আজ শুক্রবার, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এ কান্না থামাবে কে

নিজস্ব সংবাদদাতা

মিহাদ খান নিহাদ সাঁতার জানতো না। তাই নারায়ণগঞ্জ শহরের কোন কলেজে না দিয়ে নবীগঞ্জ কদম রসূল কলেজে ভর্তি করায় বাবা-মা। কখনও একা শীতলক্ষ্যা নদী পার হতে দেয়নি আদরের ধনকে। যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছেন। তবে শেষতক সেই নদীতেই প্রাণ গেলো প্রিয় সন্তানের। গতকাল দিনভর সে কথা বলেই বিলাপ করেছে নিহাদের বাবা-মা। স্কুল পড়–য়া ছোট্ট ভাইটির চেহারায় ফুটে উঠেছে বেদনার ছাপ।

মঙ্গলবার রাত ১১ টায় মিহাদ ও জিসান নামের দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ বন্দর একরামপুর ঘাঁটের শীতলক্ষ্যা নদীতে সারি করে রাখা নৌকার নীচ থেকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে বিকেলে এ ঘাটেই দুই দল কিশোরের মধ্যে ঝগড়া হয়। স্থানীয়রা বলছেন, কিশোর গ্যাংয়ের ধাওয়ায় ৪ জন নৌকা থেকে নদীতে ঝাপ দিলেও তীরে উঠতে পারে ২ জন। মিহাদ ও জিসান সাঁতার না জানায় ডুবে যায়।

বন্দর খান বাড়ির নাজিম উদ্দিন খানের দুই ছেলে মিহাদ ও ফাহাদ। দুই ছেলেই সাঁতার জানে না। তাই তাদের নদী পারাপারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতেন বাবা-মা। নদী পার হতে হবে বলে মিহাদকে নারায়ণগঞ্জ শহরের কোন কলেজে ভর্তি হতে দেননি। তবে সেই নদীতেই জীবনাবসান হলো মিহাদের।

পরিবারের সদস্যরা জানান, মিহাদের খালাতো ভাই মিহাদকে সাবদি ঘুরতে নিবে বলে তার বাবা-মাকে জানিয়েছিলো। সাবদি বন্দরে অবস্থিত হওয়ায় কোন আপত্তি করেননি তারা। ঘটনার সময়ে একরামপুর ঘাটে দুই দল কিশোর গ্যাংয়ের ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে ধাওয়া খেয়ে অন্যদের সাথে নৌকায় উঠে মিহাদ ও জিসান। নৌকায় এসে একজনকে আঘাত করলে ভয়ে লাফ দেয় তারা। এরপর রাত সোয়া ১১টার দিকে এ দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। যদিও জিসানের বাবা কাজিম উদ্দিন মামলার এজাহারে বলেছেন, জমি সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকান্ড হয়েছে। তার এজাহারের এ বিষয়টি উল্লেখ করে পুলিশ কিশোর গ্যাং এর বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা কিশোর গ্যাংয়ের কথা বলেছেন গণমাধ্যমকর্মীদের।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ।

এদিকে সন্তান হারিয়ে পাগল প্রায় মিহাদ ও জিসানের পরিবার। তাদের কান্না থামানো যাচ্ছে না। স্বজন, এলাকাবাসী শত শান্তনা দিলেও হাউ মাউ কাঁদছে তারা। সচেতন মহলের মতে, এ কান্না থামানোর কেউ নেই। যতক্ষন পর্যন্ত সমাজ থেকে অপরাধ বিদায় না নেবে ততক্ষন পর্যন্ত ভয় থেকে যাবে, আবার কাকে জানি কাঁদতে হয়।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ