নিজস্ব প্রতিবেদক:
অত:পর হর্কাস মার্কেট থেকে ১৮ হাজার টাকা ও হিসাবের খাতা নেয়ার কথা প্রকশ্যেই স্বীকার করে আওয়ামীলীগ নেতা শাহ্ ফয়েজউল্লাহ্ বলেছেন, আমি ওই টাকা দিয়ে হীরা কমিউনিটি সেন্টারের বিল পরিশোধ করেছি। হর্কাস মার্কেটের নির্বাচনের পূর্বে হর্কাস মার্কেট কমিটির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে হীরা কমিউনিটি সেন্টারে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা নাকি করেন ফয়েজ। ফয়েজ ওই মার্কেট কমিটির প্রধান উপদেষ্টা।
সোমবার (২৩ জুলাই) দ্বিতীয় দফায় শহরের মিশনপাড়াস্থ নারায়ণগঞ্জ সিটি হকার্স মার্কেট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কমিটি হর্কাস মার্কেটের বিদ্যুতের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার সমস্যা সমাধানে বসেন সিটি হর্কাস মার্কেট কমিটি। ওই সভায় হঠাৎ করেই উপস্থিত হন আওয়ামীলীগ নেতা শাহ ফয়েজউল্লাহ্। এসময় তিনি বলেন, আমি অনেক দিন যাবত শুনে এসেছি আমার নামে উল্টা পাল্টা কথা বলা হচ্ছে। তাই আমি নিজেই এখানে এসেছি। এ কমিটির থেকে টাকা নেয়ার প্রশ্নই উঠেনা, ফয়েজের এমন বক্তব্যে সিটি হর্কাস মার্কেট কমিটির কয়েকজন নেতা প্রতিবাদ করেন। তারা প্রশ্ন করেন, আমরা শুনেছি আপনি নাকি বিদ্যুতের বিল থেকে ৬৪ হাজার টাকা নিয়েছেন? সাথে সাথেই ফয়েজ জানতে চায়, কে এ কথা বলেছে। পরে সেখানে হাজির করা হয়, কমিটর সাবেক কোষাধক্ষ্য সামসুদ্দিনকে। হর্কাস মার্কেট ব্যবসায়ীদের তোপে মুখে সামসুদ্দিন সত্যটা বলতে বাধ্য হন। তিনি ফয়েজকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ভাই গত চাঁনরাতের দিন আপনি আমাকে আপনার অফিসে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাস করেন, ক্যাশে কত টাকা আছে। আমি বলি, ক্যাশে মোট ২২ হাজার টাকা আছে। ২২ হাজার টাকার কথা শুনে আপনি আমাকে বললেন, ওখান থেকে ১৮ হাজার ও খাতাপত্র নিয়ে আমার অফিসে আস। পরে আমি কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারী সহ সকল নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে আপনাকে ১৮ হাজার টাকা ও হিসাবের খাতা দিয়ে আসি। আমিতো ভাই ১৮ হাজার টাকার কথাই বলেছি।
এ কথা প্রকাশ হওয়ার পর ফয়েজ তার টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে। তবে তিনি বলেন, ওই টাকা দিয়ে তিনি হীরা কমিউনিটি সেন্টারের বিল পরিশোধ করেছেন।
এদিকে ফয়েজের কাছে যে হিসাবের খাতা আছে, তাতে নাকি ৬৪ হাজার টাকা লিখা আছে বলে দাবি তুলেন হর্কাস মার্কেট ব্যবসায়ীরা। পরে ফয়েজকে ওই খাতাটি ফেরত দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান তারা। ফয়েজ তখন বলে, অনেক বছর আগে ঘটনাতো দেখি খাতাটা খুজে পাই নাকি। পেলে অবশ্যই ওই খাতাটি আপনাদের ফিরিয়ে দেয়া হবে। এরপর ফয়েজ হুমকি দিয়ে হর্কাস মার্কেট ব্যবসায়ী ও কমিটির নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, ভবিষ্যতে আমার বিরুদ্ধে যদি কোন অপপ্রচার করা হয়, তাহলে আমার বিচার আমিই করবো। সেই ক্ষমতা আমার আছে।
এরপর ফয়েজ সভাস্থল ত্যাগ করার পর পরই শুরু হয় হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা। হর্কাস মার্কেট ব্যবসায়ীদের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার হিসাবের গড়মিলের সমাধানের জন্য বার বার সভাপতি নজরুল ইসলাম, সেক্রেটারী নাদিম ও কোষাধক্ষ্য মোরশেদকে চাপ দিতে থাকে।
সভার মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের পরিশোধকৃত বিদ্যুৎ বিলের হিসাব চাইলে শুরু হয় হট্টগোল আর চরম বিশৃঙ্খলা। এ সময় তাদের বার বার থামাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হোন কমিটির নেতৃবৃন্দরা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল যথাযত ভাবে পরিশোধ করলেও মার্কেট কমিটি তা লুটেপোটে খেয়েছে। তারা আমাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ টাকা নিয়ে তা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (ডিপিডিসি)কে পরিশোধ না করায় আমাদের ৩দিন অন্ধকারে থাকতে হয়েছে। এভাবে তারা দীর্ঘ নয় বছর যাবৎ কমিটির নাম করে আমাদের টাকা আত্মসাত করে চলেছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, বিদ্যুৎ ইউনিট প্রতি যেখানে ৯-১২টাকা সেখানে আমাদের কাছ থেকে কমিটি নিচ্ছে ১৪ টাকা ইউনিট। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেও কমিটির ফান্ডে আরো টাকা জমা থাকার কথা। কিন্তু কমিটির ফান্ডে টাকা তো দূরের কথা উল্টো কমিটিই বিদ্যুৎ খাতে দেনা রয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। আমরা লুটপাটের এ টাকা পয়সার হিসাব চাই।
এসময় বিদ্যুৎ বিল কালেকশন করা মার্কেট কমিটির সহ কোষাধক্ষ্য মো: মোরশেদ এ হিসাব দিতে গিয়ে অগোছালো বক্তব্য প্রদান করায় আরো হট্টগোল আরো বেড়ে যায়। তখন বেশ কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চেচিয়ে বলে, এ ৭ লাখ টাকা মোরশেদ সহ কমিটিকেই পরিশোধ করতে হবে এবং এর হিসাব সকলের সামনে তুলে ধরতে হবে। আমরা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারীর কাছে এ সমাধান চাই।
সর্বশেষ, মার্কেট কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বক্তব্য দেয়ার সময় বার বার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়েন। পরে সর্ব সম্মতিক্রমে সভাপতিকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, বিদ্যুৎ কারো বাবার সম্পত্তি না। কমিটির লোক সহ সকল ব্যবসায়ী এমনকি মার্কেট কমিটির অফিসের জন্যেও বিলের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমি বার বার নিদের্শ দেয়ার পরও মোরশেদ (সহ কোষাধক্ষ্য) কমিটির লোকজনের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল নেয় নি। মোরশেদকে বললে ওশুধু এক কথাই বলে “ আমি পারবে না”। যার জন্য আজকে আমাদের এ বড় সমস্যা পড়তে হয়েছে। পরে তিনি আগামী ২ই আগষ্ট অর্থ্যাৎ ১০ দিনের মধ্যে এ সমস্যা সমাধানের আশ^াস প্রদান করেন।
সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি হকার্স মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি নুরুজ্জামান মুন্সী, সহ সভাপতি হাজ ফরিদ, সাধারন সম্পাদক মো: নাদিম হোসেন, সহ সাধারন সম্পাদক সামছুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদ হাওলাদার, আনিস মোল্লা, ডালিম হোসেন ডালিম, বড় ফারুক ও ছোট ফারুক সহ মার্কেটের সকল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীবৃন্দ।
এর আগে গত ০১ জুলাই এ সমস্যা সমাধানে হর্কার্স মার্কেট ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসলেও সমস্যার কোন সুরাহা দিতে পারেন নাই। পরে কমিটির সভাপতি ১৫ দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।