আজ মঙ্গলবার, ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আর মেয়র হবেন না আইভী!

নিজস্ব প্রতিবেদক

একবার পৌরসভায়, দুইবার সিটি কর্পোরেশনে মেয়র হয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ কারনে তার যেমন জনপ্রিয়তা রয়েছে তেমনি প্রতিপক্ষও তৈরী হয়েছে। প্রতিবারই দলের সমর্থন ও  মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতায় পরতে হয়েছে তাকে। আগামীতেও পিছু ছাড়বে না প্রতিদ্বন্ধি ।

শুরুটায় আইভীর নাম তেমন শুনেনি মানুষ। তবে তার পিতা আলী আহাম্মদ চুনকার পরিচয়ে রাতারাতি পরিচিতি পান। ভোটে আমলাপাড়ার তারু সরদারের ছেলে বিএনপির প্রার্থী নূরুল ইসলাম সরদারকে হারিয়ে প্রথম নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হন তিনি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে এ নির্বাচনে তার জয়ের মধ্য দিয়ে সারা দেশে প্রথম কোন সাফল্য পায় আওয়ামী লীগ। পৌর চেয়ারম্যান হয়েই রাস্তাঘাট, ড্রেনেজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে মানুষের দৃষ্টি কাড়েন আইভী। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাহসী বক্তব্য দেয়ায় দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে তার। তখন ধারণা করা হয়েছিলো পরবর্তী নির্বাচনে দলের সমর্থনও তিনিই পাবেন। তবে তা ভুল প্রমান হয় ৩ পৌরসভা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে।

 ২০১১ সালে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শামীম ওসমানকে সমর্থন দেয়। দলের এ সমর্থনের বিরুদ্ধে গিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালিন আহবায়ক এসএম আকরাম, আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন, আব্দুল কাদির ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ আইভীকে নিয়ে মাঠে নামেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমান, বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার ও নাগরিক সমাজের প্রার্থী আইভী সমানতালে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে থাকেন। তবে নির্বাচনের আগের মধ্যরাতে বিএনপি তাদের প্রার্থীকে সরে যেতে বলেন। দলীয় সূত্র মতে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া স্বয়ং তৈমূর আলমকে এ নির্দেশ দেন। পরের দিন সুষ্ঠু নির্বাচনের পর ভোটের হিসেবে লক্ষাধিক ভোটে জয়ী হয় আইভী। তবে শামীম ওসমান অনুসারীদের দাবি ছিলো, বিএনপি প্রার্থী না সরালে শামীম ওসমানই জিততেন। তাদের মতে, বিএনপি-জামাত ভোটাররা শামীম ওসমানকে ঠেকাতে তৈমূরকে বলি দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।

সিটি মেয়র হয়ে আইভী আরও উন্নয়ন কাজে মনোযোগ দেন। দেশের প্রথম নারী মেয়র হওয়ায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ও বিভিন্ন দফতরে তার নাম ছড়িয়ে পরে। বিদেশী সাহায্য সংস্থাগুলোও তার প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন। এরপর ২০১৬ সালের নির্বাচন আসে। ওই সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পদ্ধতি চালু হয়। সিটি নির্বাচনে আইভীর প্রতিদ্ব›িদ্ব হন তার এক সময়কার কাছের মানুষ আনোয়ার হোসেন সহ কয়েকজন।

সূত্র মতে, দলের হাই কমান্ড প্রথমে তৃণমূলের প্রস্তাব চান। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ যে ক’জনের নাম প্রস্তাব করেছিলো তার মধ্যে আইভীর নাম ছিলো না। সে সময়ে গুঞ্জন উঠে শামীম ওসমানের চেষ্টা মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন আনোয়ার হোসেন, চন্দন শীল, খোকন সাহারা পেতে পারেন। তবে শেষতক তা হয়নি। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জের নেতাদের ডেকে নিয়ে আইভীর হাতে নৌকার মনোনয়ন তুলে দেন। পাশাপাশি শামীম ওসমানসহ অন্য নেতাদের বলে দেন, আইভীর হয়ে কাজ করতে। এবার বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে বিপুল ভোটে হারিয়ে মেয়র হন আইভী।

বিগত দিনের এসব কথা সবার জানা থাকলেও আগামী নির্বাচনে কে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন এ নিয়ে এখনি আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। প্রথমে শোনা গিয়েছিলো শামীম ওসামন পত্নী সালমা ওসমান লিপি মেয়র পদে নির্বাচন করবেন। তবে সেলিম ওসমান তা চান না বলে জানা গেছে। অপরদিকে সেলিম ওসমান নিজেই এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, প্রয়োজন হলে আগামীতে ওই চেয়ারে আমি বসবো। অর্থাৎ তিনিও নির্বাচন করার একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার অনুসারীদের দাবি, এমপি হয়ে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন সেলিম ওসমান। এছাড়া প্রতি ঈদে খাদ্য সামগ্রীর বড় আকারের প্যাকেট দিয়ে মানুষের কাছে নিজের গ্রহনযোগ্যতা প্রমান করেছেন।

এ জনপ্রিয়তা থেকেই তিনি হয়তো নির্বাচনের কথা ভাবতে পারেন। সম্প্রতি নাসিক ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর করোনা যোদ্ধা মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে মেয়র প্রার্থী ভাবছেন অনেকে। সূত্র মতে, স্থানীয় আওয়ামী লীগে থাকা আইভী বিরোধীরা এবার আগের চেয়ে আরও বেশী একাট্টা হয়েছেন। তারা এরই মধ্যে আইভীর প্রতিপক্ষ খুঁজতে শুরু করেছেন। প্রয়োজনে অন্য দলের জনপ্রিয় কোন নেতাকে আওয়ামী লীগে এনে মনোনয়ন দেয়ার চিন্তাও করছেন। তারা ইতিমধ্যে প্রচার শুরু করেছেন আইভী আর মেয়র হবেন না। এসবের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সেলিনা হায়াৎ আইভী কী নির্বাচন করবেন না ? তাকে কী আওয়ামী লীগ আগামীতে মনোনয়ন দিবে ?

বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে আইভীর গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে বেশ। তবে আইভী এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। এমনকি দলীয় মনোনয়নও তিনি চাইবেন না। যদি দল ও দলের প্রধান তাকে মনোনয়ন দেয় তবে তিনি নির্বাচন করবেন।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ