আজ শনিবার, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আজ মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া

সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাত
প্রায় দু’বছর কারাভোগের পর মুক্তি মিলছে খালেদা জিয়ার। বিগত সময়ে নেত্রীর মুক্তির দাবিতে রাজপথে জোড়ালো ভূমিকা ছিলো নারায়ণগঞ্জ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, মৎস্যজীবি দল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের। পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা দিনের পর দিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। আর এর বিনিময়ে তারা পেয়েছেন হামলা-মামলা আর লাঞ্ছনা।

দীর্ঘদিন কারাবাসের পর বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাঁকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত সুপারিশ করে আইন মন্ত্রাণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ ব্রিফিং করে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এতোদিন পর নেত্রীর মুক্তির বিষয়ে বিএনপি নেতাদের অনুভূতি জানতে গতকাল সংবাদচর্চা থেকে ফোন করা হয় প্রত্যেকটি অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবু বলেন, যেকোন কারণেই হোক শেষ পর্যন্ত সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। নেত্রী এখনও অসুস্থ, আগে সুস্থ হোক এটাই শুধু আল্লাহর কাছে চাওয়া।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম বলেন, নেত্রীর মুক্তির সিদ্ধান্ত আরও আগেই হওয়া উচিৎ ছিলো। দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য নেত্রীর মুক্তির দরকার ছিলো। সরকার মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এতেই অনেক বেশি খুশি।

মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউছার আশা বলেন, কি কারণে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হলো সেটা আমাদের জন্য এখন চিন্তার বিষয়। কারণ নেত্রী খুবই অসুস্থ। তিনি আগে সুস্থ হয়ে উঠুক তারপরে এ বিষয়ে বলা যাবে।
জেলা ছাত্রদল সভাপতি মশিউর রহমান রনি বলেন, দেশের এমন ক্রান্তিলগ্নে দীর্ঘদিন পর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং উচ্ছাসিত। কিন্তু প্রথমত নেত্রীর সুচিকিৎসার প্রয়োজন। কারণ তিনি খুবই অসুস্থ। মহান আল্লাহর কাছে আমি তার সুস্থতা কামনা করছি।

জেলা মৎস্যজীবি দলের আহ্বায়ক এড. আনোয়ার প্রধান বলেন, নেত্রীর মুক্তির সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। সেই সাথে সরকারের এমন পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই।

মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, খালেদা জিয়ার ৬ মাসের মুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তারপরেও আমরা খুশি নই। কারণ তার উপর যে শর্ত বেধে দেয়া হয়েছে তা মোটেও গণতান্ত্রিক নয়। এই সরকার এতোদিন বিচার বিভাগকে পরাধীন করে রেখেছিলো। শুধু বিচার বিভাগ নয়, প্রশাসন ও মিডিয়াসহ সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলো। যাই হোক, এখন নেত্রীর মুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এটাই বড় কথা।

জেলা বিএনপির সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদার বলেন, নেত্রীর মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়াতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং উচ্ছাসিত। সেই সাথে সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে আমি বলতে চাই, শীঘ্রই যেনো নেত্রীকে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে পুরোপুরি সুস্থ করা হয়।

জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করি। খালেদা জিয়া আমাদের মা। সেই মায়ের মুক্তিতে সরকারের সুদৃষ্টি হয়েছে। তার চেয়ে খুশির খবর আর কী থাকতে পারে?

মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, নেত্রী মুক্তি পেয়েছি শুনেই আমি প্রথমে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করেছি। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমি অনেক খুশি। খালেদা জিয়ার শরীর খুবই অসুস্থ। নেত্রীর মুক্তি মিলেছে তার জন্য আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া।

জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, নেত্রীর মুক্তিতে দলীয় একজন কর্মী হিসেবে আমি অত্যন্ত খুশি। কারণ দীর্ঘদিন কারাভোগের পর নেত্রী মুক্তি পাচ্ছেন। দীর্ঘদিন পর হলেও সরকারের বোধদয় হয়েছে। এজন্যই সরকার তার মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাই হোক এখন তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন এবং শীঘ্রই তাকে সুস্থ করে তোলা দরকার।

মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বলেন, খালেদা জিয়ার যে মামলা তাতে সাধারণ মানুষ হলেও অনেক আগেই জামিন পাওয়ার কথা। কিন্তু বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপের কারণেই মূলত এতোদিন তার জামিন হয়নি। তারপরেও সকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে আমরা খুশি। কারণ খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ এখন তার চিকিৎসা প্রয়োজন।

মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. আবুল কালাম বলেন, দেরীতে হলেও সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। সেই সাথে আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই যে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। নেত্রীর মুক্তি পর বাকি বিষয়টা বলা যাবে।

এছাড়াও নারায়ণঞ্জ বিএনপি একাধিক নেতাকর্মী জানান, প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির কারণেই মূলত দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময়ধরে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিলো। সরকারের কাছে দেশের মানুষ কখনোই এমনটা আশা করে নি। তারপরেও শেষ অবদি নেত্রীর মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কি রহস্য লুকিয়ে আছে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এ দিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে গতকাল প্রথম আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফ করেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, আইনমন্ত্রীর সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এটা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তার সিদ্ধান্ত পাওয়ার পরই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই মুক্তি পাবেন কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার দুপুরের মধ্যে সেই প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে।

জানা গেছে, এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির ফাইল গেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এখন সেখান থেকে এ বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রীর অনুমোদনের পর সেই ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদনের পর তাকে মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এর পরই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদ- নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা রয়েছে। দুটি বাদে সব মামলায় তিনি জামিনে আছেন।

এসএমআর/এসএমআর

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ