আজ বুধবার, ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

একাট্টা হয়ে বছরে লক্ষ মানুষকে কামড় দেয়!

বিল্লাল আহমেদ
জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের হিসাবে কুকুরের আক্রমণের শিকার মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং একাধিক কুকুর একাট্টা হয়ে কামরে দিচ্ছে মানুষকে। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে লক্ষাধিক মানুষ কুকুর কামরে দেয়ার কারনে জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে সেবা নিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে কুকুরের উপদ্রব এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে শিশু, বৃদ্ধ, যুবক ও নারীরা ভয়ে আতংকে চলাচল করছে। দিনের আলোতেই একাট্টা হয়ে কামরে দেওয়ার অপেক্ষা থাকে কুকুরগুলো। রাতের গভীরতায় আতংক আরও বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের কাছে কোন ভাবেই হাড় মানছে না বেওয়ারিশ কুকুরের দলগুলো। নগরবাসী সাড়াদিনের ক্লান্তিকর পরিশ্রমের সমাপ্তির পর বাড়ী ফেরার পথে বাধা হয়ে দাড়ায় বেওয়ারিশ কুকুরগুলো। নগরীর প্রত্যেক এলাকায় এবং বিভিন্ন অলি-গলিতে একাট্টা হয়ে মানুষকে কামরে দেওয়ার অপেক্ষায় থাকে তারা।

কর্মস্থল হতে বাড়ীফেরা মানুষগুলো প্রতিনিয়ত রাস্তার অলিগলিতে একাট্টা হয়ে থাকা কুকুর গুলোর সাথে যুদ্ধ করে ঘরে ফিরে। এছাড়াও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান পরিচালনা করার লক্ষে এলাকা গুলোতে প্রবেশ করার সাথে সাথেই অপরাধীদের চেয়ে কুকুর গুলো যেন বেশি আতংকিত হয়ে পড়ে। কুকুরের শব্দে চিহ্নিত অপরাধীরাও বুঝে যায় এলাকায় পুলিশ প্রবেশ করেছে।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে একটি বেসরকারি সংস্থা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টিকাদান কর্মসূচী পালন করে। এই কর্মসূচি ২০১৯ সালেও পালন করা হবে। তবে নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজ মনে করে শুধু মাত্র বছরে এক, দুই বার কুকুরকে টিকা দিয়ে এই অসংখ্য কুকুরকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়। তবে এ জন্য দরকার স্থায়ী পরিকল্পনা।

দৈনিক সংবাদচর্চার বিশেষ অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জ ১’শ ৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে ৫হাজার ৭৫২জন। এই মানুষগুলোকে বিভিন্ন পর্যায়ে ১১,২১৬ টি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। যার মধ্যে ৩,২৪০টি ভ্যাকসিন কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীরা বাহির থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।

অপর দিকে ২০১৮ সালে আক্রান্ত সংখ্যা ২০১৭ সালকে অতিক্রম করে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসে ৫৯৪২ জন। ২০১৮ সালে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ৫৯৪২ জনকে ২১,৬৭৩টি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। যার মধ্যে ৩,০২৬ টি ভ্যাকসিন আক্রান্ত রোগীরা বাহির থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।

উল্লেখ্য যে, কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীকে বিভিন্ন পর্যায়ে ৪টি করে ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম থাকলেও অজ্ঞাত কারনে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের ১১,৬৯৪ জন রোগীকে ৪৬,৭৭৬ টি ভ্যাকসিনের বিপরীতে ৩২,৮৮৯ টি ভ্যাকসিন দেওয়া হয় তথা ১৩,৮৮৭টি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি।

এছাড়া কুকুরের নিয়ন্ত্রন করার বিষয়ে একি কথা বলছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও নারায়ণগঞ্জ প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। অস্থায়ী ভাবে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় কুকুরকে টিকাদান কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। তবে কুকুরের সংখ্যা অনুযায়ী বা কামরের তুলনায় কর্মসূচি স্বল্প পরিশরেই রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে উচ্চ আদালত কুকুর নিধনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারনে বর্তমানে বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের কাজ বন্ধ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুকুর মারা বন্ধ রেখে টিকাদান কর্মসূচি ও বন্ধ্যাকরণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। কুকুরের টিকাদান কর্মসূচি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।