আজ শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আ.লীগের ভবিষ্যৎ কোন দিকে!

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র ক’জন নেতা। তারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও এই দলটি সাংগঠনিকভাবে চরমভাবে মার খাবে। এ নিয়ে তারা উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।

টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। তারপরও নারায়ণগঞ্জে এ দলে নেতৃত্বের ব্যর্থতায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা। জেলার কয়েকটি স্থানে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা প্রকট। বিশেষ করে সদর, বন্দর এবং সোনারগাঁ আওয়ামী লীগে চরম বিশৃঙ্খলা, হতাশা বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গেল কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বন্দর, সদর এবং সোনারগাঁ উপজেলায় দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠে। এসব নির্বাচনে পোড় খাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশ কাটিয়ে বিএনপি নেতা এবং আওয়ামী লীগের নন- এমন ব্যক্তিদের হাতেও তুলে দেওয়া হয় নৌকা প্রতীক। বিশেষ পরিবারের কারণে এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি বলে মনে করেন দলটির সিনিয়র নেতারা।

তারা বলেন, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন আওয়ামী লীগের জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শিকদার মোহাম্মদ গোলাম রসূল। তাকে বঞ্চিত করে নৌকা দেওয়া হয় ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সেক্রেটারি মনিরুল ইসলাম সেন্টুর হাতে। গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিশেষ ওই পরিবারের অনুগত ফজর আলীকে নির্বাচিত করানোর জন্য ডুবানো হয় নৌকাকে। একই অবস্থা দেখা বন্দর উপজেলার বন্দর, কলাগাছিয়া, মুছাপুর ও ধামগড়েও।

সদর উপজেলার আলীরটেকে নৌকা প্রতীক তুলে দেওয়া হয় জাকির হোসেনের হাতে। যিনি কখনই আওয়ামী লীগ করতেন না। তার বিরুদ্ধে জামায়াত, বিএনপি ও হেফাজতের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগও রয়েছে। সেই জাকির হোসেন নির্বাচিত হওয়ার পর বলেছিলেন, ‘নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন না করলে আরও বেশি ভোট পেতাম।’ এ ঘটনায় তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছিল।

অন্যদিকে সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও বিশেষ ওই পরিবারের কল্যাণে দলীয় মনোনয়ন পান মাহবুবুর রহমান বাবুল ওরফে লায়ন বাবুল। তিনি ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতি সেভাবে না করলেও পরিবারের বশ্যতায় উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ পেয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হয়ে দাম্ভিকতার সাথে বলেছেন, ‘আমি বারদীর ম্যাজিস্ট্রেট। এখানে প্রধানমন্ত্রী আসলেও আমার অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।’ এমন বক্তব্যের কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তাকে কারণ দর্শাতে নোটিশও দেওয়া হয়।

সর্বশেষ সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্য ও সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের প্রথম সহসভাপতি সাজেদ আলী মোক্তারের ছেলে আরিফ মাসুদ বাবু। এখানে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় সোহাগ রনিকে। তিনি সদ্য বিলুপ্ত জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং সংসদ সদস্য শামীম ওসমান অনুসারি ও তার ছেলের ঘনিষ্ঠজন। এ নিয়ে শুধু সোনারগাঁই নয়, পুরো জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় রাগে ক্ষোভে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন আরিফ মাসুদ বাবু। তিনি স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করার ঘোষণাও দিয়েছেন।

তারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই চাইলেও সব কাজ করতে পারছে না। তাকে বাধার মুখে পরতে হচ্ছে। গত ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের কয়েকটি কাগজে সই করেনি আব্দুল হাই। সেক্রেটারি আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল ওসমান পরিবারের হয়ে কাজ করে। তারা সভাপতি সেক্রেটারি হলেও বন্দর, সদর ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক ওসমান পরিবার। তাদের নির্দেশে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে থাকেন সেক্রেটারি বাদল। এ নিয়ে সভাপতির সঙ্গে তার দূরত্বও রয়েছে।

তৃণমূলের ভাষ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করার পক্ষে। ওসমান পরিবার ও সেক্রেটারি বাদলের কারণে কিছু ক্ষেত্রে তার কিছু করার থাকে না। যার কারণে বিগত সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বেশ কটি তালিকায় আব্দুল হাই বিরোধীতা করলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। বাদলের একক স্বাক্ষরে বেশ কজন মনোনয়ন পেয়েছেন। এ ছাড়াও জেলার অন্তুর্গত আড়াইহাজার এবং রূপগঞ্জ ব্যাতিত অন্য তিনটি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তারপরও জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ কাজ করে যাচ্ছে। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের আগে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে পারে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সানাউল্লাহ বলেন, “প্রতিটি দলের মূল ভিত্তিই হচ্ছে সাংগঠনিক অবকাঠামো। সাংগঠনিকভাবে যদি একটি দল শক্তিশালী হতে না পারে, তাহলে দলের মধ্যে ঐক্য তৈরি হয় না। আর ঐকবব্ধ না থাকলে, সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক।”
তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে প্রকাশ্য গ্রুপিং নেই। তবে পর্দার আড়ালে আছে। যার কারণে বিএনপি নেতারাও নৌকা পায়। বিষয়গুলো কেন্দ্র জানে। কেন্দ্রকে এসব গুরুত্ব দিতে হবে। তৃণমূল কি চায় সে বিষয়টিও কেন্দ্রকে অনুধাবন করতে হবে। এগুলো সবই কেন্দ্রের হাতে।”

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “নারায়ণগঞ্জ যা হচ্ছে তা কেন্দ্র পুরোপুরিই অবগত। এখানে কারা নৌকা ডুবাচ্ছেন, কারা বিএনপি থেকে লোক এনে নৌকা তুলে দিচ্ছেন তা কেন্দ্র অবগত রয়েছে। শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানরাই এসব করছে।”
তিনি আরও বলেন, “পোড় খাওয়া নেতারাও হাইব্রিডদের কারণে কোণঠাসা হচ্ছে। এমন চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনেতো প্রভাব পড়তেই পারে। বিষয়গুলোকে গুরুত্বসহকারে কেন্দ্রের দেখা উচিৎ।”

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ