আজ মঙ্গলবার, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মাথায় পিস্তল ঠেকায় দারোগা

# ৪৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ॥ ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি

অ.শুভ:

পুলিশ নির্যাতন করায় ধর্ষণ করে হত্যা করার স্বীকারোক্তি দিয়েছিলো আসামীরা। এমন দাবি করে স্বজনরা জানান, গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল্লাহর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই শামীম। রিমান্ডের সময়ে সে ৪৭ হাজার টাকাও হাতিয়ে নেয়। মৃত জিসা মনিকে জীবিত পাওয়ার পর গতকাল এসব অভিযোগ করেন তারা। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ।

জানা গেছে, শহরের দেওভোগ পাক্কারোড এলাকার গার্মেন্ট শ্রমিক জাহাঙ্গীরের ছোট মেয়ে ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জিশা মনি।

গত ৪ জুলাই সে নিখোঁজ হয়। এর এক মাস পর ৬ আগস্ট জিশা মনির বাবা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। ৭ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় কথিত প্রেমিক আব্দুল্লাহ, নৌকার মাঝি খলিল ও অটো চালক রকিবকে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডের আদেশ দেয় বিজ্ঞ আদালত। এদের মধ্যে কথিত প্রেমিক আব্দুল্লাহ, নৌকার মাঝি খলিল ধর্ষণের পর হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেন। ৯ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে হত্যা রহস্য উদঘাটন, জবানন্দি ও নিজেদের কৃতিত্বের কথা জানায় পুলিশ।

অপরদিকে নিখোঁজের দেড় মাস পর রোববার (২৩ আগস্ট ) দুপুরে বন্দরের নবীগঞ্জ রেললাইন এলাকায় থেকে নিখোঁজ জিসাকে উদ্ধার করে পুলিশসহ তার পরিবার। জিসা তার বাবা-মাকে জানায়, গত দেড় মাস সে ইকবালের সাথে বন্দরের কুশিয়ারা এলাকার বিয়ে করে ভাড়া বাসায় ছিলো।

সোমবার সকালে পুলিশের সংবাদ সম্মেলন করে জানান, ৪ জুলাই জিসা মনির সাথে আব্দল্লাহর কথা হয়। পরে সন্ধ্যায় শহরের একটি বাজারে দেখা হয় তাদের। ওই সময় জিসা মনি আবদুল্লাহ্’র কাছে চিপস খেতে চায়। পরে আব্দুল্লাহ চিপস আনতে গিয়ে আর ফেরত আসেনি। এরপর জিসা তার সাবেক প্রেমিক ইকবালকে ফোন করে বলে তুমি আমাকে নিয়ে যাও।

ইকবাল তাকে নিয়ে যায় বন্দর। সেখানে একজন মৌলবীর মাধ্যমে বিয়ে করে। গত দেড় মাস ধরে কুশিয়ারা এলাকায় মহসীন মিয়ার বাসায় ঘর ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছিলো। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২৩ আগস্ট ইকবাল বাসায় এসে দেখে জিসার মন খারাপ।

জানতে চাইলে, জিসা বলে বাবা মার জন্য তার মন খারাপ। পরে জিসার মাকে ফোন করে কথা বলিয়ে দেয় ইকবাল। ওই জিসা তার মায়ের কাছে ৪ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে চায়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই শামীম জিসাকে উদ্ধার করে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনের পর আসামিদের স্বজনরা জানিয়েছেন, পুলিশি হেফাজতে অমানুষিক নির্যাতনের মুখে তারা ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। পুলিশ এই ঘটনা সাজিয়েছে, তাদের ফাঁসিয়ে দিয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুন আসামির স্বজনদের কাছ থেকে কয়েক দফায় টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল্লাহর মা শিউলী বেগম জানান, ১ মাস ৪ দিন পর জিসার মা ও বাবা আমাদের বাসায় গিয়ে আমার ছেলের সাথে কথা বলে। তখন আমার ছেলে তাদের জানায় জিসা তার সাথে আগে ঘুরাফিরা করছে কিন্তু সে অনেক দিন ধরে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। পরে ৬ আগষ্ট আমার ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে আসে। এরপর তাকে রিমান্ডে আনে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক শামীম। থানা থেকে আমার ছেলে ফোন করে জানায় এস আই শামীম টাকা চায় নয়তো মারবে। রিমান্ডে মারধর না করার জন্য এস আই শামীমকে দুই বারে ১০ হাজার টাকা দেই। তারপরও আমার ছেলেরে রিমান্ডে এনে মারধর করছে।

তিনি বলেন, এস আই শামীম বিনা অপরাধে আমার ছেলেকে ফাঁসিয়েছে। আমরা তার বিচার চাই।
অটো চালক রকির বড় ভাই মো.সজিব জানান, ১৬৪ ধারার জবানবন্ধির আগে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তখন তাদের অত্যাচার করা হয়েছে। থানায় গিয়ে দেখি ছোট ভাইকে মারধর করে ফেলে রেখেছে। তিনি বলেন, এস আই শামীকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি রিমান্ডের সময়। এর আগে গ্রেপ্তার করার পর আরও ২০ হাজার টাকা নিয়েছে সে। সজিব আরও জানান, পুলিশ আব্দুল্লার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলেছে তুই কবি আমরা ধর্ষণ করে ওই মেয়েকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিছি।

গ্রেপ্তার হওয়া মাঝির স্ত্রী শারমীম বেগম জানান, পুলিশকে বলেছিলাম আপনারা আমার স্বামীকে কেন ফাঁসাচ্ছেন তখন এস আই শামীম আমাকে বলেছে বেশি কথা বললে তোকেও থানায় ঢুকিয়ে দিবো। আমার স্বামীকে রিমান্ডে না মারার জন্য এই এস আইকে ৭ হাজার টাকা দিয়েছি। সে টাকা নেয়ার পরও আমার স্বামীকে মেরেছে ও মামলার আসামী বানিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) কে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। সুপার সোমবার বিকেলে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।