আজ শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কাঠ চিড়েনা স’ মিলে

সাবিত আল হাসান

গত ১০ বছর ধরে বেশ লাভের সাথেই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন স’ মিল মালিক চুন্নু মিয়া। তবে এবারের মত পরিস্থিতি কখনই মুখোমুখী হননি তিনি। তবে চুন্নু মিয়া একা নন, তার আশেপাশে অনেকেই কাঠ চেড়াইয়ের ব্যবসা করে যাচ্ছেন। কিন্তু গত ৪ মাসে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারনে নামতে শুরু করেছে লাভের সূচক। ধ্বস নেমেছে ব্যবসায়। ধীরে ধীরে ব্যাংক লোন আর কর্মীদের বেতন জমে মিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা বেড়েছে।
লকডাউনের শুরু থেকেই কড়াতের চাকা থামার সাথে সাথেই থমকে যায় মিলের আয়ের পথ। পূর্বের কয়েকটি অর্ডার সাপ্লাই দিয়ে মাস ২ চালিয়ে নিতে পেরেছিলেন সকলকে সাথে নিয়ে। কিন্তু নতুন করে কোন অর্ডারই আসেনি। আনা হয়নি চেড়াইয়ের জন্য গাছের গুঁড়ি। তবুও দৈনিক মিলের অফিস খুলে বসে থাকেন মালিক শ্রমিক উভয়েই। প্রত্যাশা, যদি মেলে দু একখানা ছোটখাটো অর্ডার।

বৃহস্পতিবার ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড সংলগ্ন দরবার টিম্বার এন্ড স’ মিলের চিত্র ছিল অনেকটা এমনই। ৩ জন শ্রমিক আর মালিকের ভাতিজা বসে অলস সমইয় কাটাচ্ছেন গাছের গুঁড়িতে বসে। প্রতিবেদককে মিলে ঢুকতে দেখেই ভাবলেন এই বুঝি নতুন অর্ডার এলো। তবে গণমাধ্যম কর্মী পরিচয় জেনে দীর্ঘদিনের হতাশা যেন আরও উপচে পড়লো সকলের কন্ঠে। চেড়াই কাজে নিয়োজিত করাত কর্মী শান দিচ্ছিলেন করাতে। উঠে এসে ব্যক্ত করলেন ৪ মাসের দুর্দশার চিত্র।

করাত কর্মী আজহার মিয়া (৪৫) বলেন, গত ৪ মাস ধরে নতুন কোন অর্ডার পাইলাম না। মালিকের হাতেও টাকা নাই। আমরাও চলি কষ্ট কইরা। আল্লাহ চালাইতাছে, কতদিন চালাইবো উনিই জানে। প্রথম কয়েক সাপ্তা (সপ্তাহ) টাকা পয়সা দিছিলো। এখন তো সব আইটকা গেছে। আগে তো কোনদিন টাকা হেরা আটকায় নাই। বিপদে আছে বইলাই দিতে পারতাছেনা। কাম থাকলে তো দিব।
আলাপচারিতায় জানা যায়, করোনার কারনে বেশ কিছু টাকা আটকে আছে গ্রাহকদের কাছে। লকডাউনের পূর্বে যে সকল অর্ডার কাঠ সরবরাহ করা হয়েছিলো সেগুলোর সম্পূর্ন টাকাও পাওয়া সম্ভব হয় নি। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাংক লোন নেয়া এবং ধীরে ধীরে পরিশোধ করা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে থাকলেও সেখানেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। ব্যবসা না থাকলেও শ্রমিকদের বেতন অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে আগে বা পরে। খুব দ্রুতই এর অবস্থা থেকে উত্তরণ না ঘটলে অনেক মালিক বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হবে।

দরবার স’ মিলের দায়িত্বে থাকা অনিতুল ইসলাম অতুল বলেন, আমরা গত ২ মাস ধরে নিয়মিত মিল খুলে বসে আছি। ছোটখাটো ২/১ টি অর্ডার পেলেও আমাদের পরিবারের ৭ দিনের খরচ বহনের জন্য জমানো টাকা ভাঙ্গা লাগতো না। কিন্তু সেটিও হচ্ছে না। আশেপাশের সকল মিলের প্রায় একই অবস্থার শিকার। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের অবস্থাও জানা নেই কারও। কাঠ ব্যবসার এমন দুর্দিন দ্রæতই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা মিল মালিক শ্রমিক উভয়ের।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ