আজ শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শুরু হয়েছে লাঙ্গলবন্দের পূণ্য স্নান

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

আজ শুক্রবার ভোর থেকে নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে শুরু হয়েছে স্নানোৎসব। ‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর’ মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে জগতের যাবতীয় সংকীর্নতা ও পঙ্কিলতার আবরণে ঘেরা জীবন থেকে পাপমুক্তির বাসনায় হিন্দু পুন্যার্থীরা ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমী স্নান শুরু করে।

হিন্দু ধর্মালম্বীদের তিথি অনুযায়ী ১১ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১১টা ৫মিনিট থেকে পরদিন শনিবার সকাল ৮টা ৫৫মিনিট ২২ সেকেন্ড তিথি।

এ তিথি সময়ে অন্য বছরের মতো এবারও নদের ১৮টি ঘাটে ¯স্নাননোৎসবে জীবন থেকে পাপমুক্তির বাসনায় বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ সনাতন পূণ্যার্থী যোগ দিবেন আশা করছেন আয়োজকেরা। পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস তিথির নির্দিষ্ট সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে পুণ্যস্নান করলে সব পাপ মোচন হয়ে যায়।

হিন্দু পুন্যার্থীদের মতে পবিত্র নদ ব্রহ্মপুত্রে স্নানমন্ত্র পাঠপূর্বক নিজ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী ফুল, বেলপাতা, ধান, দুর্বা, হরতকী, ডাব, আ¤্রপল্লব ইত্যাদি দিয়ে পিতৃকূলের উদ্দেশ্যে তর্পণ করবে ভক্তরা।

স্নান উপলক্ষ্যে লাঙ্গলবন্দের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে মেলা।

বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ সংস্থার কেন্দ্রীয় সদস্য রনজিৎ মোদক জানান, এবার ললিত সাধুর ঘাট, অর্নপূর্ণ ঘাট, রাজ ঘাট, কালীগঞ্জ ঘাট, মা কুঁড়ি সাধুর ঘাট, মহাত্মা গান্ধী ঘাট, বড় দেশ্বরী ঘাট, জয়কালি ঘাট, রক্ষাকালী ঘাট, প্রেম তলা ঘাট, চর শ্রীরাম ঘাট, সাবদি ঘাট, বাসনকালী ও জগৎবন্ধু ঘাটে স্নান করা হচ্ছে।

পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, লাঙ্গলবন্দে পূণ্যার্থীদের উৎসব যাতে নিরাপদ হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ১৬শ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। ৩ শিফটে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবে। লাঙ্গলবন্দে সারা দেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পুণ্যার্থীরা পূণ্যস্নান করতে আসে। তাদের নিরাপত্তায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কোন কমতি নেই। আমরা সকল ধরনে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। মোবাইল টিম, ওয়াচ টাওয়ার, মহিলা পুলিশ, আনাসার বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। ১৮টি স্নান ঘাটসহ পুরো লাঙ্গলবন্দ সিসি ক্যামেরায় আওতাভুক্ত থাকবেএ

লাঙ্গলবন্দ স্নানের চমকপ্রদ কাহিনী
লাঙ্গলবন্দ স্নান এবং নদের উৎপত্তি সর্ম্পর্কে চমৎকার এক কাহিনী প্রচলিত আছে। হিন্দু পুরান মতে, ত্রেতাযুগের সূচনাকালে মগধ রাজ্যে ভাগীরথীর উপনদী কৌশিকীর তীর ঘেঁষে এক সমৃদ্ধ নগরী ছিল, যার নাম ভোজকোট। এ নগরীতে ঋষি জমদগ্নির পাঁচ পুত্র সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তানের নাম রুষন্নন্ত, দ্বিতীয় পুত্রের নাম সুষেণ, তৃতীয় পুত্রের নাম বসু, চতুর্থ পুত্রের নাম বিশ্বাসুর, পরশুরাম ছিলেন সবার ছোট। পরশুরামের জন্মকালে বিশ্বজুড়ে চলছিল মহাসঙ্কট। একদিন পরশুরামের মা রেণুকা দেবী জল আনতে গঙ্গার তীরে যান। সেখানে পদ্মমালী (মতান্তরে চিত্ররথ) নামক গন্ধবরাজ স্ত্রীসহ জলবিহার করছিলেন (মতান্তরে অপ্সরী গণসহ)। পদ্মমালীর রূপ এবং তাদের সমবেত জলবিহারের দৃশ্য রেণুকা দেবীকে এমনভাবে মোহিত করে যে, তিনি তন্ময় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন। অন্যদিকে ঋষি জমদগ্নির হোমবেলা পেরিয়ে যাচ্ছে, সেদিকে তার মোটেও খেয়াল নেই। সম্বিত ফিরে পেয়ে রেণুকা দেবী কলস ভরে ঋষি জমদগ্নির সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ান। তপোবলে ঋষি জমদগ্নি সবকিছু জানতে পেরে রেগে গিয়ে ছেলেদের মাকে হত্যার আদেশ দেন। প্রথম চার ছেলে মাকে হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু পরশুরাম পিতার আদেশে মা এবং আদেশ পালন না করা ভাইদের কুঠার দিয়ে হত্যা করেন। পরবর্তীকালে পিতা খুশি হয়ে বর দিতে চাইলে তিনি মা এবং ভাইদের প্রাণ ফিরে চান। তাতেই রাজি হন ঋষি জমদগ্নি। কিন্তু মাতৃহত্যার পাপে পরশুরামের হাতে কুঠার লেগেই থাকে। অনেক চেষ্টা করেও সে কুঠার খসাতে পারেন না তিনি। এক পর্যায়ে পিতার কথামত পরশুরাম তীর্থে তীর্থে ঘুরতে লাগলেন। শেষে ভারতবর্ষের সব তীর্থ ঘুরে ব্রহ্মপুত্র পুণ্যজলে স্নান করে তার হাতের কুঠার খসে যায়। পরশুরাম মনে মনে ভাবেন, এই পুণ্য বারিধারা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে মানুষ খুব উপকৃত হবে। তাই তিনি হাতের খসে যাওয়া কুঠারকে লাঙ্গলে রূপান্তর করে পাথর কেটে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে মর্ত্যলোকের সমভূমিতে সেই জলধারা নিয়ে আসেন। লাঙ্গল দিয়ে সমভূমির বুক চিরে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হন তিনি। ক্রমাগত ভূমি কর্ষণজনিত শ্রমে পরশুরাম ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানায় এসে তিনি লাঙ্গল চালানো বন্ধ করেন। এই জন্য এই স্থানের নাম হয় লাঙ্গলবন্দ। এরপর এই জলধারা কোমল মাটির বুক চিরে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিশেছে। পরবর্তীকালে এই মিলিত ধারা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে।

এদিকে লাঙ্গলবন্দের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে । মোতায়েন থাকবে র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে সহ¯্রধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
স্থাপন করা হয়েছে ১০ শয্যা বিশিষ্ট দুটি অস্থায়ী হাসপাতাল। সে খানে রয়েছে ৭টি অ্যাম্বুলেন্স।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ