আজ শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এখনও স্প্লিন্টারগুলো অসহনীয় যন্ত্রনা দেয়

সংবাদচর্চা রিপোর্ট: দেড় দশক আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। সেই গ্রেনেড হামলার সাথে নারায়ণগঞ্জের একজন জড়িত ছিলেন, তিনি হলেন র‌্যাবের হাতে ক্রসফায়ারে নিহত যুবদল নেতা মমিন উল্লাহ ডেভিডের ছোট ভাই শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল। শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী। সে কারাগারে রয়েছে।
সেদিনের হামলায় অন্যদের সঙ্গে মারা যান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার গাবতলী এলাকার রতন সিকদার। মারাত্বকভাবে আহত হন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ ২ (আড়াইহাজার) সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু। নেত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে গ্রেনেটের আঘাতে তার শরীর ক্ষতক্ষিত হয়ে যায়। ওই সময় প্রথমে অজ্ঞান অবস্থায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে নজরুল ইসলাম বাবুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে সিএমএইচ এ নেয়া হয়। সেখান থেকে সিকদার মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে অপারেশন করে তার কয়েকটি প্লিন্টার বের করা সম্ভব হলেও অসংখ্য স্প্লিন্টার শরীরে রয়ে যায়। এখনও শরীরে থাকা স্প্লিন্টারগুলো মাঝে মাঝে অসহনীয় যন্ত্রনা দেয়। ২০১৯ সালের ২১ শে আগস্ট এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু।
ঐ স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ভয়াবহ ২১ আগস্ট রাজনৈতিক ইতিহাসের জঘন্য ও কলঙ্কিত একটি দিন। স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামাত চক্র ওইদিন হায়নার মত গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ষড়যন্ত্র, লোভ-লালসা আর পেছন দরজা দিয়ে ক্ষমতা যাওয়ার জন্য ওই দিন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার ঘৃণ্য মতলব হাসিল করার পাঁয়তারা করে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে বিএনপি জামাত। তৎকালীন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি বক্তব্য প্রদানের শেষে তাঁর হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগুচ্ছিলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। এসময় শুরু হলো নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগল একের পর এক গ্রেনেড।
এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন: আইভি রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব:) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা). মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া।
মারাত্মক আহতরা হলেন-
শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ হানিফ, সম্প্রতি প্রয়াত এডভোকেট সাহারা খাতুন, এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাছিম, আওলাদ হোসেন, মাহবুবা পারভীন, এডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নজরুল ইসলাম বাবু, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক প্রমুখ।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন নেতা সেদিন অল্পের জন্য এই ভয়াবহ হামলা থেকে বেঁচে গেলেও মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বেগম আইভি রহমান ও অপর ২৪ জন এতে নিহত হন। এছাড়া এই হামলায় আরো ৪শ’ জন আহত হন। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।

তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি। বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হয়েছে। আপিল শেষ হয়নি।
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি যারা:
আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড (ফাঁসি) পেয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আবদুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জ্বল রতন, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন:
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হরকাতুল জিহাদ (হুজি) সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ১১ আসামি হলেন
পুলিশের সাবেক তিন আইজি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, ডিজিএফআইর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, সাবেক উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
অভিযোগ রয়েছে, মূলত আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে বিএনপি-জামায়াত তথা চার দলীয় জোট সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নৃশংসতম গ্রেনেড হামলা চালায়।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ