আজ বৃহস্পতিবার, ৩০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ত্যাগ না টাকা!

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি কবে হবে তা এখনও অজানা নেতাকর্মীদের কাছে। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, দীর্ঘ সময় দল ক্ষমতার বাইরে থাকায় অনেকেই পুলিশি হামলা-মামলা, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। অনেকে আবার সরকারী দলের সাথে আতাত করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন। তাই কমিটি গঠনে এ বিষয়টি প্রাধন্য দিতে হবে।

২০০১ সালে জামায়াতের সাথে জোট বেধে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। সংসদের তাদের আসন দেখে চমকে উঠেছিলো রাজনীতিক বিশ্লেষকরা। কেউ কেউ ভেবেছিলেন এ দলটি আজীবনের জন্য ক্ষমতাবান হয়ে গেলো। তবে হাওয়া ভবন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, সে সময়ের অর্থমন্ত্রী শাহ মো. কিবরিয়ার উপর হামলা, বৃটিশ রাস্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর উপর সিলেটে হামলা সহ নানা ঘটনায় সমালোচিত হয় দলটি। এক পর্যায়ে ২০০৬ সালে ওয়ান ইলেভেন আসে।

এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি হয় বিএনপির। ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে একটানা তিনবার আওয়ামী লীগ রয়েছে। এরমধ্যে দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবরণ, জামিনে মুক্তি, দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার মৃত্যু, ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলায় দলটি চাঙ্গা করতে পারছে না নেতারা। এছাড়া জেলা পর্যায়ে যোগ্য নেতাদের পদে না দিয়ে অর্থের বিনিময়ে কমিটি দেয়ার অভিযোগও রয়েছে কেন্দ্রীয় কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে।

এদিকে চলতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটির বাতিল করা হয়। দলের সহ দফতর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পরবর্তী নতুন কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলার অধীন সব উপজেলা ও পৌর বিএনপির কার্যক্রম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদকদের পরামর্শে পরিচালিত হবে। প্রায় ছয় মাস হলেও এখন পর্যন্ত জেলা বিএনপির কমিটির বিষয়ে কোন ঘোষণা দেয়নি কেন্দ্র। দলীয় সূত্র জানায়, পদ পেতে যার যার ভাবে লবি চালাচ্ছে। কেউ কেন্দ্রীয় কতিপয় নেতার বাড়িতে কিংবা অফিসে গিয়ে ধর্ণা দিচ্ছে কেউ আবার ফন্দি আঁটছে নতুন করে।

বর্তমান সময়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলেন, বর্তমানে রাজনীতি করাটা বেশ কঠিন হয়ে গেছে। একদিকে ক্ষমতাসীনদের নানা ভয়ভীতি অন্যদিকে প্রশাসনের বাধার মুখে থাকতে হচ্ছে। তাই যোগ্যরা পদে না এলে দল টিকিয়ে রাখা কষ্ট হবে। নেতাকর্মীরা বলেন, যারা বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন তাদের কমিটিতে স্থান দেওয়ার আহবান জানান তারা।

এবারের জেলা বিএনপির কমিটিতে পরীক্ষিত নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠিত হবে এমন প্রত্যাশা করছেন দলের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারাও। ক্লিন ইমেজের নেতাকর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়ার দাবি করছেন তারা। কেন্দ্রও তৃণমূল এবং বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের সাথে একমত পোষণ করে এবারের কমিটিকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে ত্যাগীদের সম্পর্কে খোজ-খবর নিচ্ছে বলে জানা যায়।

কেন্দ্রীয় বিএনপির এক নেতা বলেন, শীঘ্রই জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করা হবে। নতুন কমিটি মানেই নেতৃত্বের কিছু পরিবর্তন আসবে, নতুন মুখ আসবে। পারফরমেন্সের ভিত্তিতে এবার কমিটি সাজানো হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘দলের এ দুঃসময়ে যারা বিএনপির সংগ্রাম-আন্দোলনে মাঠে থাকে সেসব লোকেরাই আসবে, এদের মধ্যে নতুন মুখও আসবে। যারা বয়সে অপেক্ষাকৃত কম, কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসেনি বা একেবারেই কোন পদেই আসেনি এমন অনেকেই আসতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে।

তবে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা আশংকা করছেন, মুখে যাই বলুক পদ দেয়ার সাম্প্রতিক রীতি নীতি ছাড়তে পারবে না কেন্দ্রের কতিপয় নেতা। তারা টাকার বিনিময়ে ক্ষেতের বদলী শ্রমিককে বড় পদ দিয়ে দিবে। আবার শিল্পপতিদের পরামর্শে স্থানীয় কোন শিল্পপতি কিংবা তাদের অনুসারীকে পদ দিতে পারে। তবে কেউ কেউ উল্টো মতও প্রকাশ করেছেন। দলের স্বার্থে কেন্দ্র এবার ত্যাগী নেতাদেরই মূল্যায়ন করবে বলে বিশ্বাস তাদের।