আজ শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এমপির ফ্রি, দিদারের ২ টাকা

নাদিম হাসান

বন্দর ১নম্বর খেয়াঘাট দিয়ে নদী পারাপারের জন্য ফ্রি ট্রলার দু’টি ১৮ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। প্রতি যাত্রির কাছ থেকে ২ টাকা করে নিয়ে তবেই ট্রলারে উঠতে দিচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। ঘাটের দায়িত্বে থাকা বিএনপি নেতা দিদার খন্দকার জানান, সেলিম ওসমান এমপির নির্দেশেই ফ্রি ট্রলার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ইজারাদারদের নানা রকম অনিয়মের কারনে প্রায় ৪ বছর আগে এ ঘাটে টোল ফ্রি করেছিলেন সাংসদ।
জানাযায়, সেন্ট্রাল ঘাট তথা বন্দর খেয়া ঘাট দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ পারাপার হয়। আগে প্রতি বছর ইজারা দেয়া হতো। ভুক্তভোগীরা জানান, ইজারাদাররা নিজেদের জমিদার মনে করতো আর যাত্রিদের ভাবতো প্রজা। তাদের দেয়া তথ্য মতে, তখন ইজারাদার পারাপার হওয়ার জন্য ঘাটে জমা নিতো ৫০ পয়সা। কোন যাত্রি ১ টাকার নোট বা কয়েন দিলে ইজারাদারের লোকেরা পয়সা না দিয়ে নিজেদের ছাপানো কাগজ দিতো। সেই কাগজে ৫০ পয়সা লেখা থাকতো।

এছাড়া মুরগি, হাঁস কিংবা ছোট কোন প্যাকেট নিয়ে নদী পারাপারের সময়ে ওজন ছাড়াই ইচ্ছে মতো টাকা আদায় করতো তারা। কেউ প্রতিবাদ করলে যাত্রিদের শায়েস্তা করতো গুন্ডা সেজে। নিয়মিত এ ঘাট দিয়ে পারাপার হন এমন অনেকে জানান, যাত্রিদের পয়সায় ইজারাদারের ভাত ঝুটলেও কখনও তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতো না ঘাটে বসা কর্মচারীরা। বরং তাদের বসার জায়গা উঁচু করে মাচা পেতে তারা বুঝিয়ে দিতো, তারা জমিদার আর যাত্রিরা তাদের প্রজা। এতসব অভিযোগের মাঝে ২০১৪ সালের ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে উপ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে সেলিম ওসমান এমপি হওয়ার পর একটি ভালো উদ্যোগ নেন। তিনি ঘাটের ইজারাদার প্রথা তুলে নিয়ে নিজের দায়িত্বে টোল ফ্রি করে দেন। পারাপারের জন্য ২টি ফ্রি ট্রলার রাখার ব্যবস্থা করেন। ফ্রি ট্রলারের পাশাপাশি ১ টাকা দিয়ে নদী পারাপারের জন্য ৪টি ট্রলার রাখা হয়। এতে করে যার খুশী ফ্রি যাবে আবার যার ইচ্ছা টাকা দিয়ে পার হবে। পরবর্তীতে ১ টাকার ট্রলারে আরও ১ টাকা বাড়িয়ে ২ টাকা করা হয়।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এক পর্যায়ে জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হলে সব ধরনের ট্রলার বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে লকডাউন তুলে নেয়ার পরও ফ্রি ট্রলার ও টাকা দিয়ে পারাপার হওয়ার ট্রলার চালু হয়।

রবিউল নামের এক হোসিয়ারী শ্রমিক জানান, ঈদুল আযহার পরও দুই রকম ট্রলারই চালু ছিলো। গত ১৮ দিন যাবত ফ্রি ট্রলার বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র টাকার ট্রলার চালু রাখা হয়েছে।
এরপরও নানা অনিয়মের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে সেলিম ওসমান এমপি নিজে নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল ঘাটে উপস্থিত হয়ে এই ঘাটে ১০ টি ট্রলার চলবে। এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টা ৫টি ট্রলার ফ্রি চলবে এবং অন্য ৫টি ভাড়ায় চলবে। ভাড়া ২ টাকার বেশি নেয়া যাবে না। এছাড়া নৌকার ভাড়া ৩ টাকা করে নিতে হবে। যদি কেউ এর ব্যতিক্রম করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল খেয়া ঘাট দিয়ে দিয়ে পারাপার হয় লাখো মানুষ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকে প্রচুর মানুষের আনাগোনা। মানুষের কষ্ট লাঘব করতে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান দু’টি ফ্রি ট্রলার চালানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে ঘাট কর্তৃপক্ষ গত ২৮ জুন থেকে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে এই ফ্রি সার্ভিসটি বন্ধ করে দেয়। তাছাড়া টাকায় চালিত ট্রলার ২৪ ঘন্টা চলার কথা থাকলেও তা সকাল আট টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত চলার পর তা বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান যাত্রিরা। তখন মানুষ ভিড় করে নৌকায় জন প্রতি পাঁচ টাকা করে নদী পার হয়। সুযোগ বুঝে মাঝি ৩০ জন করে যাত্রী তুলে ।

এ প্রসঙ্গে বন্দর ঘাটের দায়িত্বরত বিএনপির নেতা দিদারুল ইসলাম দিদার জানান, বন্দর ঘাটের ফ্রি ট্রলার বন্ধ করেছেন এমপি সেলিম ওসমান। এ ঘাটে কোন প্রকার ব্যবসা হচ্ছে কি না তা তিনিই বলতে পারবেন। এমপির পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত অনির্দিষ্ট কালের জন্য এ ফ্রি সার্ভিস বন্ধ থাকবে বলে জানান দিদার।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ