট্টগ্রামের ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন ও ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি : পটিয়াবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল জাতির পিতা ঘোষিত পটিয়া (সাবেক মহকুমা) কে জেলায় রূপান্তরের পরিকল্পনা তুলে ধরে তাদের দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষার অবসান ঘটাবেন। কিন্তু বিধিবাম। আবারো অজানা রহস্যে পটিয়া মহকুমা জেলায় রূপান্তরের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে বের না হওয়ায় লক্ষাধিক জনতা হতাশায় ভেঙ্গে পড়ে। তবে পটিয়ার সাংসদ আলহাজ¦ সামশুল হক চৌধুরী জাতির পিতা কর্তৃক পটিয়াকে জেলা ঘোষণার চিত্র প্রধানমন্ত্রীর সম্মুখে তুলে ধরে বলেন, আপনি চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। পটিয়া জেলার ব্যাপারেও জাতির পিতার ঘোষণার বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত দেন তা জানতে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এসময় লক্ষ জনতা তার প্রতি সমর্থন দিলেও প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এ বিষয়ে কোন ঘোষণা না আসায় উপস্থিত হাজার হাজার জনতা হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। একটি বালক বিদ্যালয় সরকারিকরণ ও হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের বিষয়ে ঘোষণা না আসায়ও জনগণ বেশ হতাশ হয়ে পড়েন।

জনসভাস্থলের বাইরে লক্ষ জনতা : তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে সকাল ৯ টা থেকে লাইন ধরে হাজার হাজার হাসিনা প্রেমী জনতা পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হতে থাকে। এতে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হঠাৎ ২ টা থেকে অধিকাংশ গেইট বন্ধ করে দেওয়ায় লক্ষাধিক জনতা জনসভায় প্রবেশ করতে পারেনি। এতে পটিয়া ইন্দ্রপোল থেকে শ্রীমতি ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় জন জট সৃষ্টি হয়।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ