রায়হান কবির নিলয়:
বন্যায় চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে। গবাদি পশুর খামারীরাও ঘাসের অভাবে পড়েছেন বিপাকে। দানাদারে খাবারে খরচ বেশি হওয়ায় ঘাস উৎপাদনে বেছে নিয়েছেন ভিন্ন পন্থা। ঘরেই অল্প জায়গা উৎপাদন করছে মাটি বিহীন ঘাস। যার বৈজ্ঞানিক নাম হাইড্রোপনিক ঘাস। প্লাষ্টিকে ট্রেতে কোন মাটি ছাড়াই উৎপাদন করা সম্ভব ৮থেকে ৯কেজি ঘাস। কীটনাশক ও পরজীবীমুক্ত সেই ঘাস খেয়েই খামারের গবাদিপশুর নিরাপদ খাদ্য যেমন নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি দুধের উৎপাদনও গেছে বেড়ে বলে জানান খামারীরা।
খামারিরা জানিয়েছেন, বাজারে প্রচলিত খড়, চিটাগুড় ও ইস্টমিশ্রিত গবাদিপশুর খাবার সাইলেজের দাম পড়ে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা। গবাদিপশু মোটাতাজা করতে অনেকে সেই খাবারের সঙ্গে ক্ষতিকর হরমোন ও স্টেরয়েড মিশিয়ে থাকেন। অথচ হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে প্রতি কেজি মাটিহীন ঘাসের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকা।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আখতার বলেন, হাইড্রোপনিক ঘাস চাষিদের জন্য বিশাল সম্ভবনার একটি নাম। অল্প জায়গা অধিক ঘাস উৎপান সম্ভব এই প্রদ্ধতিতে। একটু বিজ্ঞান সম্মত হলেও ঘাস উৎপাদনের পুরো বিষয়টি খুবই সহজ। নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বেশ কয়েকটি ফার্মে উৎপাদন হচ্ছে। আর আশার কথা হচ্ছে এই ঘাস চাষে খামারীতে ৩০ ভাগ খরচ কমে গেছে। আমরা করোনার প্রকোপ কমে গেলে এ বিষয়ে একটি প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করবো।
এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহম্মেদ জানান, বন্দরের দাসেরগাঁও এলাকায় স্টার ডেইরী নামের একটি খামারে ৩৬টি ট্রেতে প্রতিদিন ৩৬০ কেজি ঘাষ উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে খামারীরা জায়গা না পেয়ে ঘাষ উৎপাদন করতে পারে না। কিন্তু এই হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে অল্প জায়গা অধিক ঘাস উৎপাদন সম্ভব। নরমাল মাটিতে উৎপাদিত ঘাসের চেয়েও পুষ্টিগুন প্রায় তিনগুন বলে জানান তিনি।
যেভাবে ঘাস চাষ হয়:- দেশীয় পদ্ধতিতে বাঁশের তৈরি মাচায় প্রথমে ট্রে বসাতে হয়। গম, ভুট্টা বা বার্লি যেকোনো একটির ভালোমানের বীজগুলো এক দিন পানিতে ভিজিয়ে পরে জাগ দিয়ে মাচার ট্রেগুলোতে পাতা হয়। কক্ষের তাপমাত্রা রাখতে হয় ২২ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর পানি সঞ্চালন পদ্ধতিতে ৮ দিনে বীজ থেকে জন্মানো ঘাসগুলো প্রাণীর খাওয়ার উপযোগী হয়। প্রতি কেজি ভুট্টার বীজ থেকে ৫ থেকে ৭ কেজি ঘাস হয়। প্রতি ৩০০ বর্গফুট জায়গায় ৮০টি ট্রে রাখলে দিনে ১৫০ কেজি মাটিহীন ঘাস উৎপাদন সম্ভব। ম্যাট আকারে সে ঘাস তুলে গবাদিপশুকে খাওয়াতে হয়।