আজ শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আলোচনায় নারায়ণগঞ্জ; বিমান ছিনতাইয়ের পর বালিশ দুর্নীতি!

সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাত
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ের ছেলে পলাশের বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার পর বিশ্বব্যাপি সমালোচনার ঝড় বয়েছিলো নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে। সেই সমালোচনার রেশ না কাটতেই আবারো এক ঘটনায় ইতিমধ্যে পুরো দেশব্যাপি তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য নির্মিত ভবনে আসবাবপত্র কেনা ও তা ফ্ল্যাটে উঠানোর খরচ নিয়ে সারা দেশে বইছে সমালোচনার তীব্র ঝড়। শুধু দেশব্যাপি নয় আলোচনা হচ্ছে বিশ্ব মিডিয়াতেও। অবশেষে খোজঁ নিয়ে জানা যায়, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বালিশ দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত প্রকৌশলী মাসুদুল আলম নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের সন্তান।

দেশে সংঘটিত যত আলোচিত ঘটনাগুলো ঘটে থাকে সেই ঘটনাগুলোর সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত নারায়ণগঞ্জ। আলোচিত সাত হত্যা, পাচঁ হত্যা, তিন হত্যা, জঙ্গী আস্তানার সন্ধ্যান, বিমান ছিনতাই ও সর্বশেষ বালিশ দুর্নীতি। এছাড়াও আরও অসংখ্য ঘটনায় বারবার সমালোচনা হয়েছে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলাকে নিয়ে। সকল সমস্যার নৈপথ্যে যেনো নারায়ণগঞ্জ। সাত হত্যা মামলার প্রধান আসামী নরঘাতক নূর হোসেন থেকে শুরু করে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বালিশ দুর্নীতির সাথে জড়িত মাসুদুল আলমও এই নারায়ণগঞ্জের সন্তান।

জানা যায়, মাসুদুল আলমের বাবা সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২১০ মেগাওয়াটের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মৃত আব্দুল খালেক। তিনি চাকরীর সুবাদে সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার হাউজে দীর্ঘকাল বসবাস করেছেন।

আরও জানা যায়, আবদুল খালেকের বড় সন্তান মাসুদুল আলম। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে এসএসসি পাশ করেন। পরে ঢাকা কলেজে পড়াশুনা করেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী লাভ করেন। প্রথমে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করার পর গনপূর্তমন্ত্রনালয়ে প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সরকারের মেগা উন্নয়ণ প্রকল্প রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে এই ন্যাক্কার জনক দুর্নীতির ঘটনায় জড়িয়ে পরেন তিনি।

সচেতন মহলের মতে, নরঘাতক নূর হোসেন থেকে শুরু করে মাসুদুল আলম পর্যন্ত সকলেই নারায়ণগঞ্জকে কলঙ্কিত করেছে, করেছে বিতর্কিত। এদের কারণেই আজ পুরো দেশব্যাপি নারায়নগঞ্জ জেলাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।

জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী জানা যায়, বালিশ দুর্নীতির ওই ভবনের জন্য এক হাজার ৩২০টি বালিশ কেনা হয়েছে। প্রতিটির মূল্য দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর সেই প্রতিটি বালিশ নিচ থেকে ভবনের ওপরে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা!

আরও জানা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় মূল প্রকল্প এলাকার বাইরে হচ্ছে গ্রিন সিটি আবাসন পল্লী। সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটির কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য ১১টি ২০ তলা ও ৮টি ১৬ তলা ভবন করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে ২০ তলা ৮টি ভবন ও ১৬ তলা একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এই ৯টি ভবনে তৈরি হয়েছে ৯৬৬টি ফ্ল্যাট। সেই ৯৬৬টি ফ্ল্যাটের জন্য আসবাবপত্র কিনেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে ২০ তলা একটি ভবনের ১১০টি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র কেনা ও তা ভবনে ওঠাতে সব মিলে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৫ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ২৯২ টাকা।

ওই ১১০টি ফ্ল্যাটের জন্য কেনা টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ও মাইক্রোওয়েভ কেনা হয়েছে। সেসব আসবাবের ক্রয়মূল্য ও সেগুলোকে ফ্ল্যাটে তুলতে অস্বাভাবিক ব্যয় দেখানো হয়েছে।

এ ঘটনায় ১৯ মে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে বিশেষ তদন্ত দল টিম পাঠানোর কথা বলেছে। এ ব্যাপারে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই প্রত্যাহার হলেন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম।

এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে মাসুদুল আলমকে দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকা অফিস থেকে মুঠোফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। যার ফলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

নগরবাসীর মতে, নারায়ণগঞ্জের আপামর জনসাধারণ এ বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য আলোচিত ঘটনার পর সারা দেশ ও বিশ্বের মধ্যে নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া করতে দেখা গেছে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে না আসতেই বালিশ দুর্নীতির ঘটনা। তাও আবার ঘটনা ঘটিয়েছে নারায়ণগঞ্জের সন্তান। প্রশাসনের উচিৎ এ বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীকে চিহ্নিত করা এবং এ ঘটনার সাথে জড়িতকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ