আজ শুক্রবার, ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আ’লীগে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ তবুও বিভাজন

আ’লীগে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ

আ’লীগে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ

নিজস্ব প্রতিবেক:
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেই দিয়েছেন সরকারি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। যাদের পদ ছিল না তাদের পদ দিয়েছেন। যাদের জনপ্রতিনিধি করার প্রয়োজন ছিল তাদেরকেও করা হয়েছে জনপ্রতিনিধি। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রনও একজন বা কোন বিশেষ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রনে নেই। এখানকার রাজনীতি ও প্রভাব এখন বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। তবুও ক্ষমতাসীন দলটির নেতাদের মধ্যে রয়েছে অনৈক্য বিভাজন। আর মাত্র কয়েক মাস পর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকলেও আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে ঐক্য দেখা যাচ্ছেনা। ক্রমশই যেনো বিভাজনে জড়িয়ে পড়েছে আওয়ামীলীগ নেতারা। সঙ্গে মহাজোটের প্রধান শরীক দল জাতীয় পার্টির এমপিদের সঙ্গেও বিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন আওয়ামীলীগ নেতারা।

এখানে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতি ও সরকারের দপ্তরে প্রতিষ্ঠা নিয়ে একতরফা ক্ষমতা কুক্ষিগত নেই। ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রনও। সেই সঙ্গে সরকারি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অধীনে দপ্তরগুলোতে বিভিন্ন বলয় থেকেই নেতাদের প্রতিষ্ঠিত করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগ কমিটি ও জেলা আওয়ামীলীগ কমিটি
কারো একক নিয়ন্ত্রনে বা কর্তৃত্বে গঠন করা হয়নি। একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ কারো একক নিয়ন্ত্রনে রাখা হয়নি। এমনকি আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রনও কোন বলয়ে এককভাবে করা হয়নি। এভাবে আওয়ামীলীগের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে যাতে সকল বলয়ের নেতাকর্মীরা মুল্যায়িত হয়।

জানাগেছে, বছর দুয়েক আগে মহানগর আওয়ামীলীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেখানে সভাপতি করা হয় দক্ষিণ মেরু থেকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় উত্তর মেরু থেকে। সভাপতি করা হয়েছিল আনোয়ার হোসেনকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে। একই সঙ্গে কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে ৯ জন ও যুগ্ম সম্পাদক পদে তিনজন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তিনজনকে অধিষ্ট করা হয়েছে যেখানে বিভিন্ন বলয় থেকে নেতাদের রাখা হয়। ফলে মহানগর আওয়ামীলীগের কমিটি দক্ষিণ মেরু কিংবা উত্তর মেরুর কারো একক নিয়ন্ত্রনে করা হয়নি। যদিও খোকন সাহা এখন কোন মেরুতেই নেই। তিনি এককভাবে রাজনীতি করছেন যেখানে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে।

একইভাবে মহানগর কমিটির পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ। যা বছর খানিক আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও গঠন করা হয়। এ কমিটিতে সভাপতি করা হয় আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় অ্যাডভোকেট আবু
হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলকে। একই কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়েছে ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভীকে। এর মধ্যে আইভী দক্ষিণ মেরুর রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করছেন। আর শহীদ বাদল দক্ষিণ মেরুর রাজনীতিতে জরিত থাকলেও তার ভুমিকা এখন রহস্যজনক। এর আগে তিনি প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের নিয়ন্ত্রনে রাজনীতি করেছিলেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও বিভিন্ন বলয় থেকে নেতাদের পদে রাখা হয়। আর সভাপতি আবদুল হাই মুলত নিজেই একটি বলয় যার সঙ্গে আওয়ামীলীগের সবার সাথেই সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে এ কারনে উত্তর মেরুর নেতারা আবদুল হাইয়ের প্রতি অনেকটা ক্ষুব্ধও রয়েছেন। যদিও বর্তমানে সেদিকেও তার সুসম্পর্ক দেখা যাচ্ছে। আব্দুল হাই এর আগে জেলা পরিষদের প্রশাসক ছিলেন।

অন্যদিকে একই অবস্থা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও। জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা আবদুল হাইকে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি করায় তাকে এ দপ্তরের চেয়ারম্যান পদে সমর্থন দেয়নি আওয়ামীলীগ। এখানে সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশি আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন করেছিল আওয়ামীলীগ। যদিও সিটি নির্বাচনে উত্তর বলয়ের আওয়ামীলীগ নেতারা চেয়েছিল আনোয়ার হোসেনকে মেয়র পদে। আর জেলা পরিষদে চেয়েছিল চন্দন শীলকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী। চন্দন শীল উত্তর মেরুর রাজনীতিতে যিনি মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। আর আনোয়ার হোসেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি যিনি বর্তমানে কোন মেরুতেই নেই।

ওই সময় তিনি উত্তর মেরুর রাজনীতিতে থাকলেও কিছুদিন আগেও দক্ষিণ মেরু মেয়রের সঙ্গে ছিলেন। আনোয়ার হোসেনকে করা হয় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। কিন্তু শেষতক সবকিছু ঘুরিয়ে দিয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। নারায়ণগঞ্জের নেতৃত্ব কোন একটি বলয়ে সীমাবদ্ধ নেই। নেতৃত্ব যেমন ছড়ানো হয়েছে। তেমনি দপ্তরগুলোর নিয়ন্ত্রনে বা প্রার্থীতায়ও নেতৃত্ব এক বলয়ে নেই। এভাবে সকল বলয়ের মাঝে আওয়ামীলীগের কমিটির পদ পদবী ও সরকারি দপ্তরগুলোতে দলের নেতাদের প্রতিষ্ঠিত করে সুষম বন্টন করেছেন যাতে দলের নেতাকর্মীরা মুল্যায়িত হয়। সকল নেতাকর্মীদের মুল্যায়ন করা হলেও সরকারি দলের চেয়ারের দায়িত্বে থাকা নেতারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেননি। সরকারি দলের জনপ্রতিনিধিরা বারবার এক টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েও ব্যর্থ হচ্ছেন। এমনটাই থাকবে নাকি ঐক্যবদ্ধ হবে তা দেখতে হলে আরো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে নেতাকর্মীদের।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ