আজ রবিবার, ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জাসদের আসন দখল চায় আ’লীগ, তিনবার জামানত হারিয়েছে জাপা

দখল চায় আ’লীগ

দখল চায় আ’লীগ

বগুড়া প্রতিনিধি:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশের মতো ৩৯ বগুড়া-৪ আসন দখলে থাকা বর্তমান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ, জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মাঠ গোছাতে ব্যস্ত। প্রত্যেক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা তৈরিতে কাজ করছে দলের হাইকমান্ড। ইতোমধ্যেই আসনে তিনজন করে ক্লিন ইমেজধারী ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা নেতাদের বেছে নিয়ে মনোনয়নের খসড়া তালিকা তৈরিতে কাজ করছেন প্রতিটি রাজনৈতিক দল।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের দখলে থাকা এই আসন দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামীলীগ। কৌশলে কচ্চপ গতিতে মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছে বিএনপি। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির তিনবারের মনোনীত প্রার্থী জামানত হারিয়েছে বলে প্রাপ্ততথ্যে জানা গেছে। যেকারণে দলের অস্তিত্ব রক্ষায় নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে নির্বাচনী এলাকায়।

সূত্রমতে, ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসন (কাহালু-নন্দীগ্রাম) এলাকা থেকে আজিজুল হক মোল্লা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৪ সালে মারা গেলে ওই আসনের উপ-নির্বাচনে তার পুত্র ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে মাত্র ১৫ দিনের জন্য ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

কিন্তু গত ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ডাঃ জিয়াউল হক মোল্লা বিএনপির সংস্কারপন্থীদের সাথে যোগ দেওয়ায় গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওই আসনে বিএনপিনেতা ইঞ্জিঃ মোস্তফা আলী মুকুল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাবেক সাংসদ জিয়াউল হক মোল্লা বিএনপির সংস্কারপন্থী হওয়ার পর থেকে অদ্যবদী পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় নেই বলে জানিয়েছে দলীয় নেতাকর্মীরা।

এদিকে, বিএনপি ঘেঁষা এই আসন দখল করে নিয়েছে জাসদ। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভোটযুদ্ধে নামে জাসদ ও জাতীয় পার্টি। সেই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধিন ১৪ দলের শরীক জাসদের দখলে আসে বগুড়া-৪ আসন। লজ্জাজনক ভোটে পরাজিত হন জাতীয় পার্টির প্রাথী হাজী নুরুল আমিন বাচ্চু। আসনটি জাসদের দখলে যাবার পর থেকেই মাঠ ছেড়েছেন বিএনপির সাবেক সাংসদ মোস্তফা আলী মুকুল।

জাসদের আসন দখলের চেষ্টায় মনোনয়ন যুদ্ধে ও ভোটারদের জনপ্রিয়তা কাড়তে মাঠে নেমেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের জেলা সভাপতি আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিন। নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলায় দফায় দফায় সাংগঠনিক কার্যক্রম, পথসভা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হচ্ছেন আওয়ামীলীগের এই মনোনয়ন প্রত্যাশী।

অন্যদিকে, নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের প্রতিশ্রুতিপূরণ ও ব্যাপক উন্নয়ন করায় ১৪ দল থেকে মনোনয়নে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন বলে প্রত্যাশা করছেন বর্তমান (জাসদ) সাংসদ রেজাউল করিম তানসেন।

বগুড়া-৪ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের উন্নয়ন তথা শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে দফায় দফায় গনসংযোগ, উঠান বৈঠক, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ছুটে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব অধ্যাপক আহছানুল হক। তবে তার প্রচারণা ব্যতিক্রম হিসেবেই দেখছেন সবাই। তিনি শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন তৃনমূলের জনগণের কাছে তুলে ধরাই প্রধান লক্ষ্য হিসেবে দেখছেন।

আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এড ইউনুছ আলী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ, কাহালু উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র হেলাল উদ্দিন কবিরাজ, তার ছোট ভাই আওয়ামীলীগ নেতা কামাল উদ্দিন কবিরাজ মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

এদিকে, ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে জাসদের প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনের কাছে লজ্জাজনক ভোটে পরাজিত জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী হাজী নুরুল আমীন বাচ্চু জেলায় পার্টির কতিপয় এক নেতার সাথে যোগাযোগ করে আবারো দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তিনি নির্বাচনে তিনবার জামানত হারিয়েছেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী শক্তিশালী না থাকায় দুই উপজেলায় দলটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ঠিক সেই মুহুর্তে দফায় দফায় গণসংযোগ, দলীয় কর্মসূচী ও তৃনমূলে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত

হয়ে উঠেছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও বগুড়া জেলা যুব সংহতির সভাপতি শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুক। দুই উপজেলায় দলের অস্তিত্ব রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন জাপার এই নেতা।

পাশপাশি জাপার কেন্দ্রীয় নেতা সাংবাদিক আব্দুস সালাম বাবু, জাপানেতা হাজী আছির উদ্দিন কবিরাজ, প্রভাষক মাসুদ পারভেজ রানা ও প্রভাষক আমজাদ হোসেন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

অপরদিকে, বিএনপি ঘেষা এই আসন পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কোনঠাসা হয়ে থাকা রাজনৈতিক দল বিএনপি। অনেকটা কৌশল অবলম্বন করছে দলটি। গণসংযোগ, নিয়মিত দলীয় কর্মসূচী ও মাঠ গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন, বগুড়া জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও নন্দীগ্রাম উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাডভোকেট রাফী পান্না। তিনি দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে জনপ্রিয়তা গড়েছেন। জেলা বিএনপির ধর্মীয় সম্পাদক ও জেলা ওলামা দলের দলের সাধারন সম্পাদক মাওলানা ফজলে রাব্বী তোহা কৌশলে মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্ট শাখা জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের সদস্য ও জিয়া ফাউন্ডেশন (লিগ্যাল সেল) কো-অডিনেটর এডভোকেট গোলাম আকতার জাকির নিজেকে বিএনপির যোগ্য প্রার্থী দাবি করেই মাঠ গোছাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এছাড়া গণসংযোগে মাঠে রয়েছেন জামায়াত নেতা ও কাহালু উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা তায়েব আলী এবং নন্দীগ্রাম উপজেলার নুন্দহ মাদ্রাসার সহকারি অধ্যাপক আলহাজ্ব মাওলানা ইদ্রিস আলী।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে জেলা বিএনপি নেতা ও জেলা শ্রমিক দলের উপদেষ্টা আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন, নন্দীগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক গোলাম রব্বানী ও পৌর বিএনপির সভাপতি আহসান বিপ্লব রহিম।
সুত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলো তিনটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব¡ দিচ্ছেন। তৃনমূলে জনপ্রিয়তা, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে গহ্রণযোগ্য। বিতর্কিত নন, এমন প্রার্থীকেই তালিকায় রাখা হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত তরুণদেরই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে।