আজ সোমবার, ২৫শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিএনপির উপর ক্ষুব্দ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
একাধিকবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা বিএনপি এখন অগুছানো একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব দলটির জেলা কমিটি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। এ কারনে শত চেষ্টা করেও সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। দলের এই করুণ দশার জন্য কেন্দ্র ও জেলার কতিপয় নেতা দায়ী বলে মনে করেন এ দলেরই অনেকে। এসব কারনে দলের উপর তারা ক্ষুব্দ। তবে সরাসরি বাইরে প্রকাশ করতে নারাজ দায়িত্বশীল পদে থাকা নেতারা।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটি ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়। এতে আগের কমিটির সেক্রেটারী কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ কমিটি থেকে বাদ পড়েন এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। যিনি ২০০৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা বিএনপির সভাপতি হন। দলের অনেক নেতার অভিযোগ, তৈমূরকে সরাতে দলের ভেতর একটি উপদল তৈরী হয়। কাজী মনির, মোহাম্মদ শাহ আলমসহ কয়েকজন আড়াইহাজারের নজরুল ইসলাম আজাদের সহযোগিতায় তৈমূরকে বাদ দিয়ে জেলা বিএনপি কমিটি করান। জেলা বিএনপিতে এ দুই বলয় ছাড়াও আরও একাধিক গ্রুপ রয়েছে। সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন তার অনুগতদের নিয়ে আলাদা সভা সমাবেশ করেন। তার বলয়ের নেতাকর্মীরা বর্তমান নেতৃত্বকে স্বীকারই করতে চান না।
২০০৯ সালের অক্টোবরে সম্মেলনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির কমিটি গঠন হয়। এতে সভাপতি হন সাবেক কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম (প্রয়াত) ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। তবে এ কমিটিকে চ্যালেঞ্জ পাল্টা বা বিদ্রোহী কমিটি হয়। শহর বিএনপির বিদ্রোহী কমিটির সভাপতি করা হয় নূরুল ইসলাম সরদারকে আর সেক্রেটারী হন এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। এই কমিটি সাবেক সাংসদ এডভোকেট আবুল কালামের ছায়াতলে ছিলো।
২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র থেকে মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি করা হয় এডভোকেট আবুল কালামকে আর সেক্রেটারী হন এটিএম কামাল। এ কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এক সময় আবুল কালামের অনুগত থাকলেও এখন তিনি আলাদা বলয় তৈরী করেছেন। সূত্র মতে, সাখাওয়াত নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ার পর থেকে দ্বন্দ্ব শুরু হয় কালামের সাথে। আবুল কালাম এ আসনে বিএনপির তিনবারের সাংসদ। তাদের মধ্যে এ নিয়ে দূরত্ব হওয়ায় সাখাওয়াত আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচী পালন করেন।
এয়াড়াও নারায়ণগঞ্জে বিএনপির আরও কয়েকটি উপ দল রয়েছে। রূপগঞ্জ , আড়াইহাজার, সোনারগাঁয়ের কতিপয় নেতা জেলা নেতাদের তেমন মূল্যায়ন না করে কেন্দ্রে ছুটে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কারও কারও সাথে কেন্দ্রীয় কতিপয় প্রভাবশালী নেতার সাথে সখ্য থাকায় তারা স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের পাত্তা দিতে চান না। এসব কারনেই বিএনপি চেষ্টা করেও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বলে মনে খোদ দলীয় নেতাকর্মীরাই। জেলা ও মহাগর বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব বিষয় নিয়ে তারাও ক্ষুব্দ তবে দলের স্বার্থে তারা চুপ করে থাকেন। জেলার একজন নেতা জানান, এমন অনেকে আছে যারা এখানে দলীয় কর্মসূচীতে থাকে না কিন্তু কেন্দ্রে গিয়ে কোন বড় নেতাকে খুশী রাখেন। পরে ওই কেন্দ্রীয় নেতার আশীর্বাদে জেলা-থানায় পদও পেয়ে যান। এভাবে দলকে ক্ষতিগ্রস্থ করা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। একইভাবে অভিযোগ করেন মহানগর বিএনপির একজন নেতাও। তিনি ক্ষুব্দ কন্ঠে বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এ দলের অনেক নেতাকর্মী। এরপরও দলীয় কর্মসূচী কিংবা দলের চেয়ারপার্সনের মুক্তি আন্দোলনে তেমন ভূমিকা চোখে পড়ছে না। তবে ওই নেতার দাবি, সব দলেই কোন্দল রয়েছে হয়তো বিরোধী দল বলে বিএনপির বিষয়টা চোখে পড়ছে।