আজ শনিবার, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আ’লীগের গলার কাটা জাপা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে (নারায়ণগঞ্জ-৩ ও নারায়ণগঞ্জ-৫) এই দুই আসন এখন আওয়ামীলীগলীগের প্রার্থীদের গলার কাটা এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা)। এদিকে একাদশ নির্বাচনে বিভিন্ন সভা সমাবেশে ইতিমধ্যে আওয়ামীলীগ ও জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচন করবে এমনটাও ঘোষণা দিয়ে আসছেন। জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের এমন ঘোষনার পর থেকে সব হিসাব-নিকাশ কষে এখন কপালে ভাঁজ উঠেছে লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘নির্বাচনী কৌশল হিসেবে’ জাপার কাছে ছেড়ে দেওয়া আসনগুলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরুদ্ধার করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জোর কড়া নাড়ছেন দলীয় হাইকমান্ডের দরজায়।
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই আওয়ামীলীগের শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে। কেন্দ্রের কাছে সব আসনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারন করার জন্য অনুরোধ করা হবে। বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দলীয় এমপি না থাকার কারণে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ অবমূল্যায়িত হয়েছে। তৃণমূল আওয়ামীলীগের দাবির প্রেক্ষিতেই নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে নৌকার প্রার্থী নির্বাচন করার জন্য জোড় তদবীর চালানো হবে। তবে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ যা হবে তার আলোকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। আর এ সিদ্ধান্ত তৃনমূল নেতৃবৃন্দকে মূল্যায়নের মাধ্যমে নেত্রী নেবেন এমনটাই বিশ্বাস। অন্যদিকে, জোটে থাকলে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও এরশাদ পতœী বেগম রওশন এরশাদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ জেলা নারায়ণগঞ্জেও তাদের প্রার্থী ধরে রাখতে চাইছে বলেও (জাপা) সূত্রে জানা গেছে।

এনিয়ে জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবুল জাহের এ জানান, আসছে নির্বাচনের ছক অনেক কঠিন। দল যদি আয়ওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে জোট বাঁধে তাহলে আমাদের দখলে থাকা দুটি আসনে কোনো ছাড় দেব না। বরং আরও দু-একটি বেশি চাওয়া হতে পারে। আর জোটে না থাকলে ৫টি আসনেই প্রার্থী দেওয়া হবে। কেননা, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি অন্যান্য জেলার চেয়ে ভিন্ন। এ জেলায় আওয়ামীলীগের চেয়ে সাংগঠনিক ও জনপ্রিয়তা কোনো অংশে কম নয়। জেলায় (জাপা)র দুই এমপি ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে জাতীয় পার্টি অনেকটাই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে জাপা’র সমর্থন নিয়ে এমপি হয়েছেন কেন্দ্রীয় জাপার সিনিয়র যুগ্ন মহা সচিব লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি এমপি হওয়ার পর থেকে বরাবরের মতই অবমূল্যায়িত হয়ে এসেছে আওয়ামীলীগ সমর্থিত নেতাকর্মীরা। এমনটাই অভিযোগ আওয়ামী নেতাকর্মীদের। ‘মন্দের ভালো’ এই এমপি এবার রীতিমতো হোঁচট খাচ্ছেন খোদ শরিক দলের একক প্রার্থীর বিরামহীন গণসংযোগে। ইতিমধ্যে এই আসনে অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। গত কয়েকমাস ধরে বিভিন্ন সভা সমাবেশ কিংবা গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এমনকি আওয়ামীলীগ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সরাসরি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং নেতাকর্মীদের কায়সার হাসনাতের পক্ষে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই গণসংযোগ চালানোকালে বর্তমান (জাপার) এমপির নানা অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরছেন বিভিন্ন সভা সমাবেশে। আর সোনারগাঁবাসীর উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে ভোট চাইছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।

জেলা জাপার দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসছে সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনটিই দলের প্রধানের কাছে চাইবেন। এমন প্রেক্ষাপটে অনেকটা খোশ মেজাজে রয়েছেন বর্তমান সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা। বিভিন্ন উপলক্ষ ও দিবসকে কেন্দ্র করে শুভেচ্ছা বিনিময়, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনের মাধ্যমে লিয়াকত হোসেন খোঁকা নিজের শক্ত অবস্থান বেশ জোরেশোরেই জানান দিচ্ছেন।

অন্যদিকে দলের নির্দেশে মাঠে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ একে এম সেলিম ওসমান। ভোট চাইতে পুরোদমে এখন তিনি ছুটছেন আনাচে কানাচে। এমনকি জেলার বিশিষ্ট লোকজনদের সাথে নিয়ে যোগ দিচ্ছেন দলীয় সভা সমাবেশে। তবে এই এমপির উপর নাখোশ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ। আওয়ামীলীগের দলীয় লোকজনদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ এনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীর দাবি উঠেছে তাদের পক্ষ থেকে। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই দলীয় প্রার্থীর ব্যাপারে হার্ড লাইনে রয়েছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা। এমনবস্থায় অনেকটাই বেকায়দায় রয়েছেন এ আসনের বর্তমান সাংসদ একে এম সেলিম ওসমান।

সূত্রে জানা যায়, গেল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে (জাপা) থেকে বিনা ভোটে নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা। তবে অনেকটা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্ধী প্রার্থীকে পরাজিত করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে জয়লাভ করে এমপি হন বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমান। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা চাইছেন আসনটি ফেরত পেতে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আরজু ভূইয়ার মতো হেভিওয়েট প্রার্থীরা চাইছেন এ আসন থেকে এমপি হতে।

তবে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের আগামি একাদশ নির্বাচনে একক প্রার্থী দেওয়ার ঘোষনা এবং বর্তমান (জাপা)ও দুই সাংসদের উন্নয়নের ফিরিস্তি বিবেচনার প্রেক্ষিতে আগামি নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে শেষ পর্যন্ত কারা দলীয় সমর্থন পেয়ে নির্বাচন করবেন এমনটাই দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন নারায়ণগঞ্জবাসী।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ