আজ শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এক দেশে দুই সংসদ ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা!

মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান : এক দেশে দুই সংসদ ও দুই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা এখন জনগণের সামনে। শ্রীলঙ্কায় এক দেশে দুই প্রধানমন্ত্রী। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার পরেও রাষ্ট্রপতি সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমা সিংকে বরখাস্ত করে প্রতিপক্ষ রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। রাজনৈতিক কারণে এই সমস্যাটি সৃষ্টি হয়নি। সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক কারণে।

রাজাপাকসের পক্ষে চীনের অবস্থান যেমন প্রকাশ্যে করা হচ্ছে তেমনি বিক্রমা সিং-এর পক্ষে ভারতও প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছে মূলত শ্রীলংকার মেগা প্রজেক্টগুলো তাদের স্ব স্ব দেশের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে। এই সমস্যার সমাধান এখন আর শ্রীলঙ্কার নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের হাতে নেই, যেহেতু তিনি অবস্থান পরিবর্তন করে চীনের পক্ষে চলে গেছেন। এই সমস্যাটি এখন ভারত ও চীনের হাতে। অর্থাৎ দেশের জনগণের হাতে এখন আর রাষ্ট্র নেই। শ্রীলঙ্কায় সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশও এক সঙ্গে দুই প্রধানমন্ত্রী বা অন্তত একসঙ্গে দুই সংসদ এমন একটি অবস্থার দিকে যাচ্ছে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ সালে। হয়তো অনেকে যুক্তি দেখাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেই কেউ সংসদ সদস্য হবেন না যতোক্ষণ পর্যন্ত না তারা শপথ নিবেন।

মানলাম তারা সংসদ সদস্য নন কিন্তু নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে তো সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়ে এবং নব প্রতিষ্ঠিত সংসদের সদস্যগণ বিদ্যমান সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার পরে শপথ নিবে। কাজেই তখন দুটি সংসদ যে একসঙ্গে তাতে জনমনে কোনো সন্দে নেই। এক সঙ্গে দুইটি সংসদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইসি সরকারের কথামতো ও সুবিধার্থে ২৩ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দিয়েছে। এখন নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে আরো ৩৪ দিন থেকে যাবে যখন দেশে দুইটি সংসদ সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যমান থাকবেন।

আল্লাহ না করুক যদি অতি উৎসাহী ইসি সচিব ও বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং জনগণের ওপর পুলিশের লাগামহীন অত্যাচারে জনগণ বিগড়ে যাওয়ার কারণে বর্তমান সরকারের পা পিছলে যায় তাহলে বাংলাদেশে শুধু একসঙ্গে দুই সংসদ নয় এক সঙ্গে দুই প্রধানমন্ত্রীও হওয়ার মতো অবস্থার মুখোমুখি হবে! তখন দেশের কি অবস্থা হবে তা ভাবতেও জনগণ ভীত হয়ে যাচ্ছে! প্রধানমন্ত্রী এবং শাসকদল তখন কি নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিবেন নাকি তখন নতুন কোনো খেলা শুরু হয়ে যাবে তা জনমনে এখন বিরাট প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

যেহেতু শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত এবং চীন ও ভারতের দ্বিমুখি অবস্থানের কারণে জনগণ সেখানে নীরব। কিন্তু আমাদের অবস্থাতো ভিন্ন। এখানে শুধু ভারত ও চীন নয়, তাবৎ বিশ্বশক্তি সরকারের সঙ্গে। জনগণ ছাড়া দেশের প্রশাসন, আমলা, পুলিশ, মিলিটারি, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, মিডিয়া সবাই বর্তমান সরকারের পক্ষে।

বাংলাদেশ এখন লুটেরাদের ভাগাড়। যদি আগামী নির্বাচনে কোনো দৈব দুর্বিপাকে জনগণ তাদের পছন্দমতো কাউকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে সুযোগ পায় তাহলেও রাষ্ট্রপতি উনার নিয়োগদাতাদেরকে বাদ দিয়ে জনগণের নির্বাচিত নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা রাখেন এমন কোনো আলামত জনগণের সামনে দৃশ্যমান নয়।

তবে ইসি যদি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় সংসদ বিলুপ্ত করে অথবা নিদেন পক্ষে ২-৩ দিন হাত রেখে জানুয়ারি ২০১৯ সনের শেষ সপ্তাহে বা বর্তমান তফসিল ৪ বা ৫ সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়ে ২০ বা ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ সালে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে তাহলে অবশ্যই ইসি এবং সরকারকে বিশ্বাস করা যায় যে ইসি বা সরকারের কোনো কুমতলব নেই।

বল এখন সরকারের কোর্টে। হয়তো সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে চলমান তফসিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া সরকারের মনমতো একটি পথই খোলা আছে, তা হলো চুপ করে ঘরে বসে থাকা। কিন্তু সেটি রাজনৈতিকভাবে কতোটুকু বাস্তবসম্মত হবে তা শুধু সময়ই বলতে পারবে। তবে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ঘরের বাইরে আসতে ঠেলে দিবেন না বলে জনগণের প্রত্যাশা। জনগণ গণতন্ত্রের জয় দেখতে চায়। ক্ষমতালোভী নয় জনবান্ধব একজন প্রধানমন্ত্রী জাতির সামনে উঠে আসবে যা আজকে জনগণের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা। লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ