আজ বৃহস্পতিবার, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ শিল্পপতি গোলাম দস্তগীর গাজীর জন্ম দিন

আজ শিল্পপতি গোলাম

 

আজ শিল্পপতি গোলামসংবাদচর্চা রিপোর্ট:

নারায়ণগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক এর  ৭০ তম জন্ম দিন। তিনি ১৯৪৮ সালের ১৪ আগস্ট জন্ম গ্রহণ করেন।  তিনি বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি।

স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য ভারত এবং বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন তিনি । মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে যান। ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকা শহরে বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। অপারেশনে তিনি অগ্রভাগে থাকতেন। গ্যানিজ ও দাউদ পেট্রল পাম্প উল্লেখযোগ্য অপারেশন।

আজ আমরা এই কীর্তিমানের গল্প শুনবো। ফিরে তাকাবো ৭১-এর দিনগুলোতে। যখন পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধ নিজের দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে যুদ্ধ করছিলেন এই বীর সৈনিক। মাত্র বাইশ বছর বয়সে যুদ্ধে যান গোলাম দস্তগীর গাজী।

“কথা ছিল সন্ধ্যা সাতটায় একটি ফিয়াট গাড়িতে চড়ে গোলাম দস্তগীর গাজী ও তাঁর সহযোদ্ধারা অপারেশনে যাবেন। কিন্তু যাত্রার আগে হঠাৎ ওই গাড়ি বিগড়ে যায়। রাত আটটা পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করেন। গাড়ি ঠিক হয়নি। এতে দমে যাননি তাঁরা। বিস্ফোরক রেক্সিনের ব্যাগে ভরে তাঁরা গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে পড়েন। রামপুরায় মঞ্জুর নামে একজনের বাড়ি ছিল তাঁদের আরভি।

ঠিক তখনই তাঁরা শুনতে পান দূর থেকে ভেসে আসা গুলির শব্দ। এতে এলাকার লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। দ্রুত যে যার বাড়ির বাতি নিভিয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন। রাস্তায় চলাচলরত মানুষজন দ্রুত তাঁদের গন্তব্যে যেতে থাকেন। এর মধ্যেই তিনটি ভাড়া রিকশায় উঠে পড়েন তাঁরা। প্রথম রিকশায় গাজী ও নীলু। তাঁদের পায়ের আড়ালে ভাঁজ করে লুকানো ছিল স্টেনগান।

রামপুরা ডিআইটি সড়ক থেকে রিকশা রওনা হয় উলনের পথে। রাস্তায় আলো নেই। অসমান কাঁচা রাস্তায় রিকশা এগিয়ে যায়। সামনের কিছু দূর যাওয়ার পর গাজী ও নীলু পেছনে তাকিয়ে দেখেন বাকি দুই রিকশা নেই। নানা ঘটনার পর তাঁরা আবার একত্র হয়ে রওনা হন। একসময় দৃষ্টিগোচর হয় লক্ষ্যস্থল উলন বিদ্যুৎকেন্দ্রের (সাবস্টেশন) আলো।

রওনা হওয়ার সময় তাঁরা ঠিক করে রেখেছিলেন লক্ষ্যস্থলের কাছাকাছি যাওয়ার পর প্রথম রিকশা আগে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফটকে যাবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রিকশায় থাকা মুক্তিযোদ্ধারা ফটকের কাছাকাছি পৌঁছে চালককে দাঁড়াতে বলবেন। চালকেরা তাঁদের চালাকি বুঝতে পারেননি বা কাউকে চিনতেও পারেননি। প্রথম রিকশা আগে ফটকের সামনে যায়।

ফটকে তখন পাহারায় ছিল একজন রাইফেলধারী পুলিশ ও বিদ্যুকেন্দ্রের একজন নিরাপত্তাপ্রহরী। তারা দুজন রিকশা দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। গোলাম দস্তগীর গাজী ও নীলু ক্ষিপ্রতার সঙ্গে চলন্ত রিকশা থেকে লাফিয়ে নেমে চোখের পলকে তাদের দিকে স্টেনগান তাক করে ধরেন। তারপর নিচু গলায় গাজী বলেন, ‘হ্যান্ডসআপস, খবরদার চেঁচামেচি করবে না।’

পুলিশ রাইফেল মাটিতে ফেলে নিঃশব্দে হাত তোলে। নিরাপত্তাপ্রহরী পালানোর চেষ্টা করে। তাকে নীলু আটকান। গাজী বলেন, গেট খুলে দিতে। তাঁর নির্দেশে পুলিশ গেট খুলে দেয়। এর মধ্যে তাঁদের পেছনের সহযোদ্ধারা কাজ শুরু করে দেন। দ্বিতীয় রিকশায় থাকা মতিন (দুই) টেলিফোনের তার কেটে দেন।

গাজী ফটকের পুলিশের কাছে জেনে নেন বাকি পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা কে কোথায়। সে জানায় ১৫-১৬ জন পুলিশ ও নিরাপত্তা-কর্মী একটি বড় ঘরে রাতের খাবার খাচ্ছে। তাদের সবাইকে তাঁরা নিঃশব্দে আত্মসমর্পণ করান। তাদের নিরস্ত্র করে নীলু ও মতিন (দুই) পাহারায় থাকেন। গাজী ও মতিন (এক) স্টেনগান হাতে এগিয়ে যান ট্রান্সফরমারের দিকে।

ট্রান্সফরমার ছিল কাঁটা তার দিয়ে ঘেরা। প্রায় দোতলাসমান উঁচু ট্রান্সফরমার। অপারেটর রুমের ভেতর দিয়ে সেখানে যেতে হতো। গাজী, মতিন (এক) ও আরও দুই সহযোদ্ধা ভেতরে ঢুকে ট্রান্সফরমারের গায়ে পিকে (বিস্ফোরক) লাগান। এর আগে তাঁরা পরীক্ষা করে নেন সেটি বিদ্যুতায়িত করা কি না।”

সেদিন ক্র্যাক প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধারা উপদলে বিভক্ত হয়ে ঢাকায় একযোগে কয়েকটি অপারেশন করেন। গোলাম দস্তগীর গাজীরা বিস্ফোরক লাগানোর কয়েক মিনিট পর দেখা যায়, বিদ্যুৎ চমকের মতো এক ঝলক আলো। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা রামপুরা এলাকা। তারপর নিকষ কালো অন্ধকারে আকাশে ফণা তুলে দাঁড়ায় আগুনের লেলিহান শিখা। ট্রান্সফরমার পুরোপুরি ধ্বংস ও ঢাকা শহরের একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাই।

গোলাম দস্তগীর গাজী বর্তমানে ব্যবসায়ী ও নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য । ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি নারায়ঙ্গঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেন এবং বিজয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

তাঁর পৈতৃক বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলায়। বাবার নাম গোলাম কিবরিয়া গাজী, মা সামসুননেছা বেগম। স্ত্রী হাসিনা গাজী। গোলাম দস্তগীর গাজীর স্ত্রীর নাম হাসিনা গাজী। তাঁদের দুই ছেলে।পড়াশুনার হাতেখড়ি হয়েছিলো পুরাতন ঢাকার বিদ্যাপীঠে। এস এস সি পাশ করার পর বাবা তাকে নটরডেম কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ