সংবাদচর্চা অনলাইনঃ
হকারদের মালামাল মোটা টাকার বিনিময়ে রেখে হকার সমস্যা জিইয়ে রাখে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, বিভিন্ন ভবন-অফিসের কর্মচারী, কতিপয় রাজনীতিক ও ভদ্রবেশী কোন কোন বাড়িওয়ালা। এর ফলে শত চেষ্টা করলেও পুলিশ হকার উচ্ছেদ করে পেরে উঠছে না। উচ্ছেদকালে হকাররা মালভর্তি চাকাওয়ালা ট্রলি কিংবা ভ্যানগাড়ি নিয়ে দ্রুত সটকে পরে। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, চাষাঢ়া সোনালী ব্যাংক গলি থেকে শুরু করে সাধু পৌলের গীর্জা গলির একটি বাড়ি ও বিভিন্ন অফিসের ফাঁকা জায়গায় মোটা টাকার বিনিময়ে হকারদের মালামাল রাখা হয়।
নগরীর চাষাড়া এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, খাজা সুপার মার্কেটের সামনে থেকে সমবায় মার্কেট পর্যন্ত প্রায় ২০-২৫ জন হকার ফুটপাতে বসে দোকানদারী করে। এসব হকাররা সারাদিন বেচা-বিক্রি শেষে রাতের বেলায় বা দিনের বেলায় প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের সময় সোনালী ব্যাংকের গলিতে মালামালগুলো রেখে যায়। এসব হকারদের কাছ থেকে প্রতিদিন টাকা নেয়ার অভিযোগ আছে ব্যাংকের কতিপয় কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
একটু এগিয়ে গেলেই লুৎফা টাওয়ারের গলিতেও ২০-২৫ জন হকার বসে যারা তাদের মালামাল রাখার জন্য ৫০ টাকা হারে দৈনিক ১ থেকে দেড় হাজার টাকা দেয়। জানা যায়, লুৎফা টাওয়ারের দারোয়ানসহ স্থানীয় কয়েজনের পকেটে যায় এ টাকা।
বঙ্গবন্ধু রোডের জাকির সুপার মার্কেটের সামনে থেকে সাধু পৌলের গির্জা হয়ে দীপা সুইটমিটের সামনে পর্যন্ত ৭০-৮০ জন হকারকে দেখা যায় বেচা-বিক্রি করতে। এসব হকাররা গীর্জা ও সুগন্ধা প্লাস হোটেলের মাঝের গলিতে শফিকুর রহমানের বাড়ির নীচতলায় হকার্সলীগের অফিসের সাথে কয়েকটি রুম ভাড়া নিয়ে তাদের মালামাল রাখে। প্রতিটি রুমে ১০-১৫ জনের মালামাল থাকে। এখানে মাল রাখতে গিয়ে হকাররা প্রত্যেকে ৫০-১০০ টাকা ভাড়া দিচ্ছে। দৈনিক তিন হাজার ৫শ থেকে প্রায় ৫ হাজার টাকা হিসাবে মাসে প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় কিছু হকার নেতারা এমনটাই জানায় এসব হকাররা। তবে এ থেকে বাড়িওয়ালা কত পায় তা জানা না গেলেও সাধারণভাবে ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে যা পেতেন তার চেয়ে দ্বিগুণ পায় বলে জানা গেছে।
আরেকটু সামনে গেলেই ঢাকা ব্যাংকের গলির ভিতরে ময়লার ভাগাড়ের উপর মালামাল রাখে বেশ কিছু হকার। এদের প্রত্যেককে দৈনিক গুনতে হয় ২০ থেকে ৩০ টাকা করে। এখান থেকেও মাসে কয়েক হাজার টাকা যায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের পকেটে।
এছাড়া ২নম্বর রেল গেট থেকে ডিআইটি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী রোডের ২নং রেল গেইট থেকে চেম্বার রোড হয়ে ১নং রেল গেইটের ডিবি প্লাজা পর্যন্ত, সিরাজউদ্দৌলা সড়কের ফলপট্টি থেকে হাইস্কুলের সামনে দিয়ে কালির বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় হকারদের দেখা যায়। এসব হকারদের সকলেই দৈনিক ৫০-১০০ টাকা হারে টাকা দিয়ে বিভিন্ন মার্কেট বা পরিত্যক্ত স্থানগুলোতে তাদের মালপত্র রাখে। এসব টাকা পায় কতিপয় মার্কেট, ব্যাংক, স্কুল বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দাড়োয়ানসহ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কিছু কর্মচারী ও স্থানীয় গুন্ডা-পান্ডারা।
এদিকে নগরীর ফুটপাতগুলোতে কোটি টাকা উড়ে এ খবর পুরোনো, কিন্তু উচ্ছেদের সময় বা রাতের বেলা হকারদের মালামাল সরিয়ে রাখা নিয়েও মাসে কয়েক লাখ টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার শহরের কতিপয় বাড়িওয়ালারা হকারদের কাছে রুম ভাড়া দিয়ে চটি প্রতি হাজার হাজার টাকা পকেটে পুড়ে নেয়।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী বলেন, ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে আমাদের অভিযান চলমান। তবে হকারদের মালামাল রাখতে দেয়া এসব গলি ও ভবন সম্পর্কে আমাদের জানা ছিলো না। আপনি জানিয়েছেন তাই আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা খোঁজ নিবো এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।
নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিকী বলেন, আমরা সবসময় হকার উচ্ছেদ ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার বিষয়ে সোচ্চার ছিলাম, এখনো আছি। যে সকল ভবন মালিকরা হকারদের আশ্রয় দেয় তাদের নিজের অবস্থান সম্পর্কে ও রেপুটেশন সম্পর্কে ভাবতে হবে। তবে কেউ যদি হকারদের কাছে রুম ভাড়া দেয় এটা তো দোষের কিছু না। তবে মালামাল রাখা মানে হকার সমস্যা জিইয়ে রাখা। তারপরও আমরা যে কোনো উপায়ে হোক হকার উচ্ছেদ চাই।
একই বিষয়ে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি হাজী নুরুদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনারা দেখেছেন মেয়র এবং এসপি হারুন থাকতে হকারদের উচ্ছেদ করে নগরবাসীর জন্য ফুটপাত উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। আমরা সবসময়ই পুনর্বাসনের মাধ্যমে হকারদের উচ্ছেদ চাই। আর যেসব বাড়িওয়ালা বা ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান হকারদের কে এসব মালামাল রাখার জন্য সুযোগ করে দেয় বা রুম ভাড়া দেয় তাদেরকে নিজ নিজ নিরাপত্তার বিষয়ে ভাবতে হবে। বিশেষ করে সোনালী ব্যাংকের গলিতে মালামাল রাখার বিষয়টি ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আলমগীর হিরন বলেন, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা যখন আবার উচ্ছেদ অভিযানে যাবো তখন আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো। একই সাথে যারা হকারদের এসব মালামাল রাখে তাদের কাছেও জানতে চাওয়া হবে, আমরা উচ্ছেদ করতে আসি, আর তারা কেন হকারদের আশ্রয় দেয়।
নগরীর সাধু পৌলের গির্জার পাশে এক ভবন মালিক হকারদের কাছে রুম ভাড়া দিয়েছে এমন তথ্য পেয়ে সেই ভবনের ম্যানেজার মনির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।