আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কাঁদায় খুনি করোনা

সংবাদচর্চা অনলাইনঃ

ছোট বেলায় ছেলেকে শখে কাঁধে তুলতেন বাবা। হাসি মুখে এ পাড়া ও পাড়া ঘুরতেন। তখন একটু বোঝা মনে হতো না। সেই ছেলেকেই গতকাল কাঁধে নিয়ে খুব ভারী মনে হয়েছে আর চোখে জল এসেছে অবিরাম। তার এমন কান্না দেখে মোটেই বুঝার উপায় নেই মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি একজন বীর সেনা ছিলেন। তবে বাবার আগে সন্তানের চলে যাওয়া কত কষ্টকর তা বুঝতে পেরেছে আশপাশের মানুষজন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নম্বর ওয়ার্ডের মিজমিজি সাহেব পাড়া নিবাসী ইমতিয়াজ শাকিল গতকাল ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি ছিলেন কন্টিন্টোল কুরিয়ার সার্ভিসের এজিএম। তার লাশ দাফন করেছেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও তার টিম। শাকিল আর খোরশেদ পরস্পর বন্ধু ছিলেন।

খোরশেদ তার ফেসবুকে গতকাল স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, “ আমার বন্ধু শাকিল বীর মুক্তিযোদ্ধা পিতার একমাত্র পুত্র। আজ শাকিল করোনায় মারা গেছে।জানাযা শেষে শাকিলের মৃতদেহ যখন কবরস্থানে নিয়ে যাচ্ছি তখন শাকিলের বাবা আমাকে বললেন, বাবা আমি একটু কাঁধে নিব। বললাম চাচা আপনি পারবেন না। তিনি বললেন একমাত্র পুত্র হারানোর শোক বইতে পারলে খাটিয়াও নিতে পারবো। বললাম ঠিক আছে আমার সাথে ধরেন। তিনি খাটিয়ার এক প্রান্ত ধরে হাউমাউ করে কাঁদলেন আর কালেমা পড়লেন। পিতার কাধে পুত্রের লাশ হিমালয়ের চেয়ে ভারী।”

বন্ধুর দাফনের মধ্যে দিয়ে ৮৯ তম দাফন করলেন খোরশেদ টিম।   খোরশেদ জানান, আমার বন্ধু শাকিল এসএসসি ১৯৯০ এর ব্যাচ। আমরা টিম খোরশেদ তার গোসল, কাফন, জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করেছি। এসময় আমাদের সহযোগিতা করেন ২নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলার ইকবাল হোসেন, সমাজসেবক ভেন্ডার ইকবাল হোসেন ও মিজমিজি সেবা সংঘ। আজ আমাদের টিমে ছিলেন হাফেজ শিব্বির আহমেদ, সুমন দেওয়ান, লিটন মিয়া, রাফি, সেলিম মোল্লা ও নাইম।

২৩ জুন শাকিল করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। গতকাল সে মৃত্যু বরণ করে। কাউন্সিলর খোরশেদ জানান, শাকিলরা ১ ভাই ১ বোন। শাকিলের স্ত্রী ও ২ সন্তান রয়েছে। শাকিলের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয় সিটি কলেজে। ও খুব সামাজিক মানুষ। এ করোনার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শাকিল কয়েকজন করোনা উপসর্গ থাকা মানুষকে সেবা দিয়েছিলো। ধারণা করছি সেই থেকেই ও আক্রান্ত হয়।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ