আজ রবিবার, ২৪শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

তখন কেন নিরব ছিলেন শামীম ওসমান

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
জেলা পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে নগরীর চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু সহ মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেফাতার হলেও নারায়ণঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান কখনোই এদের বিষয়ে মুখ খুলেনি। গ্রেফতারকৃতরা অধিকাংশই তার বলয়ের লোক হিসেবে পরিচিত। তাই এ বিষয়ে নিরব থেকে গেছেন। তবে সম্প্রতি নিজের এলাকায় চাঁদাবাজি নিয়ে সংসদের গরম বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি।

সূত্র মতে, গত ২০ জানুয়ারী ফতুল্লার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মীরুকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের একটি টিম। সন্ত্রাসী মীরু ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অতি সম্প্রতি ফতুল্লার বেশ কয়েকটি এলাকার ডিশ ব্যবসার নিয়ন্ত্রন নেবার অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা পঙ্গত্ববরণ করা মীরু হুইল চেয়ারে বসেই ফতুল্লার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন বলে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়।

অপর দিকে নারায়ণগঞ্জের পাগলায় প্যারাগন মাল্টিপরপাস প্রতিষ্ঠানের চেয়রম্যান ও কর্মকর্তাদের মারধরের অভিযোগ উঠে ব্যবসায়ী বহুমুখি সমিতির সভাপতি শাহ আলম টেনু গাজীর বিরুদ্ধে। এর পাশাপাশি অর্থ আত্মসৎ ও চাঁদাবাজিরও অভিযোগ রয়েছে এই টেনু গাজীর বিরুদ্ধে। গত ৭ ফেব্রুয়ারী প্যারাগন মাল্টিপরপাস প্রতিষ্ঠানের চেয়রম্যান মো. শাহজাহান ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ টেনু গাজীকে আটক করে।

ফতুল্লার আরেক শীর্ষ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন চন্নুকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। গত ২০ এপ্রিল রাতে ফতুল্লার লামাপাড়ার নয়ামাটি এলাকার নিজ বাসার সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়। সেই সময় তাকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের উপর হামলা চালানোর ঘটনাও ঘটে বলে একটি সূত্রে জানা যায়। শীর্ষ সন্ত্রাসী চন্নুর বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় ১০টির অধিক মামলা রয়েছে বলে ফতুল্লা থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়।

সন্ত্রাসী মীর হোসেন মীরু, শাহ আলম টেনু গাজী ও মোফজ্জল হোসেন তারা সবাই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বলয়ের নেতাকর্মী। তবে এসকল কথিত নেতারা বিগত সময় নারায়ণগঞ্জের অপরাধ জগতের পৃষ্টপোষক হিসেবে চিহ্নিত। সকল সন্ত্রাসী ফতুল্লা থানা এলাকা সহ নগরীর বিভিন্ন এলাকাগুলোতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, ভূমিদস্যুতা, মাদক ব্যবসা সহ অসংখ্য অপকর্মের হোতা।

এদিকে গত ( ৭ জুলাই) জাতীয় সংসদ ভবনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের চাঁদাবাজদের উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের হাত কতটা বড়? তাদের হাত কতটা বড়? প্রতিদিন শ্রমিকের নামে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়। এসব চাঁদাবাজদের কোনো দল নেই। এদের ক্ষমতার উৎস কোথায়? এলাকার সাংসদ হিসেবে আমি কিছুই করতে পারছি না। সে জন্য আমি লজ্জিত। এভাবে জাতীয় সংসদে নিজের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন সাংসদ শামীম ওসমান। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা রাস্তা দখল করে চাঁদাবাজি করছে। এতে করে সরকার প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এলাকার সাংসদ হিসেবে তিনি কোনো ভূমিকা রাখত পারছেন না!

শামীম ওসমানের বক্তব্যের জেরে নগর জুড়ে তৈরী হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যেখানে তার অনুগত হিসেবে পরিচিত একাধিক সন্ত্রাসী নানা অপকর্মে গ্রেফতার হয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তখন এই বিষয়ে কোন রা করেননি শামীম ওসমান। আর এখন তিনি সংসদে দাড়িয়ে তার এলাকায় চাঁদাবাজ আছে বলে বক্তব্য দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে নানা মন্তব্য এসেছে। কেউ বলেছেন কার ঘাড়ে ক’টা মাথা যে শামীম ওসমানের এলাকায় চাঁদাবাজি করবে?