সংবাদচর্চা ডেস্ক:
আইনি মারপ্যাঁচে আটকে যেতে পারে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র উপনির্বাচন।ইসি জানিয়েছে, হালনাগাদ তালিকায় যুক্ত হওয়া ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন; কিন্তু প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু ভোটার তালিকা নয়, জটিলতা রয়েছে নবগঠিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মেয়াদ এবং করপোরেশন গঠনের বৈধতা নিয়েও।
নবগঠিত ওয়ার্ডগুলোর সীমানা সংক্রান্ত আপত্তিও নিষ্পত্তি হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এ নিয়ে আগে থেকে সমালোচনা থাকলেও ইসি তা কানে তোলেনি। এসব কারণে তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উত্তর সিটির নির্বাচন স্থগিত চেয়ে গতকাল হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিট দায়ের করেছেন ভাটারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান এবং বেরাইদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ এ জাহাঙ্গীর আলম।
আজ বুধবার ওই রিট দুটির বিষয়ে আদালতের আদেশ দেওয়ার কথা রয়েছে। বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদ সমন্ব্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গতকাল আদেশের এ দিন ধার্য করেন। রিটকারীর আইনজীবী আহসান হাবিব ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, আতাউর রহমান নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। তফসিল অনুযায়ী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে তাকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে; কিন্তু এখন পর্যন্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। আগ্রহী প্রার্থী এখনও জানেন না, তিনি ভোটার কি-না। তা ছাড়া মনোনয়নপত্রে ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষরের বিধান রয়েছে। তালিকা প্রকাশের আগে ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষর কীভাবে পাওয়া সম্ভব?
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে তফসিল হলে তা আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এ অবস্থার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল তফসিল ঘোষণার আগেই এ বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করা। শুধু ভোটার তালিকা, নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মেয়াদ নয়, আরও অনেক জটিলতা রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৮ নতুন ওয়ার্ডের ভোটাররা কাউন্সিলর পদে ভোট দিতে পারলেও মেয়র পদে ভোট দিতে পারবেন না। ইসির ভালো আইনি পরামর্শক নেই কিংবা তারা কারও পরামর্শ কানে তোলেননি বলেই এত জটিলতা রেখে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
যেসব অস্পষ্টতা রয়েছে, তা চলমান সংসদ অধিবেশনেই দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়া কাম্য নয়। সংবিধানের ৫৯/১ অনুচ্ছেদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। যদি না হয়, তা সংবিধানের লঙ্ঘন। আইনেও উপনির্বাচনের কথা বলা আছে। কোনো কারণে নির্বাচন না হলে তা জনস্বার্থবিরোধী।
বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, কৌশলগত কারণে এই মুহূর্তে নির্বাচন স্থগিত করা ঠিক হবে না। তফসিল ঘোষণা হয়েছে; প্রার্থী ও জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে স্বতঃস্ম্ফূর্ততা রয়েছে। আইনগত ত্রুটি থাকলে, আদালত নির্বাচন কমিশনকে তা সংশোধনের নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু নির্বাচন স্থগিত হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বাধাপ্রাপ্ত হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময়ই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই এ ব্যাপারে আদালতের রায় যা হবে সেটা মেনে নেবে। তবে তারা নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সরকারি দলের এই নেতা।
আদালত নির্বাচন স্থগিত করলে তা মেনে নেওয়া হবে বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার। তার দাবি, পরাজয় নিশ্চিত জেনে সরকারি দল নির্বাচন বন্ধ করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তাদের ইঙ্গিতে রিট হয়েছে।
সিটি করপোরেশন আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী, মেয়র পদ শূন্য হলে ৯০ দিনের মধ্যে পূরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ হিসেবে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন হতে হবে। মেয়র পদে ভোটে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে নতুন ওয়ার্ডগুলোকে নিয়ে। পার্শ্ববর্তী ১৬ ইউনিয়ন পরিষদ বিলুপ্ত করে, নতুন ৩৬টি ওয়ার্ড গঠন করে তা ঢাকার দুই সিটির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
২০২০ সালের ১৭ মে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হবে।
উত্তর সিটির ওয়ার্ড সংখ্যা ছিল ৩৬। নতুন ১৮ ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ার পর, বেড়ে হয়েছে ৫৪। আয়তন বৃদ্ধির পর, নারী সদস্যসহ কাউন্সিলরের সংখ্যা ৭২। আইন অনুযায়ী, অন্তত ৫৪ জন নির্বাচিত কাউন্সিলর থাকতে হবে করপোরেশনের বৈধতা নিশ্চিতে। কিন্তু বর্তমানে নির্বাচিত কাউন্সিলর রয়েছেন ৪৮ জন।
মেয়র উপনির্বাচনও স্থগিত চাওয়ার কারণ সম্পর্কে রিটকারীর আইনজীবী আহসান হাবিব ভুঁইয়া বলেছেন, নতুন ১৮টিতে তো নির্বাচনই হয়নি। সে হিসাবে মেয়র পদ গঠিত হয় না। তা ছাড়া সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডে যারা কাউন্সিলর হবেন, তারাও পুরো পাঁচ বছর থাকতে পারবেন না। অথচ সেখানে কিন্তু উপনির্বাচন হচ্ছে না। এ বিষয়গুলো মূলত রিটে তুলে ধরা হয়েছে।
একটি রিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্থানীয় সরকার সচিব, উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়রকে বিবাদী করা হয়েছে। অন্যটিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।