আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দখল-দূষণে ধ্বংসের পথে শীতলক্ষ্যা

 বিআইডব্লিউটিএর নেই কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ
 দূষণ ও দখলমুক্ত করে পরিবেশবান্ধব নদী চাই- এবি সিদ্দিক

সংবাদচর্চা রির্পোট
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম নদী দূষণ। দখল-দূষণে ধ্বংসের পথে এককালের প্রমত্তা শীতলক্ষ্যা নদী। দূষণের কারণে পানি ব্যবহার তো দূরের কথা কেউ গোসল পর্যন্ত করতে পারেনা এই নদীতে। সেই সাথে কমেছে মাছের সংখ্যা। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরেই এ জেলার অবস্থান তথা নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রাচ্যের ড্যান্ডি খ্যাত বন্দর নগরী নারায়ণগঞ্জ। নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে বিস্তার রয়েছে এই শহরের।

বিআইডব্লিউটিএ কৃর্তপক্ষ শীতলক্ষ্যা নদী রক্ষা নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা বললেও বাস্তবে নেই এর কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। যার ফলে দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীর অস্তিত্ব। এক সময় এ নদীর পানি পান করতো অঞ্চলের সাধারণ মানুষেরা। তবে, মিল কারাখানার বর্জ্যে ফেলার কারণে ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে এ নদীর পানি। দূষণের ফলে এখন যেন তা মৃত প্রায়। শীতলক্ষ্যা নদী দখল ও দূষণমুক্ত করে পূর্ববস্থায় ফিরিয়ে এনে অগ্রাধীকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কঠোর আন্দোলন সংগ্রাম করা উচিৎ বলে মনে করেন জেলার সচেতন মহলের লোকজন।

তাদের মতে, শীতলক্ষ্যা নদীকে ঘিরেই যেমন এ অঞ্চলে ঘড়ে উঠেছে জনবসতি তেমনি এক সময়ে আদমজি, বাওয়ানী, করিম, বাওয়া জুট মিল গড়ে উঠা সহ পাট ব্যবসার ড্যান্ডি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল নারায়ণগঞ্জ। কিন্তু সময়ের আবর্তে দখল আর দূষনের কারণে শীতলক্ষ্যা নদী তার অস্থিত্ব এখন হারাতে বসেছে। দেশের স্থানীয় প্রধান নদী গুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম নদী নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী। তুরাগ নদীর মোহনা থেকে শুরু হয়ে এ নদী মিশেছে মেঘনা এবং বুড়িগঙ্গার সাথে। সেই সূত্রে নদী রক্ষা না করে উল্টো দখল করতে মরিয়া এক শ্রেণীর অসাধু চক্র। এবং দূষণ রোধেও নেই কোন ভূমিকা।

তাদের অভিযোগ, অন্যরকম স্বাদ থাকার কারণে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি এক সময় পান করতো এ অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষেরা। এখন দূষণের কারণে পানি ব্যবহার করার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি পানির দূর্গন্ধে দু’পাড়ে বসবাসকারী নাগরিকদের পক্ষে নদী পারাপার হওয়া দুঃসহ হয়ে পড়েছে প্রায়। শীতলক্ষ্যা নদীর সেই স্বচ্ছ পানির পরিবর্তে এখন কল কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত কালো পানিতে একাকার হয়ে গেছে। এ পানি ব্যবহারের কারনে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু কোন ভূমিকা নেই সংশ্লিষ্টদের।

এলাকাবাসী জানায়, পরিবেশ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। যদি থাকতো তাহলে অনেক আগেই নদী রক্ষায় তারা ভূমিকা নিতো। বেশ কয়েকবার বিআইডব্লিউটিএ কৃর্তপক্ষ বলেছে নদী রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু তাদের এই মনগড়া গল্পের শেষ কোথায়? একটা সময় হাজারো মানুষ এই নদীর পাড়ে এসে বসে থাকতো। কিন্তু এখন দূর্গন্ধের কারণে কেউ নদীর কাছে আসা তো দূরের কথা দূর থেকেও দেখতে আসেনা।

এ বিষয়ে নারায়নগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি সভাপতি এ বি সিদ্দিকের দাবী, শীতলক্ষা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে মিল কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করে শীতলক্ষ্যা নদীর পানিকে দূষণ ও দখলমুক্ত করে পরিবেশবান্ধব নদীতে ফিরিয়ে আনার।

নারায়নগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক গোলজার আলী বলেন, শোনালেন শীতলক্ষ্যা নদী রক্ষায় আমাদের অনেক পরিকল্পনার রয়েছে। দুই পাড় দিয়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে এবং নদীর পানি দূষন মুক্ত করার জন্য শিল্প কল কারকানার বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা হবে। আবারো শীতলক্ষ্যা তার পুরোনো রুপ ফিরে পাবে বলেও জানান তিনি।

একসময়ের প্রমত্ত এই নদীটিকে পুনরায় তার প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এবং দখল ও দূষণ মুক্ত করা হোক। এমনটাই প্রত্যাশা করেন নগরীর সাধারণ মানুষ।