আজ শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

করোনায় বদলে যাচ্ছে পেশা

বিশেষ প্রতিবেদক

ফতুল্লায় একটি টেক্সটাইল সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করে বেশ ভালোই দিন কাটাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ মাকসুদুল আলম। সুদে ঋণ নিয়ে শেষ বয়সে হাত দিয়েছিলেন ছোট একটি বাড়ি তৈরীর কাজে। করোনার লকডাউন শেষে গার্মেন্টসে ফিরে গিয়ে জানতে পারলেন তার চাকুরি আর নেই। তবে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বকেয়া বেতন সহ ৩ মাসের অতিরিক্ত বেতন। তবে দীর্ঘ চাকুরি মেয়াদ শেষে মোটা অংকের যে পেনশন পাবার কথা ছিল তা আর জুটেনি মাকসুদুলের ভাগ্যে। শেষ বয়সে আরামে দিন কাটানোর বদলে তার মাথায় এখন আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা।

প্রায় একই অবস্থা সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার আমেনা আক্তারের। বাড়ীতে বসে সেলাই মেশিনেই কাজ চালিয়ে নিতেন তিনি। নির্মান শ্রমিক স্বামীর সাথে নিজেও অংশ নিতেন সাংসারিক খরচ মেটাবার যুদ্ধে। কিন্তু করোনায় থমকে গেছে পোষাক বানাবার তাড়া। যে কয়েকটা অর্ডার ছিল তারাও আটকে দিয়েছে পাওনা টাকা। বাধ্য হয়ে নিযুক্ত হয়েছেন বাড়িওয়ালার গৃহপরিচারিকার কাজে, বিনিময়ে জুটবে বাড়ি ভাড়ার খরচ। তবে তাতেও কতটা সামাল দিতে পারবেন সংসারের বাজার খরচে তা নিয়েও শঙ্কা রয়েই গেছে।

এমন চিত্র শুধু ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জে সীমাবদ্ধ নয়। সারা নারায়ণগঞ্জের চিত্র প্রায় একই। করোনার প্রাদুর্ভাবে আটকে গেছে কাজ কর্ম। ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে যাওয়ায় মালিকরা ছাঁটাই করছেন শ্রমিকদের। কর্মীরাও চাকুরি হারিয়ে দিশেহারা। কেউ ফিরে গেছেন নিজ গ্রামে আর কেউ পেশা বদল করে মূল্যবৃদ্ধির খরচ সামলানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

চাকরি হারানো মাকসুদুল আলমের ছেলে সোহাগ বলেন, বাবার চাকরির উপর আমাদের ৬ জনের পরিবার। আমার নিজের পড়ালেখার খরচ চলে তার মাধ্যমেই। এখন আমি একবার বাবার ফ্যাক্টরিতে যাই আরেকবার নারায়ণগঞ্জ শ্রম অধিদপ্তরের অফিসে যাই। কোনভাবেই সুরাহা পাচ্ছিনা। বাড়ি তৈরীর জন্য সুদে ঋণ নিয়েও বিপাকে পরেছি আমরা। কিভাবে এসব পরিশোধ করবো তা জানা নেই। সব মিলিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর দিকে যাচ্ছি।

মাকছুদুল ও আমেনা আক্তারের মত কাজ হারানো বেকার তৈরী হয়েছে চতুর্দিকে। পেশা বদলে একেক জন একেক কাজে নেমেছেন। অনেকে আবার বেকার হয়ে বসে আছেন। ত্রাণের তালিকায় নাম না থাকায় সরকারি ত্রাণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এদের ত্রাণের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা।

নারায়ণগঞ্জ জেলা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেন, অজস্র শ্রমিক ও সাধারন পেশাজীবী কাজ হারিয়ে বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। এরা কাজ না পেয়ে নিজেদের পেশা বদলে একেক জন একেক ধরনের কাজে নেমেছেন। অনেকে আবার বেকার অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে অর্থাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। স্থানীয়ভাবে তাদের পাশে না দাঁড়ালে বড় একটি অংশ অপরাধের সাথে জড়িয়ে যেতে পারে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ